Advertisement
Back to
Lok Sabha Election 2024

বারাণসী ‘মোদীময়’, লক্ষ্য ‘দশ লাখ পার’

কোনও হোর্ডিংয়ে তিনি গলায় লাল অঙ্গবস্ত্র ঝুলিয়ে কাশীর বিশ্বনাথ করিডরের সামনে দাঁড়িয়ে। তাতে লেখা, ‘হমার কাশী, হমার মোদী’। কোথাও হাতে গঙ্গাজলের ঘটের পাশে ‘ফির এক বার, মোদী সরকার।’

নরেন্দ্র মোদীর ছবিতে ভরা গোধুলিয়ার মোড়। বারাণসীতে।

নরেন্দ্র মোদীর ছবিতে ভরা গোধুলিয়ার মোড়। বারাণসীতে। —নিজস্ব চিত্র।

প্রেমাংশু চৌধুরী
বারাণসী শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০২৪ ০৮:১৩
Share: Save:

‘রাজতিলক কি করো তৈয়ারি, ফির সে আ রহে হ্যায় ত্রিশূলধারী’।

গদৌলিয়া চওক ওরফে গোধূলিয়ার মোড়ে লম্বা ব্যানার ঝুলছে। কপালে চন্দন লেপা নরেন্দ্র মোদীর ছবি। হাতে ত্রিশূল। এই একখানা নয়। গোধূলিয়া মোড়ের ঠিক মাঝখানে পাথরের স্তম্ভের উপরে নন্দী-মূর্তি। সেখানে দাঁড়িয়ে যে দিকে তাকাবেন, সে দিকেই শুধু নরেন্দ্র মোদী।

কোনও হোর্ডিংয়ে তিনি গলায় লাল অঙ্গবস্ত্র ঝুলিয়ে কাশীর বিশ্বনাথ করিডরের সামনে দাঁড়িয়ে। তাতে লেখা, ‘হমার কাশী, হমার মোদী’। কোথাও হাতে গঙ্গাজলের ঘটের পাশে ‘ফির এক বার, মোদী সরকার।’ কোথাও তিনি ‘কাশী কা বেটা’ রূপে হাতজোড় করে নমস্কার। ত্রিশূল হাতে ছবির সঙ্গে ‘ত্রিশূলধারী’-র ফের ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তনের ভবিষ্যৎবাণী। ‘রাজতিলক’-এর প্রস্তুতির ডাক। বারাণসীর গোধূলিয়া মোড়ে নন্দী-মূর্তি চোখে পড়লে আগে লোকে বুঝে যেত, কাশী বিশ্বনাথ মন্দির আর দূরে নয়। এখন গোধূলিয়া মোড়ে পৌঁছলে বোঝা যায়, এটাই নরেন্দ্র মোদীর লোকসভা কেন্দ্র—বারাণসী।

শুধু গোধূলিয়া কেন! বারাণসী স্টেশন থেকে যে দিকে যাবেন, চার দিকে শুধুই এক জনের ছবি। দশাশ্বমেধ ঘাটের দিকে হাঁটতে থাকলে বেনারসী শাড়ি, লখনউয়ের চিকন বা রুদ্রাক্ষের মালার দোকানের শো-কেসে ব্যবসায়ীরা লিখে রেখেছেন, তাঁরা ‘মোদী কা পরিবার’। জঙ্গমওয়াড়ি মঠের মতো বিভিন্ন মঠ, ধর্মশালার সামনেও নরেন্দ্র মোদীর ছবি। তাঁর কাজকর্মের ইতিবৃত্ত। গোধূলিয়ার মোড় যিনি নরেন্দ্র মোদীর ছবিতে মুড়ে দিয়েছেন, সেই দক্ষিণ বারাণসীর বিধায়ক নীলকণ্ঠ তিওয়ারি সগর্বে বলছেন, ‘‘বারাণসীর মানুষ এ বার হমার কাশী, ‘হমার মোদী’ বলে স্লোগান তুলেছেন। বারাণসী যেমন নরেন্দ্র মোদীকে আপন বলে ভাবেন, প্রধানমন্ত্রীও বারাণসীকে ঠিক তেমনই আপন ভাবেন।”

এর পরেও আপনি যদি দশাশ্বমেধ ঘাটে বসে কাউকে বারাণসী লোকসভা কেন্দ্রে ভোটের হালচাল জিজ্ঞাসা করেন, তিনি আপনাকে নেহাতই মূর্খ বা নাবালক ভাববেন! না হলে ভাববেন, রসিকতা করছেন! আর বিজেপির বিধায়ক নীলকণ্ঠ বলবেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদী যে জিতবেন, এতে কোনও সন্দেহ নেই। কাশীর মানুষ এ বার সঙ্কল্প করেছেন, গোটা দেশের ৫৪৩ জন সাংসদের মধ্যে বারাণসী থেকে নরেন্দ্র মোদীকে সবথেকে বেশি ব্যবধানে জেতানো হবে। বারাণসী তো শুধু সাংসদ নির্বাচিত করে না। দেশের প্রধানমন্ত্রীকে নির্বাচিত করে।’’

আগামী ১ জুন লোকসভা নির্বাচনের শেষ ও সপ্তম দফার ভোটে বারাণসীতে ভোটগ্রহণ। ২০১৪ ও ২০১৯-এর পরে নরেন্দ্র মোদী তৃতীয় বার বারাণসী থেকে প্রার্থী। ২০১৪-য় তার জয়ের ব্যবধান ছিল প্রায় ৩ লক্ষ ৭০ হাজার। ২০১৯-এ তা বেড়ে হয় প্রায় ৪ লক্ষ ৭৯ হাজার। বারাণসী থেকে এর আগে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী চন্দ্রশেখরও জিতে সংসদে গিয়েছেন। ২০০৪-এর লোকসভা ভোট বাদ দিলে ১৯৯১ থেকে বিজেপি লাগাতার বারাণসীতে জিতছে। কিন্তু এত ব্যবধানে কেউ জেতেননি।

নরেন্দ্র মোদী গোটা দেশে প্রচারে গিয়ে বলছেন, ‘অব কি বার, চারশো পার’। আর বারাণসীতে বিজেপির মন্ত্র, ‘অব কি বার, দশ লাখ পার’। গত ভোটে মোদী প্রায় পৌনে সাত লক্ষ ভোট পেয়েছিলেন। এ বার বারাণসীর প্রায় সাড়ে ১৯ লক্ষ ভোটারের মধ্যে বিজেপির লক্ষ্য ১০ লক্ষের বেশি ভোট ঝুলিতে পোরা। আর জয়ের ব্যবধানের লক্ষ্য? সাত লক্ষ।

লক্ষ্য পূরণের চেষ্টায় খামতি নেই। গোটা দেশ থেকে বিজেপির ৫০ জন নেতা বারাণসীতে এসে কাজ করছেন। বারাণসীতে বাঙালি, দক্ষিণ ভারতীয় ভোটারদের সংখ্যা যথেষ্ট। তাঁদের কাছে পৌঁছতে আলাদা লক্ষ্য নেওয়া হচ্ছে। বিজেপির ‘পান্নাপ্রমুখ’-দের প্রতিটি বুথে ৩৭০টি করে ভোট বাড়ানোর লক্ষ্য দেওয়া হয়েছে। মোদী বারাণসীর ভোটারদের চিঠি লিখে বলেছেন, বারাণসীর মানুষের ভালবাসায় তিনিও বারাণসীর মানুষ হয়ে উঠেছেন। শুধুই সাংসদ নন। তিনি নিজেকে এখন ‘কাশী কা বেটা’ বলে ভাবেন। ঘরে ঘরে সেই চিঠি পৌঁছে দিয়ে বিজেপি প্রচারে বলছে, গত দশ বছরে মোদী বারাণসীতে ‘উন্নয়নের গঙ্গা’ বইয়ে দিয়েছেন। কাশী বিশ্বনাথ করিডর থেকে নতুন রাস্তা, সেতু হয়েছে। নতুন ক্রিকেট
স্টেডিয়াম তৈরি হচ্ছে। ক্যানসার হাসপাতাল থেকে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ফ্যাশন টেকনোলজির শিলান্যাস হয়েছে। সবই বাবা বিশ্বনাথের ইচ্ছায়। এখনও অনেক কাজ বাকি।

নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে কংগ্রেস তথা ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চের প্রার্থী অজয় কুমার রাই এ সব ‘ভাঁওতা’ বলে উড়িয়ে দিচ্ছেন। তাঁর কটাক্ষ, ‘‘বারাণসীর মানুষ মূল্যবৃদ্ধির জ্বালায় জেরবার। যাবতীয় উন্নয়নের সুফল পাচ্ছেন গুজরাতের ব্যবসায়ীরা। বারাণসীতে দশ বছরে নতুন কারখানা হয়নি। উন্নয়নের গঙ্গায় ক্ষোভের চোরাস্রোত বইছে। বিজেপি হারের ভয় পাচ্ছে। তাই মোদীজি বারাণসীতে রাত কাটাচ্ছেন।’’

অজয় গত তিনটি লোকসভা নির্বাচনে বারাণসীতে লড়েছেন। তিন বারই তিনি তৃতীয় হয়েছেন। এ বার তাঁর হয়ে প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরা ও ডিম্পল যাদব রোড-শো করেছেন। মঙ্গলবার রাহুল গান্ধী, অখিলেশ যাদব জনসভা করতে আসছেন। কংগ্রেস, সমাজবাদী পার্টির নেতাদের মতে, মোদীকে হারানো অসম্ভব। তবে কংগ্রেস, সমাজবাদী পার্টির ভোট যোগ হলে জয়ের ব্যবধান কমানো যেতে পারে।

সমাজবাদী পার্টির নেতা মনোজ রায় ধূপচণ্ডী মনে করিয়ে দিচ্ছেন, গত লোকসভা ভোটে নরেন্দ্র মোদী শুধু মনোনয়ন জমা দিতে বারাণসী গিয়েছিলেন। এ বার গত দু’সপ্তাহে নরেন্দ্র মোদী দু’বার বারাণসীতে এসেছেন। তার আগে ফেব্রুয়ারি, মার্চেও মোদী বারাণসী সফর করেছেন। মনোজ বলেন, ‘‘শুনছি, বারাণসীর ভোটের আগে মোদী এখানেই ঘাঁটি গাড়বেন। সাংগঠনিক বৈঠকও করবেন।’’

করতেই হবে। লোকসভায় ‘চারশো পার’-এর মতো যদি বারাণসীতে ‘দশ লাখ পার’-এর লক্ষ্য পূরণ না হয়, তা হলে বিজেপির মুখ পুড়বে যে!

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy