এনডিএ-র বৈঠকে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে জোটসঙ্গী চন্দ্রবাবু নায়ডু, নীতীশ কুমার। ছবি: পিটিআই।
শরিকি সম্পর্কে ভবিষ্যতে যে ঝড় উঠবে এনডিএ-র অন্দরে, তার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে গোড়াতেই।
নরেন্দ্র মোদীর তৃতীয় বার প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেওয়ার আগেই মন্ত্রক বণ্টন নিয়ে জটিলতা শুরু হয়ে গিয়েছে। আগামী দিনে সরকার গঠনের পরে বিভিন্ন যোজনা রূপায়ণের প্রশ্নে বিজেপির সঙ্গে শরিকি বিবাদ যে বাধবে, তার ইঙ্গিত পাওয়া গেল আজ। জোট ভাল করে দানা বাঁধার আগেই বিতর্কিত অগ্নিবীর প্রকল্প খতিয়ে দেখার দাবি তুলল এনডিএ-র অন্যতম শরিক দল জেডিইউ। বিরোধীদের মতে, অগ্নিবীর থেকে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি কিংবা জাতভিত্তিক সমীক্ষাকে কেন্দ্র করে আগামী দিনে বিজেপির সঙ্গে শরিকদের বিবাদ অবশ্যম্ভাবী।
দীর্ঘ সময় ধরে গ্রামীণ যুবকদের চাকরির বড় উৎস হল সেনা। দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় আসার পরে সেনায় পাকা চাকরির পরিবর্তে অগ্নিবীর প্রকল্প চালু করে মোদী সরকার। এই প্রকল্পে চাকরির মেয়াদ মাত্র চার বছর। সেনায় পাকা চাকরির সুযোগ চলে যাওয়ায় রাজস্থান, হিমাচলপ্রদেশ, বিহার, উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্যগুলির গ্রামীণ এলাকায় যুব সমাজের মধ্যে প্রবল ক্ষোভ দেখা যায়। নির্বাচনী প্রচারে ইন্ডিয়া জোটের নেতারা ক্ষমতায় এলে ওই প্রকল্প বাতিল করে পূর্বাবস্থা ফেরানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। প্রাক্তন সেনাদের একটি বড় অংশও ওই প্রকল্প বাতিলের পক্ষে।
নতুন সরকার এখনও শপথ নেয়নি। তার আগেই আজ জেডিইউ নেতা কে সি ত্যাগী অগ্নিবীর প্রকল্প নিয়ে বিহারের যুবকদের অসন্তোষের বিষয়টি -রাজনাথ সিংহদের স্পষ্ট করে দিয়েছেন। আজ ত্যাগী বলেন, ‘‘ভোটারদের একাংশ অগ্নিবীর প্রকল্প নিয়ে অসন্তুষ্ট। ওই প্রকল্পে যে খামতিগুলি রয়েছে, সেগুলি আগামী দিনে আলোচনা করে দূর করাই আমাদের লক্ষ্য।’’ আর এক শরিক এলজেপির চিরাগ পাসোয়ানও চান, অগ্নিবীর নিয়ে যে বিতর্ক রয়েছে, তা দূর হোক। অথচ, গোড়া থেকেই বিজেপি দাবি করে এসেছে, অগ্নিবীর প্রকল্প বাতিল করার কোনও প্রশ্ন নেই। সেনায় তরুণদের সুযোগ দিতেই ওই প্রকল্প আনা হয়েছে। ফলে আগামী দিনে জেডিইউ, এলজেপি-সহ অন্য শরিক দলগুলি যদি ওই প্রকল্প বাতিলের দাবি তোলে, সে ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি হবে এনডিএ-তে।
শুধু অগ্নিবীর নয়, বিহারের ধাঁচে গোটা দেশে জাতগণনার দাবি তুলেছে জেডিইউ। কে সি ত্যাগী বলেন, ‘‘জাতপাতের ভিত্তিতে দেশে জনগণনা চাইছেন প্রত্যেকেই। বিহার ইতিমধ্যেই তা করে পথ দেখিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও এ নিয়ে আপত্তি করেননি।’’ ত্যাগী ওই দাবি করলেও নীতিগত ভাবে ওই সমীক্ষা করানোয় ঘোর আপত্তি রয়েছে বিজেপির। অনেকের মতে, এই মুহূর্তে দেশে ওবিসিদের সংখ্যা দেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি। এখন জনগণনা হলে সেই তথ্য সরকারি ভাবে সামনে চলে আসবে। ফলে দাবি উঠবে সংরক্ষণের যে পঞ্চাশ শতাংশ সীমা রয়েছে, তা বাড়ানোর। তা হলে বিজেপির উচ্চবর্ণের ভোটব্যাঙ্কে ধাক্কা লাগার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে। শুধু বিরোধীরাই নয়, জেডিইউয়ের মতো একাধিক শরিক দলও জাতভিত্তিক গণনার পক্ষে। ফলে এ নিয়ে আগামী দিনে মোদী সরকারের উপরে চাপ বাড়ার ইঙ্গিত স্পষ্ট। আরেক শরিক চন্দ্রবাবু নায়ডু ভোটের আগে তাঁর রাজ্যে মুসলিমদের চার শতাংশ সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। মুসলিম ভোটব্যাঙ্ক অটুট রাখতে সেই প্রতিশ্রুতি পালনে নায়ডু উদ্যোগী হলে ওই নীতি অন্ধ্রে সরকারের শরিক বিজেপির পক্ষে মেনে নেওয়া কঠিন হবে। ফলে সংরক্ষণ প্রশ্নে চাপের মুখে পড়তে চলেছে বিজেপি।
তৃতীয় বার ক্ষমতায় এসে দেশ জুড়ে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে গেরুয়া শিবির। যা নিয়ে তীব্র আপত্তি রয়েছে মুসলিম সমাজের। নীতিগত ভাবে জেডিইউ নেতৃত্বের ওই বিধি প্রণয়নে আপত্তি নেই। কিন্তু সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সর্বসম্মতিতে ওই নীতি যাতে আনা হয়, তার জন্য গোড়াতেই মোদী সরকারকে সতর্ক করে দিয়েছেন জেডিইউ নেতৃত্ব। অন্য দিকে মুসলিমদের সমর্থন পাওয়া নায়ডুর পক্ষে দেওয়ানি বিধি কতটা সমর্থন করা সম্ভব, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। ফলে জটিলতার আরেকটি ক্ষেত্র প্রস্তুত রয়েছে বলেই মনে করছেন বিরোধীরা। যদিও বিজেপির এক নেতার কথায়, ‘‘সরকারের হাতে পাঁচ বছর সময় রয়েছে। বিতর্কিত বিষয়গুলি নিয়ে ধাপে ধাপে এগোতে সমস্যা নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy