(বাঁ দিকে) অধীর চৌধুরী মল্লিকার্জুন খড়্গে (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
তাঁর ফোন সর্বদা সাইলেন্ট মোডে থাকে। আর দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে কখনও সাধাসাধি করেন না কোনও কিছুর জন্য। প্রবল চাপের এই নির্বাচনে চেনা দুই অভ্যাস বজায় রেখেই আপাতত স্বস্তির শ্বাস নিচ্ছেন অধীর চৌধুরী! কয়েকশো মিটার দূরে দাঁড়িয়ে তাঁকে সমর্থন জানাচ্ছেন মহম্মদ সেলিম। কারণ, বাংলায় কালবৈশাখীর জল মেলার আগেই কংগ্রেসকে স্ব্স্তির বাতাস দিয়ে গিয়েছেন মল্লিকার্জুন খড়্গে!
রাজ্যের অন্যত্র এবং মুর্শিদাবাদ জেলায় এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করে গিয়েছেন, তাঁরা কংগ্রেসের সঙ্গে জোট চেয়েছিলেন। কিন্তু কংগ্রেসের সর্বভারতীয় নেতৃত্ব সঙ্গে থাকলেও এ রাজ্যে অধীরের জন্য জোট হয়নি। অভিষেক এ কথাও বলেছেন, জোট চেয়েছিলেন বলেই দিল্লিতে ভোর ৬টায় রাহুল গান্ধীর বাড়িতে দেখা করতে গিয়েছিলেন! শুধু ‘বিজেপির দালাল’ অধীরের জন্যই সে গুড়ে বালি পড়ে গেল! মালদহে ভোটের প্রচারে এসে এ বার কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি খড়্গে বলে গিয়েছেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদী যে ভাবে কংগ্রেসকে দুর্বল করার চেষ্টা করছেন, সেই একই ভাবে তৃণমূল বাংলায় কংগ্রেসকে ভাঙার চেষ্টা করে যাচ্ছে!’’ বিজেপিকে হারিয়ে দেশে বিকল্প সরকার কংগ্রেসই গড়তে পারে দাবি করে তৃণমূল সমর্থকদের কংগ্রেসকে ভোট দেওয়ার আহ্বানও জানিয়ে গিয়েছেন খড়্গে।
খড়্গে-পর্বের পরে বহরমপুরের দফতরে বসে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি বলছেন, ‘‘এই কথাই তো রাজ্যে বলে এসেছি, দিল্লিতে বলেছি। যা বাস্তব, তা-ই বলেছি। ভুল যে বলিনি, আমাদের সর্বভারতীয় সভাপতিই বুঝিয়ে দিয়েছেন।’’ অধীরের সংযোজন, ‘‘তৃণমূল নেত্রী সব সময় বলেন, এখানে কংগ্রেসকে ভোট দেওয়া মানে বিজেপিকে সমর্থন করা। আমি বাস্তবের উপরে দাঁড়িয়ে বলেছি, তৃণমূলকে ভোট দেওয়া মানে বিজেপিকেই ভোট দেওয়া। সেই বক্তব্য বিকৃত করা হয়েছিল, সেটাও ধরা পড়ে গিয়েছে। আমরা কিন্তু ঠিক পথেই আছি।’’ তবে বহরমপুরে কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতাদের কাউকে আলাদা করে প্রচারে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে না। তাঁরা নিজে থেকে চাইলে আসবেন।
দিল্লিতে গিয়ে চুপচাপ অধীরের সঙ্গে বৈঠক করে বাংলার আসন সমঝোতা নিয়ে কথা সেরে এসেছিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। রাজনৈতিক ভাবে এখন তাঁরা কার্যত হরিহর আত্মা! অধীরের নেতৃত্বেই ২০১৬ ও ২০২১ সালে কংগ্রেসের সঙ্গে রাজ্যে বামেদের সমঝোতা হয়েছিল। তাতে ফাঁক-ফোকর ছিল অনেক। এ বারের সমঝোতা অনেক মসৃণ বলেই দু’পক্ষের দাবি। প্রদেশ সভাপতির কথায়, ‘‘মানুষ ঠেকে শেখে। আমরাও শিখেছি। আগের অভিজ্ঞতা থেকে এ বার শিক্ষা নিয়েছি।’’
অধীর যেমন সেলিমকে জেতানোর আবেদন করেছিলেন, চতুর্থ দফায় বহরমপুরের ভোট মাথায় রেখে সেলিমও অধীরকে জয়ী করার আর্জি জানিয়েছেন। নিজের কেন্দ্রে প্রচার শেষ হওয়ার পরেই সোমবার বহরমপুরে অধীরের সমর্থনে প্রচারে চলে এসেছেন। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকেরও মন্তব্য, ‘‘বাংলার রাজনীতির যে বাস্তবতা, সেটাই খড়্গে বলেছেন। রাজ্যে শুধু আমরাই তণমূলের বিরুদ্ধে বলছি, কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বলছেন না, এই প্রচারের জবাব এ বার মিলে গেল!’’ আবার সেলিমের সুরেই প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির দাবি, ‘‘রাজ্যে এ বার ৭-৮টা লোকসভা আসনে চমকে দেওয়ার মতো ফল হতে পারে!’’
মুর্শিদাবাদ থেকে বেরিয়ে কৃষ্ণনগর ঘুরে সিপিএমের যুব নেত্রী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়ও চলে এসেছেন অধীরের প্রচারে। এর মধ্যে গ্রামে-গঞ্জে প্রচারে টুলে উঠে বক্তৃতা করতেও দেখা গিয়েছে তাঁকে। জোট বেঁধে তাঁদের লক্ষ্য একই, তৃণমূল ‘অন্যায়’ করছে বলে বাংলাকে বিজেপির মৃগয়া-ক্ষেত্র হতে দেওয়া যাবে না!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy