দেওয়াল লিখনে জগন্নাথ সরকার। —ফাইল চিত্র।
রাজ্য জুড়েই দুই ফুলের দ্বৈরথে কাস্তে-হাতুড়ি যেন প্রায় তৃতীয় পক্ষ। কিন্তু নিজে জিততে পারুক আর না-ই পারুক, কৃষ্ণনগর কেন্দ্রে জয়-পরাজয় নির্ধারণে বড় ভূমিকা নিতে
পারে তারা।
তার কারণ গত পঞ্চায়েত ভোটের ফলাফল এবং সংখ্যালঘু ভোটের গতিপ্রকৃতি। পঞ্চায়েত নির্বাচনে মূলত সংখ্যালঘু এলাকাতেই বামেরা ভোট বাড়িয়েছে। সেই প্রবণতার খানিকটাও যদি লোকসভা ভোটে অক্ষুণ্ণ থাকে, তৃণমূল চাপে পড়ে যেতে পারে। এমনিতেই সিপিএম প্রার্থী নদিয়ার অন্যতম সংখ্যালঘু মুখ এস এম সাদি। এর উপর কংগ্রেসের সঙ্গে বামেদের জোট হলে তৃণমূলের খেলা আরও কঠিন হয়ে যেতে পারে। কারণ পঞ্চায়েত ভোটে সংখ্যালঘু এলাকায় ভোট বেড়েছে কংগ্রেসেরও।
ঘুষের বিনিময়ে সংসদে প্রশ্ন তোলার দায়ে বহিষ্কৃত সংসদ মহুয়া মৈত্র কৃষ্ণনগরে ফের প্রার্থী হওয়ায় এই কেন্দ্রের দিকে গোটা দেশের নজর থাকবে। বিজেপি এখনও এই কেন্দ্রে প্রার্থী ঘোষণা করেনি, কিন্তু তারা যে ‘মর্যাদার লড়াই’ জিততে মরিয়া হয়ে ঝাঁপাবে তাতে সন্দেহ নেই। সম্প্রতি রাজ্য সফরে এসে কৃষ্ণনগরে জনসভা করে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বারবার আসছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা। প্রস্তুত সঙ্ঘ পরিবারও। কোনও ‘হেভিওযেট’ প্রার্থীকে এখানে দাঁড় করানোর চেষ্টা চলছে বলে বিজেপি সূত্রের দাবি।
এই পরিস্থিতিতে কৃষ্ণনগর দখলে রাখতে তৃণমূলকে সংখ্যালঘু ভোটের বেশির ভাগটা পেতেই হবে বলে রাজনৈতিক মহলের ধারণা। কৃষ্ণনগরের সংখ্যালঘু ভোট রয়েছে প্রায় ৪৫ থেকে ৪৮ শতাংশ। বেশির ভাগ বিধানসভা কেন্দ্রই সংখ্যালঘু প্রভাবিত। গত লোকসভা ভোটে এঁদের বড়় অংশ তৃণমূলকে ঢেলে ভোট দেওয়ার পরেও মাত্র প্রায় ৬৩ হাজার ভোটে জেতে তৃণমূল। সিপিএম ও কংগ্রেস সে বার বিশেষ প্রভাবই ফেলতে পারেনি। সিপিএম মাত্র নয় শতাংশ এবং কংগ্রেস প্রায় তিন শতাংশ ভোট পেয়েছিল। সেখানে গত পঞ্চায়েত ভোটে সিপিএম প্রায় ২১ শতাংশ ভোট পেয়েছে। কংগ্রেস পেয়েছে প্রায় সাত শতাংশ। কালীগঞ্জ, পলাশিপাড়া, তেহট্ট, চাপড়া ও নাকাশিপাড়ার পাশাপাশি কৃষ্ণনগর দক্ষিণের মতো সংখ্যালঘু প্রভাবিত বিধানসভা কেন্দ্রে বাম ও কংগ্রেস ভোট বাড়িয়েছে। লোকসভা ভোটের সমীকরণ পঞ্চায়েত ভোটর থেকে অনেকটাই আলাদা। তবু এই প্রবণতা বিপজ্জনক বলে মনে করছেন তৃণমূল নেতারাও। কারণ বিজেপি আবার হিন্দু ভোটের অনেকটাই নিজের দিকে সংহত করার মরিয়া
চেষ্টায় রয়েছে। তবে এ-ও লক্ষ করার মতো বিষয় যে পঞ্চায়েত ভোটে বাম-কংগ্রেসের ভোট বাড়লেও তৃণমূলের বিশেষ ক্ষতি হয়নি। বরং গত লোকসভা নির্বাচনের তুলনায় পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজেপির ভোট অনেকটাই কমেছে। তবে বিজেপির নদিয়া উত্তর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অর্জুন বিশ্বাসের ব্যাখ্যা, “পঞ্চায়েত ভোটে আমরা প্রায় এক-তৃতীয়াংশ বুথে প্রার্থীই দিতে পারিনি। সেই এলাকার ভোট তৃণমূলে গিয়েছে। লোকসভা নির্বাচনে তা
হবে না।”
আবার তৃণমূলের কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলা চেয়ারম্যান তথা চাপড়ার বিধায়ক রুকবানুর রহমানের বক্তব্য, “সংখ্যালঘুরা বুঝে গিয়েছেন, বিজেপি কী চরম বিপদ নিয়ে আসতে চাইছে। একমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই তাঁদের রক্ষা করতে পারেন। তাই তাঁরা তৃণমূলের বাইরে আর কিছু ভাবছেন না। পঞ্চায়েত
ও লোকসভা ভোটের মধ্যে অনেক ফারাক।” আর সিপিএম প্রার্থী তথা দলের নদিয়া জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য এস এম সাদির দাবি, “সাম্প্রদায়িক বিজেপি ও দুর্নীতিগ্রস্ত তৃণমূলকে হারাতে আমরা শ্রমিক, কৃষক, মেহনতি মানুষকে সঙ্গে নিয়ে লড়াই করব। দৈনন্দিন অভিজ্ঞতার ভিত্তিতেই মানুষ আমাদের
সঙ্গে থাকবেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy