গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলে দিয়েছেন, বাংলায় কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের কোনও প্রশ্ন নেই। তৃণমূল ৪২টি আসনে একাই লড়বে। আনন্দবাজার অনলাইনকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও মমতার কথারই প্রতিধ্বনি করেছিলেন। পাশাপাশিই কংগ্রেস সম্পর্কে তিনি বলেছিলেন, ‘‘অতি চালাকের গলায় দড়ি।’’ আপাতদৃষ্টিতে এই পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গে বাম-কংগ্রেস জোট বা আসন সমঝোতা হওয়ার পক্ষে কোনও বাধা থাকার কথা নয়। কিন্তু তা হচ্ছে না।
কেন হচ্ছে না, তার প্রাথমিক হিসাবনিকাশ করতে বসে রাজ্য কংগ্রেসের নেতাদের একাংশ কংগ্রেস হাইকমান্ডের ‘দোদুল্যমানতা’র দিকেই আঙুল তুলছেন। সূত্রের খবর, এআইসিসির সেই দোদুল্যমানতার কারণেই বৃহস্পতিবার বহরমপুরে থাকা সত্ত্বেও সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের সঙ্গে পূর্বঘোষিত বৈঠক ‘এড়িয়ে’ যেতে একপ্রকার বাধ্যই হয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরী। গত বুধবার সাংবাদিক সম্মেলনে সেলিম জানিয়েছিলেন, তিনি মুর্শিদাবাদ যাচ্ছেন। অধীরও জেলায় রয়েছেন। তাই বৈঠক হবে। বাম এবং কংগ্রেসের নেতা-কর্মীরা তাকিয়েছিলেন সে দিকেই। প্রদেশ কংগ্রেসের এক নেতা ফেসবুকে পোস্ট করে সেই বৈঠকের বিষয়ে ঢাকও পিটিয়েছিলেন। কিন্তু সেলিম-অধীর বৈঠক হয়নি।
কংগ্রেস সূত্রে জানা গিয়েছে, একটি নির্দিষ্ট সাংগঠনিক কারণে সেলিমের সঙ্গে অধীর আসন সমঝোতা বা জোট নিয়ে বৈঠক করতে পারেননি। সেটি কী? জানা গিয়েছে, এআইসিসির তরফে পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচন পরিচালনা সংক্রান্ত একটি কমিটি গড়ে দেওয়া হয়েছে। যার মাথায় রাখা হয়েছে অধীরকে। সেই কমিটির বৈঠক এখনও হয়নি। তারা বৈঠক করে বামেদের সঙ্গে যাওয়া বা না-যাওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে হাইকমান্ডকে পাঠাবে। তার পরেই হাইকমান্ড সেই সিদ্ধান্তে সিলমোহর দেবে।
সিপিএম অবশ্য চেয়েছিল, সেলিম-অধীর এক জায়গায় বসে অন্তত চা খেয়ে কথা বলুন। তাতে আসনরফা চূড়ান্ত হত না। কিন্তু জোটের একটা ঔপচারিক ভিতপুজো হয়ে যেত। কিন্তু রাজ্যের কংগ্রেস নেতাদের অনুমান, অধীর সম্ভবত সেই ‘ঝুঁকি’ নিতে চাননি। কারণ, কংগ্রেসের অনেকে এখনও মনে করছেন, তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেত্রী তাঁদের পশ্চিমবঙ্গে ‘একলা চলো’ অবস্থান ঘোষণা করে দিলেও কংগ্রেস হাইকমান্ড এখনও ধৈর্য্য ধরতে চাইছে। দিন কয়েক আগেই ১০০ দিনের কাজে বাংলার শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি মিটিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখেছিলেন রাহুল গান্ধী। সেটিকে তৃণমূলের জন্য রাহুলের ‘বার্তা’ বলেই মনে করছেন রাজ্য কংগ্রেসের নেতাদের একাংশ। সিপিএম শিবিরও বিষয়টিকে ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলেই মনে করছে।
কংগ্রেস সম্পর্কে মমতা ‘আক্রমণাত্মক’ অবস্থান নেওয়ার পরে সিপিএম রাহুলের ‘ন্যায় যাত্রা’য় প্রতিনিধি পাঠিয়েছিল। সেলিম, সুজন চক্রবর্তীরাও গিয়েছিলেন রাহুলের সেই কর্মসূচিতে। আলিমুদ্দিন চেয়েছিল কংগ্রেসকে ‘বার্তা’ দিতে। কিন্তু কংগ্রেস হাইকমান্ড এখনও বামেদের সঙ্গে জোটের ব্যাপারে সবুজ সঙ্কেত দেয়নি। কংগ্রেসের কাঠামো অনুযায়ী সেই বিষয়টিকে অবজ্ঞা করা অধীরের পক্ষেও সম্ভব নয়। বস্তুত, কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব মমতা এবং তৃণমূল সম্পর্কে অবস্থান এখনও ‘নরম’ রেখেছেন। জয়রাম রমেশের মতো নেতা বারংবার বলছেন, ‘‘মমতা আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তিনি ‘ইন্ডিয়া’র সঙ্গী।’’ সেটা অবশ্য মমতা-অভিষেকও বলছেন। তাঁদের বক্তব্য, পশ্চিমবঙ্গে জোট না-হলেও সামগ্রিক ভাবে তৃণমূল ‘ইন্ডিয়া’র সঙ্গেই রয়েছে।
তবে বৃহস্পতিবারের পূর্বঘোষিত বৈঠক ভেস্তে যাওয়ার পর সিপিএমও এখন কিছুটা ‘ধীরে চলো’ নীতি নিয়ে এগোতে চাইছে। সূত্রের খবর, ঘনিষ্ঠমহলে দলের রাজ্য সম্পাদক সেলিম বলেছেন, কংগ্রেস আগে স্পষ্ট করুক ওরা কাদের হাত ধরে ভোটে যাবে। তার পরে আসনসংখ্যা বা নির্দিষ্ট আসন নিয়ে আলোচনা হবে। সিপিএমের এক নেতার কথায়, ‘‘বিয়েটাই ঠিক হল না! এখনই মেনু আর ভেন্যু নিয়ে ভেবে কী হবে?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy