কীর্তি আজাদ এবং ইউসুফ পাঠান। —ফাইল চিত্র ।
দু’জনেই বিশ্বকাপজয়ী ক্রিকেটার। দু’জনেই অলরাউন্ডার। এক জন বিশ্বকাপ জিতেছেন ১৯৮৩ সালে। কপিল দেবের নেতৃত্বে। অন্য জন জিতেছেন দু’-দু’টি বিশ্বকাপ। ২০০৭ সালে টি২০ বিশ্বকাপ এবং ২০১১ সালের বিশ্বকাপ। দু’বারই ক্যাপ্টেন ছিলেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। তবে ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে অন্য এক ‘ক্যাপ্টেন’-এর নেতৃত্বে রাজনীতির ময়দানে নেমে সাফল্য এল কীর্তি আজাদ এবং ইউসুফ পাঠানের। তাঁদের ‘ক্যাপ্টেন’ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘ভাইস ক্যাপ্টেন’ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
রাজনীতির ময়দানে ইউসুফ নবীন। কীর্তি প্রবীণ। রাজনীতির সঙ্গে তাঁর যোগ পুরোনো। তবে তৃণমূলে নতুন। লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস ‘গড়’ হিসাবে পরিচিত বহরমপুরে অধীর চৌধুরীর বিরুদ্ধে ইউসুফকে প্রার্থী করেছিল রাজ্যের শাসকদল। বর্ধমান-দুর্গাপুর আসনে কীর্তি লড়তে নেমেছিলেন বিজেপির দিলীপ ঘোষের বিপক্ষে। দু’জনেই জিতেছেন। দুই বিদায়ী সাংসদকে ‘আউট’ করে ‘ট্রফি’ জিতেছেন বিপুল ভোট পেয়ে।
তবে ইউসুফ বা কীর্তির নির্বাচনী লড়াই সহজ ছিল না। লড়াই ছিল কংগ্রেস এবং বিজেপির দুই দাপুটে নেতার বিরুদ্ধে। অধীর বহরমপুরের পাঁচ বারের সাংসদ। বহরমপুরের রাজনীতিতে অধীরের প্রভাবও সর্বজনবিদিত। তাই তাঁর ‘দুর্গ’ দখল করতে বাংলার শাসকদল তৃণমূল এমন এক জনকে প্রার্থী করেছিল, ঘটনাচক্রে যিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর রাজ্য গুজরাতের বরোদার বাসিন্দা। তবে কঠিন প্রতিপক্ষের সামনে পড়ে দমে যাননি ইউসুফ। ফাইনাল ‘ম্যাচের’ জন্য তাঁর প্রস্তুতি ছিল দেখার মতো। লোকসভার প্রার্থী হিসাবে তৃণমূল তাঁর নাম ঘোষণার পর থেকেই একটানা বহরমপুরে পড়ে থেকেছেন ইউসুফ। অবাঙালি হয়ে বাংলা শেখার চেষ্টা করেছেন। রোদে-গরমে নিয়মিত জনসংযোগ করেছেন সাধারণের সঙ্গে। আর মূল ম্যাচে ছক্কা হাঁকিয়েছেন একদম স্টেপ আউট করে! অধীরের থেকে ৮০ হাজারেরও বেশি ভোটে বহরমপুর থেকে জিতেছেন তিনি।
অন্য দিকে, বিজেপি প্রার্থী দিলীপকে ১,৩৭,৫৬৪ ভোটে হারিয়েছেন কীর্তি। কীর্তি এককালে নিজেও বিজেপিতে ছিলেন। বিজেপির প্রার্থী হয়ে বিহারের দ্বারভাঙা আসন থেকে সংসদে গিয়েছিলেন ২০১৪ সালে। কিন্তু পরবর্তী কালে বিজেপির বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে দল ছেড়ে বেরিয়ে আসেন। যোগ দেন কংগ্রেসে। ২০২১ সালে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে। তৃণমূলে যোগ দেওয়ার সময় শেষ জীবন অবধি তৃণমূলনেত্রী মমতার অধীনেই রাজনীতি করার ‘পণ’ নিয়েছিলেন তিনি। গোয়ায় তৃণমূলের ঘাঁটি শক্ত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। এর পর ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে বর্ধমান-দুর্গাপুর আসনে কীর্তিকে প্রার্থী করেন দলনেত্রী মমতা। তাঁর প্রতিপক্ষ ছিলেন বিজেপির দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা তথা বিদায়ী সাংসদ দিলীপ। আগের নির্বাচনে এই আসন থেকে জিতেছিলেন বিজেপির সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া। তাই হিন্দিভাষী অধ্যুষিত ওই আসনে জয় নিশ্চিত করতে বিহারিবাবু কীর্তিকে প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তৃণমূল।
পাশাপাশি, কীর্তি এবং ইউসুফ— বিশ্বকাপজয়ী দুই ক্রিকেটারের জনপ্রিয়তাকেই কাজে লাগাতে চেয়েছিল তৃণমূল। আর সেখানে থেকেই তাঁদের প্রার্থী করার ভাবনা। তৃণমূলের দুই বিশ্বকাপজয়ী ক্রিকেটারকে প্রার্থী করার ভাবনা যে একদম সঠিক ছিল, তা প্রমাণিত হল ভোটের ফল প্রকাশিত হতেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy