Advertisement
Back to
Ghatal Election Results 2024

দেবের ঘাটালে পার্শ্বচরিত্রই রয়ে গেলেন হিরণ, সহজ জয়ে হ্যাটট্রিক করলেন পর্দা ও ভোট-ময়দানের নায়ক

বিকেল ৪টে পর্যন্ত ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রে ১ লক্ষ ২০ হাজারেরও বেশি ভোটে এগিয়ে তৃণমূলের তারকা প্রার্থী দেব (দীপক অধিকারী)। ইঙ্গিত অবশ্য আগেই পেয়ে গিয়েছিলেন তিনি।

দেব (দীপক অধিকারী)।

দেব (দীপক অধিকারী)। —ফাইল চিত্র।

সৌরভ নন্দী
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০২৪ ১৬:৩৫
Share: Save:

‘দেব-ভূমি’ই থাকছে ঘাটাল! অন্তত প্রবণতা তা-ই বলছে। বিকেল ৪টে পর্যন্ত ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রে ১ লক্ষ ২০ হাজারেরও বেশি ভোটে এগিয়ে তৃণমূলের তারকা প্রার্থী দেব (দীপক অধিকারী)। ইঙ্গিত অবশ্য আগেই পেয়ে গিয়েছিলেন তিনি। সম্ভবত সেই কারণেই দুপুর ১টা নাগাদ নিজের হোয়াটস্অ্যাপ স্টেটাসে লিখেছিলেন, ‘‘গ্র্যাটিটিউড।’’ বাংলা তর্জমায় ‘কৃতজ্ঞতা’। সম্ভবত ঘাটালের সাধারণ মানুষ এবং দলের কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশেই সে কথা লিখেছেন দেব।

২০১৪ এবং ২০১৯, পর পর দু’বার ঘাটাল থেকে জিতেছেন দেব। গত বারের ভোটে বিজেপি প্রার্থী ভারতী ঘোষ হেরেছিলেন তাঁর কাছে। এ বার ঘাটালে ‘কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা’র কৌশল নিয়েছিল বিজেপি। দেবের বিরুদ্ধে তারা দলের অভিনেতা-বিধায়ক হিরণ চট্টোপাধ্যায়কে প্রার্থী করেছিল। অভিনয় থেকে রাজনীতি, দুই ক্ষেত্রেই দেব-হিরণের ‘মসৃণ সম্পর্ক’ কারও অজানা নয়। সেটাই কাজে লাগানোর চেষ্টা করে পদ্মশিবির। কিন্তু সেই চেষ্টা যে বিফলে গেল, তা মোটামুটি পরিষ্কার। আপাতত পার্শ্বচরিত্র হয়েই থেকে গেলেন হিরণ।

দেব ও হিরণ দু’জনেরই স্বতন্ত্র ভাবমূর্তি রয়েছে সিনেমার জগতে। দেব ‘অ্যাংরি ইয়ং ম্যান’। একেবারে ‘চ্যালেঞ্জ নিবি না...’ গোছের! আর হিরণ ‘লাভার বয়’। কিন্তু রাজনীতির ময়দানে তাঁদের জায়গা বদল হয়েছে! পর্দার ‘রংবাজ’ দেব এখন বঙ্গ রাজনীতিতে সৌজন্যের মুখ। কঠিন, তির্যক আক্রমণের উত্তরও দেন মুচকি হেসে। অন্য দিকে, ‘ভালবাসা ভালবাসা’ সিনেমার নায়ক হিরণ রাজনীতির ময়দানে বেশ ‘আগ্রাসী’। দুর্নীতি থেকে সন্ত্রাস, প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে তাঁর স্বর সর্বদা চড়া ছিল। লোকসভা ভোটের প্রচারে সেই স্বর এতটাই চড়া ছিল যে, ভোটপ্রচারের শেষ পর্যায়ে এসে দেবকেও বলতে হয়েছে, ‘‘অনেক হয়েছে। সৌজন্যকে লোকে দুর্বলতা ভাবছে!’’ এই তারকার লড়াইয়ে শেষমেশ দেবেই আস্থা রাখলেন ঘাটালের মানুষ। ঘাটালে ৫২ শতাংশেরও বেশি ভোট পেয়েছেন দেব। হিরণ পেয়েছেন ৪০ শতাংশের মতো।

দেশ: ৫৪৩৫৪৩

সংখ্যাগরিষ্ঠতা: ২৭২

  • দল
  • আসন
বিজেপি ২৪০
কংগ্রেস ৯৯
এসপি ৩৭
তৃণমূল ২৯
ডিএমকে ২২
টিডিপি ১৬
জেডিইউ ১২
শিবসেনা(উদ্ধব)
শিবসেনা(শিন্ডে)
এনসিপি(শরদ)
এলজেপি
ওয়াইএসআরসিপি
সিপিআইএম
আরজেডি
আপ
জেএমএম
আইইউএমএল
জেডিএস
জেকেএন
সিপিআই
আরএলডি
জেএনপি
সিপিআইএমএল
ভিসিকে
এজিপি
কেসি(এম)
আরএসপি
এনসিপি(অজিত)
ভিওটিপিপি
জ়েডপিএম
অকালি দল
আরএলটিপি
এসকেএম
এমডিএমকে
এএসপিকেআর
এআইএমআইএম
ইউপিপিএল
আপনা দল
এজেএসইউপি
ভারতএপি
এইচএএম (এস)
নির্দল

যদিও এ বারের ভোটে প্রার্থী হতেই ‘নারাজ’ ছিলেন দেব। নিজেই প্রকাশ্যে সে কথা বলেছিলেন। তৃণমূল সূত্রে খবর, দলীয় অন্তর্দ্বন্দ্বের জেরে অসন্তুষ্ট হয়েই ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দলের সেনাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকের পরেই তিনি মত বদলান। শুধু তা-ই নয়, ভোটপ্রচারের শুরু থেকেই স্বভাবসিদ্ধ গণ্ডির বাইরে গিয়ে হাঁটা শুরু করেছিলেন দেব। কোনও সময় অভিজ্ঞ নেতার মতো দলীয় কর্মী, নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করতে দেখা গিয়েছে, কখনও আবার কোন্দল থামিয়ে হাতে হাত মিলিয়ে পথ চলার বার্তাও দিয়ে‌ছেন। অনেকের মতে, পরিস্থিতি যে আর আগের মতো নেই, তা বুঝতে পেরেই দলের খুঁটিনাটি বিষয়েও ঢুকতে দেখা গিয়েছিল তৃণমূলের তারকা প্রার্থীকে। এ বারের ভোটে দেব ও ঘাটালের প্রাক্তন বিধায়ক শঙ্কর দোলইয়ের সম্পর্ক নিয়ে বহু আলোচনা হয়েছিল। সেই ‘দ্বন্দ্ব’ মেটাতে প্রকাশ্য মঞ্চে ‘ভুল স্বীকার’ও করেছিলেন তারকা প্রার্থী। দলনেত্রী অবশ্য আগেই দরাজ শংসাপত্র দিয়েছিলেন তাঁর প্রার্থীকে। প্রচারে এসে মমতাকে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘‘দেব রাজনীতিতে ক্রমশ অভিজ্ঞ হয়ে উঠছে।’’ মঙ্গলবার কার্যত তা-ই প্রতিষ্ঠিত হল!

এ বারও ঘাটালের ভোটে তুরুপের তাস ছিল সেই ‘ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যান।’ সেই ১৯৫৯ সাল থেকে মান সিংহের রিপোর্টের ভিত্তিতে প্রকল্পের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। এর পরেও এই প্রকল্প নিয়ে এত টানাহ্যাঁচড়া দেখে হতবাক ঘাটালবাসীও। এক সময় অবশ্য এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হওয়ার পথে অনেকটাই এগিয়েছিল। প্রকল্পের সলতে পাকিয়েছিল বামেরাই। বাম আমলেই টাকা বরাদ্দের পর ঘটা করে প্রকল্পের উদ্বোধনও হয়েছিল। তবে মাঝপথে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে টাকা বরাদ্দ নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্যের টালবাহানায় আটকে রয়েছে গোটা প্রকল্প। ঘাটালের ওই প্রকল্পই এখন প্রচারের অন্যতম হাতিয়ার ছিল দু’পক্ষের।

ভোটের মুখে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ঘোষণা করেছিলেন, ওই প্রকল্প রাজ্য সরকার একাই কার্যকর করবে। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পরেই লোকসভা ভোটের প্রচারের কেন্দ্রে থেকেছে এই মাস্টারপ্ল্যান। শাসকদল বিভিন্ন সভা, রোড-শোয়ে মাস্টারপ্ল্যানকে প্রচারে টেনে এনেছিল। পিছিয়ে ছিল না বিজেপিও। মাস্টারপ্ল্যানের সুফল পেতে তেড়েফুঁড়ে নেমেছিল তারাও। ভোটে জিতলেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর টাকাতেই মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়িত হবে, এই বলে প্রচার করেছিল বিজেপিও। এর পরেই ঘাটাল জুড়ে যে আলোচনা ঝড় তুলেছে, তা হল— মাস্টারপ্ল্যান কার টাকায়? মোদীর না মমতার? তর্কের গতি বেড়েছে পিংলায় মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া শর্ত নিয়ে। ঘাটাল, মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম লোকসভা আসন জিতলেই ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যান হবে, মুখ্যমন্ত্রীর ওই কথায় প্রাথমিক ভাবে বিতর্কের ঝড় উঠেছিল। পরে অবশ্য অভিষেক আরও এক বার জানিয়ে দেন, মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়িত করবে রাজ্য সরকারই। জেলার এক তৃণমূল নেতার কথায়, ‘‘দেবের জনপ্রিয়তা তো বটেই, এ বারের জয়ের পিছনে একটা বড় কারণ হল ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যান। এ কথা অস্বীকার করলে হবে না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দেব মাস্টারপ্ল্যানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বলেই কিন্তু মানুষ ভোট দিয়েছেন। এটা ভুললে চলবে না।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Dev Hiran Chatterjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy