Advertisement
E-Paper

উন্নয়ন ব্রাত্য, মেরুকরণই অস্ত্র মোদীর

রাজনৈতিক সূত্রের খবর, প্রথম দফার ভোটগ্রহণের পরে সিঁদুরে মেঘের আশঙ্কায় ‘পুরনো টোটকা’য় ফিরে যাওয়ার কৌশল নিয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব।

PM Narendra Modi.

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ০৭:৪৮
Share
Save

রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ, আবার রাজস্থান— পরপর তিন দিন ভোটপ্রচারে মেরুকরণের রাস্তায় হাঁটলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। যা নিয়ে বিতর্ক চরমে। গত কাল মুসলিম সম্প্রদায়ের নাম উহ্য রেখেছিলেন, আজ নাম করেই কংগ্রেসকে বিঁধেছেন ‘তোষণের রাজনীতির’ অভিযোগে। বিরোধীদের অভিযোগ, আদর্শ আচরণবিধির কোনও তোয়াক্কাই করেছেন না প্রধানমন্ত্রী। চুপ নির্বাচন কমিশনও। কংগ্রেস বলছে, হাতে-গরম কোনও বিষয় না থাকায় প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর দলকে সেই মেরুকরণের ‘তাস’ খেলতে হচ্ছে। তেমন গুরুত্ব পাচ্ছে না বিকাশ বা উন্নয়নের বিষয়গুলি।

মোদী তথা বিজেপির মেরুকরণ অস্ত্রের জবাব আজ কর্নাটকে দিয়েছেন কংগ্রেসের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরা। তিনি বলেন, ‘‘আমার মা তাঁর মঙ্গলসূত্র দেশের জন্য আহুতি দিয়েছেন। দেশে ৫৫ বছর কংগ্রেসের শাসন ছিল। কেউ কি মঙ্গলসূত্র ছিনিয়ে নিয়েছে? ইন্দিরাজি যুদ্ধের সময়ে সেনা তহবিলে নিজের গয়না দিয়ে দিয়েছিলেন।’’

রাজনৈতিক সূত্রের খবর, প্রথম দফার ভোটগ্রহণের পরে সিঁদুরে মেঘের আশঙ্কায় ‘পুরনো টোটকা’য় ফিরে যাওয়ার কৌশল নিয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব। টঙ্ক সোয়াই মাধোপুর নির্বাচনী কেন্দ্রের জনসভায় দলিত, জনজাতি, পিছিয়ে পড়া অংশ বনাম মুসলিমের একটি তত্ত্ব সামনে এনেছেন মোদী। সন্ধ্যায় ছত্তীসগঢ়ের জনসভায়ও তুলেছেন একই প্রসঙ্গ। মানুষের মনে আশঙ্কা তৈরি করতে চেয়ে বলেছেন, কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে ‘এক্স রে’ করে ঘরের সব সম্পত্তি কেড়ে নিয়ে নিজেদের ‘খাস সম্প্রদায়ের’ (মুসলিম) মধ্যে বিতরণ করে দেবে। মোদীর ‘গ্যারান্টি’, মোদীকে ভোট দিলে এই বিষয়টিকে আটকানো যাবে।

রাজস্থানে নির্বাচনী সমাবেশ আজ লাগাতার মেরুকরণের চেষ্টা করে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘‘যখন কংগ্রেস এবং ইন্ডিয়ার দলগুলি ক্ষমতায় ছিল তখন দলিত এবং সমাজে পিছিয়ে থাকা শ্রেণির সংরক্ষণ কমিয়ে, মুসলিমদের দিতে চেয়েছিল। ভোট ব্যাঙ্কের জন্য তারা সংবিধানের বিরুদ্ধে গিয়ে মুসলিমদেরআলাদা সংরক্ষণ দিতে চেষ্টা করেছিল।’’ এরপরই দলিত আবেগ তুলতে চেয়ে মোদীর বক্তব্য, বাবাসাহেব অম্বেডকর দলিত, সমাজের পিছিয়ে থাকা অংশ এবং জনজাতির সংরক্ষণের অধিকার দিয়েছিলেন। কংগ্রেস এবং ইন্ডিয়া মুসলিমদের তা দিতে চায়। তারা ধর্মের ভিত্তিতে দেশ ভাগ করতে চায়। তিনি বলেন, “কংগ্রেস দলের চিন্তা বরবারই তুষ্টিকরণ আর ভোটব্যাঙ্ক রাজনীতির। ২০০৪ সালে কংগ্রেস সরকার গড়ার পর প্রথমেই যা করার চেষ্টা করে তফসিলি জাতি ও জনজাতির সংরক্ষণ কমিয়ে মুসলিমদের দেওয়ার প্রয়াস। এটা আসলে একটা পাইলট প্রকল্প ছিল, যা গোটা দেশেই তখন আনতে চেয়েছিল কংগ্রেস। ২০০৪ থেকে ২০১০-এর মধ্যে কংগ্রেস চার বার অন্ধ্রপ্রদেশে মুসলিম সংরক্ষণের চেষ্টা করে। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের জাগ্রত ভূমিকারজন্য এই কাজ তারা করতে পারেনি। তখন যা করতে পারেনি ২০১১ সালে গোটা দেশে ফের তা আবার করার চেষ্টা করে কংগ্রেস। এটা যে সংবিধানের মূল ভাবনার বিরোধী তা জেনে বুঝেই কংগ্রেস এই কাজকরে।” তাঁর অভিযোগ, কংগ্রেস আমলে হনুমান চালিশা পাঠও অপরাধ।

আজ সন্ধ্যায় ছত্তীসগঢ়ের জানগিরি চম্পা এলাকায় জনসভায় মোদী ‘অস্ত্র’ করেন রামমন্দিরকে। তাঁর অভিযোগ, কংগ্রেস নিজেদের ভগবান রামের চেয়েও বড় বলে মনে করছে। তাঁর বক্তব্য, “প্রতিটি নির্বাচনে কংগ্রেস আমাদের ব্যঙ্গ করত, কবে রামমন্দির হবে। আমরা তাদের তারিখ, সময় জানিয়ে নিমন্ত্রণপত্র পর্যন্ত পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু প্রাণপ্রতিষ্ঠার অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করে তারা।” এরপর সংখ্যালঘু তোষণের প্রসঙ্গ তুলে মোদীর বক্তব্য, “স্বাধীনতার পর থেকেই তোষণের রাজনীতি করছে কংগ্রেস। এই রাজনীতি তাদের ডিএনএ-তে রয়েছে। এই তোষণের জন্য যদি দলিত, সমাজের পিছিয়ে থাকা অংশের মানুষ এবং জনজাতির সংরক্ষণ যদি তাদের ছিনিয়ে নিতে বলা হয়, তারা এক সেকেন্ডও দেরি করবে না।”মোদীর মতো ঘৃণাভাষণে পিছিয়ে নেই বিজেপির অন্য় নেতারাও। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ আজ আমরোহায় এক সভায় বলেছেন, ‘‘কংগ্রেস ক্ষমতায় এসে দেশে শরিয়তি আইন চালু করতে চায়।’’

মোদীর এই তীব্র মেরুকরণের চেষ্টা হতাশা হিসেবেই দেখছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জন খড়্গে থেকে রাহুল গান্ধীর বক্তব্যের নির্যাস, প্রথম পর্যায়ের ভোটের পর হতাশার শেষ সীমায় পৌঁছেছেন বলেই পুরনো অস্ত্র ঝুলি থেকে বার করতেহয়েছে প্রধানমন্ত্রীকে। কংগ্রেস নেতৃত্বের বক্তব্য, এ বারের লোকসভা নির্বাচনে মোদী-হাওয়া নেই, রক্ত গরম করা জাতীয়তাবাদের স্লোগানও অনুপস্থিত, রুগ্ন প্রতিবেশী রাষ্ট্র (পাকিস্তান) নিজেই অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক ভাবে কোণঠাসা। ফলে ছাপান্ন ইঞ্চি প্রদর্শনের সুযোগও নেই। বার বার আলোচনায় ও বিরোধীদের প্রচারে উঠে আসছে তীব্র বেকারিত্ব, মূল্যবৃদ্ধি, নির্বাচনী বন্ড, কৃষক বিক্ষোভের মতো জ্বলন্ত বিষয়গুলি। কংগ্রেস নেতৃত্বের মতে, রামমন্দির নির্মাণ করে ভোট বৈতরণীপার হওয়ার যে পরিকল্পনা ছিল, সেটিও কাজ করছে না। অগত্যা বিভাজনের মরিয়া প্রচারে হিন্দু ভোটকে এক ছাতায় আনার চেষ্টা করছেন মোদী।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

PM Narendra Modi BJP Lok Sabha Election 2024

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}