অধীর চৌধুরী (বাঁ দিকে) এবং মল্লিকার্জুন খড়্গে (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র
অধীর চৌধুরী সম্পর্কে প্রশংসার সুর কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গের গলায়। রাজ্যের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সম্পর্কে খড়্গের মূল্যায়ন, ‘উনি দলের লড়াকু সৈনিক’। অথচ এই খড়্গেই সম্প্রতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধিতা করার প্রশ্নে অধীরের সমালোচনা করেছিলেন। হুঁশিয়ারির সুরে বলেছিলেন, ‘‘হয় হাইকমান্ডের কথা মানতে হবে, তাদের সিদ্ধান্ত অনুসরণ করতে হবে, না হলে বাইরে যেতে হবে।’’
মঙ্গলবার সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে অধীর প্রসঙ্গে খড়্গে বলেন, “আমি কোনও নির্দিষ্ট ব্যক্তির নামে কিছু বলতে চাই না। উনি কংগ্রেসের লড়াকু সৈনিক। পশ্চিমবঙ্গের নেতা।” এই সাক্ষাৎকারেই খড়্গে রাজ্যের বাম-কংগ্রেস জোট নিয়ে মুখ খুলেছেন। দাবি করেছেন, তৃণমূলের কোনও কোনও নেতা বামেদের সঙ্গে কংগ্রেসের জোট চাননি। যদিও বামেদের সঙ্গে জোট বাঁধার সিদ্ধান্ত কংগ্রেস হাইকমান্ডই নিয়েছে, তা-ও স্পষ্ট করে দেন খড়্গে।
বাম-কংগ্রেস জোট নিয়ে খড়্গে বলেন, “তৃণমূলের কেউ কেউ বামেদের সঙ্গে কংগ্রেসের জোট চাননি। তারা বিষয়টি অন্য ভাবে ব্যাখ্যা করছিলেন। কিন্তু কংগ্রেস দল হিসাবে শক্তিশালী। পশ্চিমবঙ্গে বামেদের সঙ্গে জোট বাঁধার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কংগ্রেস হাইকমান্ড। আমরা সেটাকে এগিয়ে নিয়ে যাব।” রাজ্যের শাসকদলের তরফে স্পষ্ট ভাষায় দাবি করা হয়েছিল, রাজ্যে কংগ্রেস-তৃণমূল জোট সম্ভাবনা ভেস্তে যাওয়ার জন্য একমাত্র দায়ী অধীর। মঙ্গলবার খড়্গে জানালেন, বামেদের সঙ্গে কংগ্রেসের জোট নিয়ে যাবতীয় সিদ্ধান্ত নিয়েছিল হাইকমান্ড। বোঝাতে চাইলেন বাংলায় জোট সংক্রান্ত বিষয়ে যাবতীয় সিদ্ধান্ত অধীর নন, নিয়েছিলেন দলের উচ্চতম নেতৃত্ব।
লোকসভা ভোটের প্রচারে গিয়ে গত বুধবার মমতা বলেছিলেন, “ইন্ডিয়াকে নেতৃত্ব দিয়ে, বাইরে থেকে সব রকম সাহায্য করে আমরা সরকার গঠন করে দেব। যাতে বাংলায় আমার মা-বোনেদের ১০০ দিনের কাজে কোনও দিন অসুবিধা না-হয়।’’ মমতার কথার মর্মার্থ ছিল যে, কেন্দ্রে ‘ইন্ডিয়া’ সরকার গঠন করলে তৃণমূল সেই সরকারে যাবে না। তারা বাইরেই থাকবে। বাইরে থেকেই সরকারকে সমর্থন দেবে। তা নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছিল রাজ্য রাজনীতিতে। যদিও ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই বৃহস্পতিবার তমলুকের জনসভা থেকে মমতা ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছিলেন, ‘‘অল ইন্ডিয়া লেভেলে (সর্বভারতীয় স্তরে) আমরা বিরোধী জোট ইন্ডিয়া তৈরি করেছিলাম। আমরা জোটে থাকব। অনেকে আমায় ভুল বুঝেছে। আমি ওই জোটে আছি। আমিই ওই জোট তৈরি করেছি। আমি জোটে থাকবও। এখানকার সিপিএম নেই। এখানকার কংগ্রেস নেই। কিন্তু সর্বভারতীয় স্তরে আমরা জোটে থাকব। ভুল বোঝাবুঝির কোনও জায়গা নেই। ভুল খবর ছড়িয়েছে। এতে বিভ্রান্তি হচ্ছে।’’
মমতার মন্তব্য নিয়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর বলেছিলেন, ‘‘উনি জোট থেকে পালিয়ে গিয়েছেন। ওঁর কোনও কথায় আমি ভরসা করি না। এখন দেখছেন হাওয়া বদলাচ্ছে। তাই এ দিকে ভিড়তে চাইছেন। বিজেপির দিকে পাল্লা ভারী দেখলে ও দিকে যাবেন।’’ সেই প্রসঙ্গে অধীরকে কার্যত তিরস্কার করেছিলেন খড়্গে। তিনি বলেছিলেন, ‘‘অধীর চৌধুরী ঠিক করার কেউ নন। কী হবে তা ঠিক করার জন্য আমরা রয়েছি। কংগ্রেস পার্টি রয়েছে। হাইকমান্ড রয়েছে।’’ নিজের বক্তব্য আরও স্পষ্ট করে দিয়ে খড়্গে বলেন, ‘‘হাইকমান্ড সিদ্ধান্ত নেবে। হয় সেই সিদ্ধান্ত মানতে হবে, না হলে বাইরে চলে যেতে হবে।’’ খড়্গের মন্তব্যের কথা জেনে প্রদেশ কংগ্রেসের অধীর-ঘনিষ্ঠ এক নেতা বলেন, ‘‘একটা লোক কংগ্রেস পার্টিকে বাঁচাতে বাংলায় সব আক্রমণের বিরুদ্ধে লড়ছে। আর কেউ কেউ হাইকমান্ডের নাম করে বাংলা থেকে কংগ্রেসকে তুলে দেওয়ার ইজারা নিয়ে রেখেছেন।’’ স্বয়ং অধীর বলেন, “তিনিও কংগ্রেস হাইকমান্ডেরই লোক।”
তার পরে অবশ্য রাজনৈতিক কুনাট্য কম হয়নি। রবিবার প্রদেশ কংগ্রেসের সদর দফতরে কেউ বা কারা খড়্গের ছবিতে কালি লেপে দেন। বিকেলে আবার দুধ দিয়ে ধোয়া হয় সেই ছবি। চাপে পড়ে কংগ্রেস নেতৃত্ব জানান, এই ঘটনার নেপথ্যে তৃণমূলের হাত রয়েছে। শাসকদল অবশ্য সেই অভিযোগ অস্বীকার করে কটাক্ষ করে হাত শিবিরকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy