E-Paper

দুয়ারে বিক্ষোভ, অন্দরে খাতির, সামনে সেলিম

সিপিএমের প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র যখন ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে প্রার্থী হয়েছিলেন, নারায়ণগড়ের বুথে বু‌থে তাঁকে ঘিরে বিক্ষোভ করেছিল তৃণমূল কংগ্রেস।

cpm

তৃণমূলের বিক্ষোভের পরে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে খোশ মেজাজে মহম্মদ সেলিম। রানিনগরের নওদাপাড়ায়। — নিজস্ব চিত্র।

সন্দীপন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০২৪ ০৮:১১
Share
Save

বাইরে উত্তাপ। ভিতরে প্রশান্তি! দিনের শুরুতে ধস্তাধস্তি। দিনের শেষে আলিঙ্গন!

ভোটের দিনভর দৌড়ে বেড়িয়ে সব রকম পরিস্থিতিরই মুখোমুখি দাঁড়ালেন মহম্মদ সেলিম। বুথে বুথে ঢুকে ‘ভুয়ো’ এজেন্ট ধরে পুলিশের হাতে তুলে দিলেন। বুথের বাইরে গোলমাল পাকাতে আসা বাহিনীর কারও ঘাড় চেপে ধরলেন! কখনও ধস্তাধস্তিতে জড়ালেন। শাসক দলের বিক্ষোভের সামনে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকলেন। পুলিশের সামনেই বিক্ষোভ থেকে যখন ‘গো ব্যাক’ স্লোগান উঠল, পাড়ার মহিলারা তাঁকে অনুরোধ করে গেলেন, ‘‘আপনি এখান থেকে যাবেন না।’’ তাঁদের আশ্বাস দিতে অপেক্ষাও করে গেলেন সিপিএমের প্রার্থী।

সেলিম শুধু এ বার মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রের এক জন প্রার্থীই নন, সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকও। রাজ্যে লোকসভা ভোটে প্রথম বার কংগ্রেসের সঙ্গে বামেদের আসন সমঝোতা করিয়েছেন, কিছুটা প্রথা ভেঙে নিজে প্রার্থীও হয়েছেন। রাজ্যে তৃতীয় দফার নির্বাচনে যে চার আসনে ভোট হল, তার মধ্যে সেলিম একাই সিপিএম প্রার্থী। নিজের কেন্দ্রে মঙ্গলবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দৌড়ে অন্যায়-অনিয়মের প্রতিবাদের পাশাপাশি ভোটারদের আস্থা জোগানোর যে কাজ করে গেলেন প্রার্থী, সেই ভূমিকা বার্তা দিয়ে গেল তাঁর দলকেও। সিপিএমের রাজ্য থেকে জেলার নেতারা এক বাক্যে মানছেন, সামনে দাঁড়িয়ে নেতৃত্ব দেওয়ার দৃষ্টান্তই প্রতিষ্ঠিত হল মুর্শিদাবাদে। যা থেকে উৎসাহ পেতে পারেন অন্যত্র দলের প্রার্থীরা।

সিপিএমের প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র যখন ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে প্রার্থী হয়েছিলেন, নারায়ণগড়ের বুথে বু‌থে তাঁকে ঘিরে বিক্ষোভ করেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। সেলিমের জন্য মুর্শিদাবাদেও একই কৌশল ছিল। বিরোধী দলনেতা হিসেবে সূর্যকান্তের সঙ্গে সে দিন তা-ও ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী ছিলেন। সেলিম ছিলেন এ দিন কার্যত একা। গাড়িতে সঙ্গী তাঁর ছেলে আতিশ(টিপু নামেই পরিচিত, বাবার ভোটে রণ-কৌশল সাজানোর বড় দায়িত্ব এ বার নিজের কাঁধে নিয়েছেন)। আর পিছনে সংবাদমাধ্যম। আর সব কিছুর পিছনে পুলিশ! যারা মুখ্যত দর্শক। বিক্ষোভ বা ঘটনা ঘটে গেলে তারা ঘটনাস্থলে ঢুকছিল। তবে সেলিম সরাসরি ‘হামলাকারী’দের কলার ধরে নেওয়ার পরে বিক্ষোভের ঝাঁজ ফিকে হতে সময় লাগেনি!

দিনের শুরু মুর্শিদাবাদ বিধানসভা কেন্দ্র থেকে। রানিনগরের গোপীনাথপুরে পৌঁছে সেলিম বুথ থেকে ‘ভুয়ো’ এজেন্ট বার করে দেওয়ার পরেই হইচই শুরু। লোচনপুরে মহিলারা অভিযোগ করছিলেন, শাসক দলের তিন স্থানীয় ‘মস্তান’ কর্মী তাঁদের ভোট দিতে বাধা দিয়েছে, গায়ে হাতও দিয়েছে। সেই কর্মীদেরই জমায়েত বুথের স্বল্প দূরত্বে দেখে তেড়ে গেলেন সেলিম। বেধে গেল ধস্তাধস্তি। শাসক বাহিনীর নেতৃত্বে থাকা হিটলার সরকারের অভিযোগ, তাঁকে মেরে হাত মুচড়ে দিয়েছেন সেলিম! ঘটনার পরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মজিদ খানের কাছে পাল্টা অভিযোগ জানিয়েছেন সিপিএম প্রার্থীও।

তৃণমূল অধ্যুষিত নওদাপাড়ার ভিতরে আরও এক বার সেলিমকে ঘিরে বিক্ষোভ হল। পুলিশ শেষ পর্যন্ত অবশ্য তাদের তাড়া দিয়েছিল। তৃণমূলের ‘জনগর্জনে’র স্টিকার সাঁটানো যে বাড়ির সামনে বিক্ষোভ, সেই বাড়ির মহিলারাই একটু পরে অন্দর মহলে ডেকে নিয়ে গেলেন সিপিএম প্রার্থীকে। জল খাওয়ালেন। সেলিমও তাঁদের বললেন, ‘‘আপনাদের সঙ্গে লড়তে আসিনি। নীতি বদলের, সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই।’’

ইসলামপুর, ডোমকল, করিমপুর, হরিহরপাড়ার নানা মহল্লা, নানা বুথে এর পরে চলেছে সেলিমের সফর। তাঁর হাতেই পাকড়াও হয়েছেন চার জন ‘ভুয়ো’ এজেন্ট। সেলিমের কথায়, ‘‘ভুয়ো ডিগ্রি, ভুয়ো শিক্ষক, ভুয়ো চাকরির পরে এ বারের ভোটে নতুন এল ভুয়ো এজেন্ট!’’ ডোমকলের ব্রিজ মোড়ে তাঁকে বসিয়ে তরমুজ খাইয়েছেন লোকজন, করিমপুরে প্রথম বার ভোট দেওয়া ছাত্রী এগিয়ে এসে ছবি তুলেছেন, হরিহরপাড়ায় তাঁকে ঘিরে ধরে এক দঙ্গলের দাবি শোনা গিয়েছে, ভোটের পরে কী চাই!

দিনের শেষে তৃণমূলের সাংগঠনিক জেলার সভাপতি অপূর্ব সরকার দাবি করেছেন, কোনও গোলমাল ছাড়াই শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে। কিছু অশান্তির চেষ্টা বরং বিরোধীরা করেছিল। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকও তৃণমূলের ‘অনেক নেতা-কর্মীদের’ ধন্যবাদ জানিয়েছেন পঞ্চায়েতের মতো অশান্তির পথে না যাওয়ার জন্য। কিন্তু ওই মারামারিটা? সেলিমের জবাব, ‘‘হিটলারি-রাজ দেখাতে এলে বামপন্থীরা কখনও ছেড়ে কথা বলেনি, বলবেও না!’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Lok Sabha Election 2024 Md Salim CPM

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।