অরবিন্দর সিংহ লাভলি। ছবি: পিটিআই।
বিজেপি নেতারা নিশ্চয়ই বলছেন, ‘ওহ লাভলি!’
লোকসভা নির্বাচনের প্রচারের মধ্যেই দিল্লির প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির পদ থেকে অরবিন্দর সিংহ লাভলি ইস্তফা দিলেন। দিল্লিতে কংগ্রেস ও আম আদমি পার্টির জোট এবং কংগ্রেসের তরফে কানহাইয়া কুমারের মতো ‘দিল্লিতে অপরিচিত’-দের প্রার্থী করা নিয়ে অসন্তোষ জানিয়ে লাভলি আজ দলের সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গেকে চিঠি পাঠিয়ে পদত্যাগ করেছেন।
কংগ্রেস শিবিরের আশঙ্কা, আগামী দিনে লাভলির নেতৃত্বে দিল্লির বেশ কয়েক জন পুরনো কংগ্রেস নেতা দল ভেঙে বেরিয়ে পৃথক গোষ্ঠী তৈরি করতে পারেন। এর পিছনে বিজেপির হাত রয়েছে বলেও কংগ্রেসের একাংশের ধারণা। কারণ বিজেপি এ বার দিল্লিতে কংগ্রেস, আম আদমি পার্টির আসন সমঝোতা হওয়ায় চিন্তিত। লাভলি এর আগে এক বার কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। পরে আবার কংগ্রেসে ফিরে আসেন। সম্প্রতি লাভলির ঘনিষ্ঠ নেতা রাজকুমার চৌহান কংগ্রেস থেকে পদত্যাগ করেছেন। দিল্লির প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিতের পুত্র সন্দীপ দীক্ষিতও আজ লাভলির পাশে দাঁড়িয়ে বলেছেন, সকলের সঙ্গে আলোচনা করে প্রার্থী ঠিক করলে ভাল হত।
আগামী ২৫ মে দিল্লির সাতটি লোকসভা কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ। আম আদমি পার্টি বা আপ ও কংগ্রেস এ বার জোট করে লড়ছে। আপ লড়ছে চারটি আসনে, কংগ্রেস তিনটিতে। আম আদমি পার্টির সঙ্গে জোট নিয়ে দিল্লির প্রবীণ কংগ্রেস নেতাদের অনেকেরই আপত্তি ছিল। বিশেষত লাভলির মতো যে সব নেতা শীলা দীক্ষিত সরকারের মন্ত্রী ছিলেন। কারণ অরবিন্দ কেজরীওয়ালের নেতৃত্বে আপের উত্থানে তাঁদেরই পায়ের তলার জমি সরে গিয়েছিল। উল্টো দিকে কংগ্রেসের তরুণ নেতারা ইন্ডিয়া জোটের শরিক আপের সঙ্গে আসন সমঝোতা করে বিজেপিকে ঠেকাতে চাইছিলেন। কারণ এখন দিল্লির সাতটি লোকসভা কেন্দ্রই বিজেপির দখলে। লাভলির পদত্যাগের পরে কংগ্রেসের এই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব আজ প্রকাশ্যে চলে এসেছে। কংগ্রেসের প্রাক্তন বিধায়ক আসিফ মহম্মদ খান ও তাঁর অনুগামীদের বিরুদ্ধে লাভলির বাড়িতে চড়াও হয়ে তাঁর সমর্থকদের মারার অভিযোগ উঠেছে। কংগ্রেসের এই অন্তর্দ্বন্দ্বে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন আপ নেতৃত্ব। যদিও দলের নেতা সৌরভ ভরদ্বাজ একে কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
এআইসিসি-তে দিল্লির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক দীপক বাবরিয়ার মতে, ভোটের মধ্যে লাভলির ইস্তফা দুর্ভাগ্যজনক। পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়েছে জানিয়ে বাবরিয়া মেনে নিয়েছেন, এর ফলে কংগ্রেসকে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে। তবে তাঁর দাবি, এই চ্যালেঞ্জের মুখে লোকসভা ভোটে কংগ্রেসের প্রার্থীরা জিতবেন। লাভলি তাঁর চিঠিতে বাবরিয়ার দিকেই আঙুল তুলেছেন। তাঁর অভিযোগ, গত বছর প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির দায়িত্ব পাওয়ার পরে তিনি নতুন করে সংগঠন খাড়া করার চেষ্টা করছিলেন। দিল্লির কংগ্রেস আপের সঙ্গে জোটের বিরোধী ছিল। কারণ আপ তৈরিই হয়েছিল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে বানানো, মিথ্যে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে। এখন আপের অর্ধেক মন্ত্রী দুর্নীতির অভিযোগে জেলে। তা সত্ত্বেও কংগ্রেস হাই কমান্ড আপের সঙ্গে সমঝোতা করে তিনটি আসনে লড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মধ্যে উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে কানহাইয়া কুমার ও উত্তর-পশ্চিম দিল্লিতে উদিত রাজের মতো ‘পুরোপুরি অপরিচিত’-দের প্রার্থী করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন লাভলি। কানহাইয়া প্রার্থী হওয়ার পর থেকে কেজরীওয়াল সরকারের কাজের প্রশংসা করছেন বলেও লাভলি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
লাভলি নিজে উত্তর-পূর্ব দিল্লি আসনে প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে ছিলেন। কংগ্রেস সূত্রের খবর, রাহুল গান্ধীর ঘনিষ্ঠ শিবির কানহাইয়াকে প্রার্থী করতে চাইছে দেখে তিনি নিজেই সরে দাঁড়ান। কংগ্রেস সূত্রের দাবি, কানহাইয়াকে প্রার্থী করার পর থেকেই লাভলি আপের সঙ্গে জোট পণ্ড করে দিতে চাইছিলেন। আজ থেকে কানহাইয়া উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রচার শুরু করেছেন। মউজপুরে তাঁর জন্য ইন্ডিয়া জোটের প্রচার কেন্দ্রের উদ্বোধন হয়েছে। সেখানে রাহুল গান্ধী ও কেজরীওয়ালের পাশাপাশি ছবি। লাভলির ইস্তফা নিয়ে মন্তব্য করতে না চাইলেও কানহাইয়া দাবি করেছেন, তিনি কংগ্রেস ও আপ, দুই দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যেই বিপুল উৎসাহ দেখতে পাচ্ছেন।
বিজেপি একমাত্র উত্তর-পূর্ব দিল্লিতেই বর্তমান সাংসদ মনোজ তিওয়ারিকে ফের টিকিট দিয়েছে। কংগ্রেস-আপ জোটের চ্যালেঞ্জের মুখে বাকি ছ’টি লোকসভা কেন্দ্রেই বিজেপি বর্তমান সাংসদদের টিকিট দেয়নি। এ বার সেই জোট নিয়ে দিল্লির কংগ্রেস প্রধানের ইস্তফায় যারপরনাই খুশি বিজেপির মুখপাত্র শেহজাদ পুণাওয়ালা মন্তব্য করেছেন, “কংগ্রেসের দেশের জন্য কোনও মিশন নেই। শুধু বিভ্রান্তি, স্ববিরোধ ও বিভাজন রয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy