E-Paper

ত্রিস্তরে হারানো সংখ্যালঘু ভোট কি ফিরবে তৃণমূলেই

বস্তুত, বীরভূমে সিএএ-র প্রভাব নতুন নয়। ২০১৯ সালে ১১ ডিসেম্বর সংসদে নাগরিকত্ব আইন পাশ হওয়ার পরেই সারা দেশের মতোই জেলা জুড়ে এই আইন প্রত্যাহারের দাবিতে বিক্ষোভ হয়েছিল।

An image of TMC

—প্রতীকী চিত্র।

অপুর্ব চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০২৪ ০৮:৫৮
Share
Save

গত লোকসভা এবং বিধানসভা ভোটে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত অঞ্চলে ভাল ভোট পেয়েছিল শাসক দল তৃণমূল। তবে গত বছর ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ভোটে সেই ভোটের বেশ কিছুটা তাদের কাছে ফিরেছিল বলে বাম-কংগ্রেসের দাবি। এ বার লোকসভা ভোটের মুখে বিজেপি সরকার নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) কার্যকর করায় ফের জেলার সংখ্যালঘু ভোট শাসক শিবিরের পক্ষে চলে যেতে পারে বলে মত তৃণমূল সূত্রে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুরেই সিএএ-র বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন জেলা তৃণমূল নেতৃত্বও।

বস্তুত, বীরভূমে সিএএ-র প্রভাব নতুন নয়। ২০১৯ সালে ১১ ডিসেম্বর সংসদে নাগরিকত্ব আইন পাশ হওয়ার পরেই সারা দেশের মতোই জেলা জুড়ে এই আইন প্রত্যাহারের দাবিতে বিক্ষোভ হয়েছিল। সংখ্যালঘু অধ্যুষিত মুরারই, নলহাটি, হাঁসন বিধানসভা কেন্দ্রের বিভিন্ন এলাকায় প্রবল ক্ষোভ ছড়ায়। নলহাটির লোহাপুর স্টেশনে বিক্ষোভকারীরা রেলগেট ভেঙে গেটম্যানের ঘরে আগুন ধরিয়ে দেন। টিকিট কাউন্টারের দুটি ঘরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। রেলকর্মীদেরও মারধর করা হয়। এ ছাড়া রামপুরহাট, দুবরাজপুর বিধানসভা এলাকার নানা জায়গাতেও বিক্ষোভ হয়।

এ বার ঠিক ভোটের মুখে বিজেপি সরকার সিএএ কার্যকর করার ঘোষণা করায় বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রের অধীন সংখ্যালঘু অধ্যুষিত মুরারই, নলহাটি বিধানসভা ক্ষেত্রে তৃণমূল বাড়তি সুবিধা পাবে বলে রাজনৈতিক মহলের অনুমান। জেলার রাজনীতির কারবারিরা বলছেন, নাগরিকত্ব আইন কার্যকর করার প্রভাব ও সিএএ নিয়ে তৃণমূলের বিরোধিতার জেরে বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রের হাঁসন, রামপুরহাট, সাঁইথিয়া, সিউড়ি ও দুবরাজপুর বিধানসভা এলাকাতেও শাসক দলের সুবিধে হতে পারে।

ঘটনা হল, ৩৬ শতাংশ সংখ্যালঘু ভোটের বীরভূম কেন্দ্রে সেই ভোট কোন পক্ষে যায় সেটাই নির্ণায়ক হয়ে যেতে পারে। ২০১৯ সালে বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রের ফলেও তা হয়েছিল। দুবরাজপুর, সিউড়ি, সাঁইথিয়া, সিউড়ি— এই চার বিধানসভা কেন্দ্রে পিছিয়ে থাকলেও সংখ্যালঘু প্রভাবিত মুরারই, নলহাটি ও হাঁসন বিধানসভা কেন্দ্রে এগিয়ে থাকার সুবাদেই তৃণমূলের শতাব্দী রায় জয়ী হয়েছিলেন। তিনি নিজের ব্যবধানও বাড়াতে সক্ষম হয়েছিলেন।

পঞ্চায়েত ভোটে সেই সংখ্যালঘু ভোটের একটা অংশ তৃণমূল থেকে সিপিএম ও কংগ্রেসের ঝুলিতে গিয়েছে বলে বিরোধী শিবিরের দাবি। হাওড়ায় আনিস খান মৃত্যু, জেলাতেই বগটুইয়ের ঘটনার মতো নানা কারণে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের একটা অংশ শাসক দলের থেকে মুখ ফেরান বলে দাবি বিরোধীদের।

পঞ্চায়েতের ত্রিস্তরে তা দেখাও গিয়েছে। তথ্য বলছে, হাঁসন বিধানসভার অধীন নলহাটি ২ পঞ্চায়েতে সিপিএম-কংগ্রেস জোট ২টি পঞ্চায়েত দখল করেছে। জেলা পরিষদের একটি আসনেও জোট জয়ী হয়েছে। আবার, মুরারই ২ ব্লকের একটি পঞ্চায়েতও সিপিএম-কংগ্রেস জোট দখল করেছে। বিরোধীদের দাবি, সংখ্যালঘু ভাগ হলে তৃণমূলের লড়াই অনেকটা কঠিন হবে বলেই শাসক দল চড়া সুরে সিএএ বিরোধিতায় নেমেছে। বিজেপিও মেরুকরণের জন্যই পাঁচ বছর কিছু না করে ভোটের ঠিক মুখে আইন চালুর কথা বলেছে বলে বাম-কংগ্রেস শিবিরের দাবি। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সঞ্জীব বর্মণ বলেন, ‘‘এটা ভারতবর্ষের সংবিধান বিরোধী। বিজেপি ও তৃণমূল ধর্মের ভিত্তিতে মানুষের মধ্যে বিভাজন গড়ে তুলে ফায়দা তুলতে চাইবে।’’

তবে দেশ জুড়ে সিএএ চালু হওয়ার পর থেকেই তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে সংখ্যালঘুদের পাশে থাকার বার্তা দিচ্ছেন তাতে সিএএ আতঙ্কে বিজেপিকে রুখতে বাম-বিজেপিতে চলে যাওয়া ভোট আবার তৃণমূলে ফিরবে বলে শাসক দলের নেতাদের অনেকেই মনে করছেন। মুখ্যমন্ত্রীর সুরেই বীরভূম জেলা পরিষদের সভাধিপতি কাজল শেখ মঙ্গলবার রামপুরহাটে বলেন, ‘‘আমরা স্বাধীন ভারতবর্ষের স্বাধীন নাগরিক। আমরা স্বাধীনভাবে ভারতবর্ষে বসবাস করছি। গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করছি। আমরা আমাদের মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ পেলে আমরা অবশ্যই সিএএ র প্রতিবাদে আন্দোলনে নামব।’’

প্রকাশ্যে না বললেও সিএএ কার্যকর হওয়ায় যে সংখ্যাগুরুদের ভোট এককাট্টা হয়ে তাঁদের ঝুলিতে আসতে পারে তা প্রকারান্তরে মেনে নিচ্ছেন গেরুয়া শিবিরের অনেক নেতাই। বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য শুভাশিস চৌধুরী বললেন, ‘‘সিএএ কার্যত বিজেপির নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির মধ্যেই ছিল। লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি তার প্রতিশ্রুতি রেখেছে।’’ সিপিএম নেতা সঞ্জীব অবশ্য বলছেন, ‘‘মানুষ দুর্নীতিকে বড় করে দেখছেন। তাঁরা এই বিভাজনের রাজনীতির ফায়দা তোলার চেষ্টার জবাব দেবেন।’’

Lok Sabha Election 2024 TMC Minority votes

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিমিয়াম খবর…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়।

  • সঙ্গে পান রোজ আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই -পেপার পড়ার সুযোগ।

  • এখন না পড়তে পারলে পরে পড়ুন, 'সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে।

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

ক্যানসেল করতে পারবেন আপনার সুবিধামতো

SAVE 1%*
প্রতি বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

প্ল্যানটি সিলেক্ট করে 'Subscribe Now' ক্লিক করুন।শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
প্রতি মাসে

৪২৯

১৬৯

প্ল্যানটি সিলেক্ট করে 'Subscribe Now' ক্লিক করুন।শর্তাবলী প্রযোজ্য।