ভোটের প্রচারে সুজন চক্রবর্তী। —নিজস্ব চিত্র।
রাস্তার ধারের দেওয়ালে, গাছে ঝোলানো লাল রঙের ছোট ব্যানার। তাতে লেখা, ‘ভরসা রাখুন, বদলে যাবে।’ ঠিক নীচেই সিপিএম প্রার্থীর ছবির পাশে লেখা, ‘দমদমে সুজন’।
শুধু রাস্তাঘাট নয়, সমাজমাধ্যমেও একই ভাবে প্রচার করছে সিপিএম। আর দু’দিন পরেই ভোট-যুদ্ধ। তার আগে ৭৯ দিনের প্রচারে দমদম লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রের অলিগলি থেকে রাজপথে ঘুরে সিপিএম প্রার্থী সুজন চক্রবর্তী বার্তা দিয়েছেন, ‘‘কাজের মাধ্যমেই আমি দমদমের মানুষের কাছে ‘সুজন’ হয়ে থাকতে চাই।’’ সেই লক্ষ্যে প্রতিটি বিধানসভা কেন্দ্র ধরে ধরে সেখানে কী কী প্রকল্প সাংসদ তহবিলের মাধ্যমে করা যায়, সে ব্যাপারে প্রচারকে হাতিয়ার করে যুদ্ধে নেমেছেন সিপিএম প্রার্থী।
যদিও বিরোধীদের কটাক্ষ, ‘‘যাদবপুর থেকে উঠে এসে এখন এই সব বললে কেউ বিশ্বাস করবেন না। এত বছর রাজ্যে ক্ষমতায় থেকে সিপিএম কী করেছে, সেটা সকলেই জানেন।’’ আবার দমদমে সিপিএম-বিজেপি ‘আঁতাত’-এর অভিযোগ তুলেছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে, এ সমস্ত বিষয়কে আমল দিতে রাজি নন দমদমের সিপিএম নেতৃত্ব। উল্টে তাঁরা বলছেন, ‘‘স্থানীয় বিষয় নিয়েই লড়াইয়ে বাজিমাত করতে আমরা প্রস্তুত।’’ আর প্রতিটি প্রচারে দেশের সংবিধান হাতে নিয়ে সুজন বলছেন, ‘‘বিজেপি সংবিধানকে খুবলে খেয়েছে। আর তৃণমূল এ সবের ধার ধারে না। নাগরিক স্বার্থ রক্ষাই আমার মূল লক্ষ্য।’’
ভোটের দিন ঘোষণার পর থেকেই দমদম জুড়ে প্রচার সারছেন সিপিএমের সুজন। রাজনৈতিক শিবিরের মতে, দমদমে লড়াই মূলত জোড়া ফুল বনাম কাস্তে-হাতুড়ি-তারার। ততটা দেখা যাচ্ছে না পদ্ম-প্রার্থীকে। যদিও ভোটের মাঠের অঙ্ক-দৌড়ে কে ঠিক মতো অঙ্ক কষে প্রথমে লাইন ছোঁবেন, তা বোঝা যাবে ৪ জুন। তবে, ভোটকে পাটিগণিতের অঙ্কের হিসাব বলে মানতে নারাজ সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য তথা দমদম লোকসভা কেন্দ্রের ভোট-কান্ডারিদের অন্যতম সায়নদীপ মিত্র। তিনি বলেন, ‘‘পাটিগণিতের অঙ্ক কষলে হবে না। ২০১৬ এবং ২০২১-এ আমাদের ভাঙাচোরা সংগঠন এ বার ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। সঙ্গে রয়েছে সাধারণ মানুষের উদ্দীপনা।’’ কারণ হিসাবে তাঁর দাবি, সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রেই স্থানীয় স্তরের সমস্যাগুলিতে জোর দেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন তাঁরা।
সেই সূত্র ধরেই সুজন প্রার্থী হিসাবে দমদমে আসার পর থেকে এখনও পর্যন্ত আটটি আলাদা ধরনের লিফলেট ছাপিয়ে প্রতিটি এলাকার বাড়িতে বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছেন সিপিএম কর্মীরা। নতুন প্রজন্মের কাছে সহজে পৌঁছতে সেই সমস্ত লিফলেটের নির্যাসকে ধরে ডিজিটাল ব্যানার বানিয়ে সমাজমাধ্যমে পোস্ট করছেন সুজনের ‘আইটি টিম’-এর সদস্যেরা। রীতিমতো চিত্রনাট্য তৈরি করে বানানো হয়েছে ‘রিল’। যদিও এ সব দেখে তৃণমূলের প্রার্থী সৌগত রায়ের সহাস্য মন্তব্য, ‘‘যাদবপুরের ‘হেরো’ সুজন দমদমে এসেছেন। আর বিজেপির শীলভদ্র দত্ত তো দলবদলু। তাই ওঁদের নিয়ে কম বলাই ভাল।’’
কিন্তু সিপিএম নেতারা বলছেন, ‘‘তিন বারের সাংসদ সৌগত এত দিন কী কাজ করেছেন, তা যেমন সকলে জানেন, তেমনই কী কাজ করা যায়, সেটাও মানুষের সামনে তুলে ধরেই লড়ব আমরা।’’ সুজনের প্রতিশ্রুতি, জিতলে তিনি প্রতিটি এলাকার আলাদা চাহিদা অনুযায়ী তৈরি ‘দমদম মাস্টার প্ল্যান’ ধরেই উন্নয়নের কাজ করবেন। কলকাতার মতো ১০০ শতাংশ ভূগর্ভস্থ নিকাশি ব্যবস্থা তৈরিতে সাংসদ তহবিলের অর্থ ব্যবহারের সঙ্গে সরকারি উদ্যোগকে নিশ্চিত করার কথা বলছেন সুজন। আবার, দেশবন্ধু নগর হাসপাতাল, বলরাম হাসপাতাল, তীর্থভারতী হাসপাতাল, উত্তর দমদম পুর হাসপাতাল, কামারহাটি সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজে দালাল-রাজ বন্ধ করে আধুনিকীকরণে জোর দিয়েছেন। সাগর দত্তে উন্নত কার্ডিয়োলজি পরিষেবা চালু করার ও পানিহাটি স্টেট জেনারেল হাসপাতালকে মেডিক্যাল কলেজে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতিও রয়েছে।
ক্রীড়া ও সংস্কৃতি চর্চার জন্য খড়দহ, পানিহাটি, দমদমে স্পোর্টস কমপ্লেক্স এবং প্রেক্ষাগৃহ তৈরি বা সেগুলির আধুনিকীকরণের আশ্বাসও দিচ্ছেন সুজন। জেসপ, বি আই, হিন্দুস্থান হেভি কেমিক্যালস, ইসাব ইন্ডিয়া-র মতো বন্ধ কারখানার জমিতে নতুন শিল্প গড়ে দমদমের ছেলেমেয়েদের কর্মসংস্থান, বরাহনগরে পর্যটন পার্ক, দমদম স্টেশন থেকে নাগেরবাজার উড়ালপুল তৈরির মতো প্রায় ৩০টি এলাকা-ভিত্তিক প্রকল্পের কথা বলছেন সুজন। সেই লক্ষ্যে ভোট-যুদ্ধের দিন দমদমের ১৭৯২টি বুথেই একাধিক এজেন্ট থাকবেন বলে জানাচ্ছেন সায়নদীপ। বলছেন, ‘‘ফাঁকা মাঠে গোল হবে না। দমদমে খেলা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy