রবিবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মিছিল শুরু হবে রামকৃষ্ণ মিশনের সামনে থেকে। —ফাইল ছবি।
সপ্তম দফা ভোটের আগে শেষ রবিবার ভোটের প্রচার করতে যাদবপুর লোকসভাকে বেছে নিয়েছেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই লোকসভার অন্তর্গত সোনারপুর দক্ষিণে মিছিল করবেন তিনি। তৃণমূল সূত্রে খবর, রবিবার মমতার পদযাত্রা শুরু হবে নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের সামনে থেকে। কর্মসূচি ঘোষণার পর থেকেই রাজনৈতিক মহলে কৌতূহল তৈরি হয়েছে, মমতার সাম্প্রতিক মন্তব্য নিয়ে ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘ, রামকৃষ্ণ মিশন ও ইস্কনের প্রতিক্রিয়ার পরেই কি মিছিল শুরুর স্থান হিসেবে নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনকে বেছে নেওয়া হল? তবে দলের তরফ থেকে মিছিল প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করা হচ্ছে না। শুধু জানানো হয়েছে, নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন থেকে শুরু হয়ে মিছিল শেষ হবে সোনারপুর চাঁদমারিতে। সেখানেই যাদবপুরের তৃণমূল প্রার্থী সায়নী ঘোষের সমর্থনে সভা করবেন মমতা।
উল্লেখ্য, ১৮ মে আরামবাগ লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী মিতালি বাগের সমর্থনে গোঘাটে সভা ছিল মমতার। সেই মঞ্চে সিপিএম জমানায় গোঘাটে সন্ত্রাসের প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন তৃণমূলনেত্রী। ওই সময়ে সিপিএমের হাতে ‘আক্রান্ত’দের সাহায্যার্থে কামারপুকুরের রামকৃষ্ণ মিশনের ভূমিকার প্রশংসা করেন মমতা। তার পরেই মমতা এখনকার সাধু-সন্তদের একাংশের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনায় সরব হন। তিনি বলেছিলেন, “সব সাধু সমান হয় না। সব স্বজন সমান হয় না। আমাদের মধ্যেও কি আমরা সবাই সমান? এই যে বহরমপুরের এক জন মহারাজ আছেন। আমি শুনেছি অনেক দিন ধরে, কার্তিক মহারাজ। ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘকে আমি খুব শ্রদ্ধা করতাম। আমার শ্রদ্ধার্ঘ্যের তালিকায় তারা দীর্ঘ দিন ধরে আছে। কিন্তু যে লোকটা বলে, তৃণমূল কংগ্রেসের এজেন্ট বসতে দেব না, সেই লোকটাকে আমি সাধু বলে মনে করি না। তার কারণ, সে ‘ডাইরেক্ট পলিটিক্স’ করে দেশটার সর্বনাশ করছে।’’
কোন কোন প্রতিষ্ঠানের কারা রাজনৈতিক ভাবে পক্ষপাতিত্ব করছেন, তা তাঁর চিহ্নিত করা রয়েছে বলেও দাবি করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বলেছিলেন, ‘‘আমি আইডেন্টিফাই করেছি কে কে করেছেন। আসানসোলে একটা রামকৃষ্ণ মিশন রয়েছে। আমি রামকৃষ্ণ মিশনকে কী হেল্প করিনি! সিপিএম যখন খাবার বন্ধ করে দিয়েছিল, আপনাদের অস্তিত্ব নিয়ে, স্বাধিকার নিয়ে... তখন কিন্তু আমি পুরো সমর্থন দিয়েছিলাম। মা-বোনেরা আসত। তারা তরকারি কেটে দিত। সিপিএম কিন্তু আপনাদের কাজ করতে দিত না।’’
‘দিল্লির আজ্ঞাবহ’ হিসেবে মহারাজদের একাংশ কাজ করছেন বলেও অভিযোগ করেছিলেন মমতা। তিনি বলেছিলেন, ‘‘দিল্লি থেকে নির্দেশ আসে। বলে, বিজেপিকে ভোট দেওয়ার জন্য বলো। কেন করবে সাধু-সন্তেরা এই কাজ? রামকৃষ্ণ মিশনকে সবাই সম্মান করে। ওদের কাছে একটা হোয়াটস্অ্যাপ গ্রুপ রয়েছে। ওদের যারা মেম্বার হয়, দীক্ষা নেয়, তারা আছে। তাদের আমি ভালবাসতে পারি। আমি দীক্ষা নিতে পারি। কিন্তু রামকৃষ্ণ মিশন ভোট দেয় না কোনও দিনও। এটা আমি জানি। তা হলে আমি অন্যকে কেন ভোট দিতে বলব?’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘কেউ কেউ ভায়োলেট (লঙ্ঘন) করছে। সবাই নয়। কিন্তু মনে রাখবেন, স্বামী বিবেকানন্দের বাড়িটাই থাকত না, আপনাদের এই মেয়েটা যদি না থাকত।” এর পরেই মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেছিলেন, কলকাতায় স্বামী বিবেকানন্দের জন্মভিটে মাফিয়াদের হাত থেকে তিনি কী ভাবে রক্ষা করেছিলেন।
রামকৃষ্ণ মিশন, ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের নাম করে মমতার আক্রমণের পাল্টা বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছিলেন, ‘‘ইমামেরা আবেদন করতে পারেন আর কার্তিক মহারাজ প্রতিবাদ করলে অসুবিধা? বিজেপির কোনও মঞ্চে তাঁরা ছিলেন না। তাঁরা এখানে (বাংলায়) সনাতন হিন্দুদের উপর আক্রমণের প্রতিবাদ করেন।’’ পাশাপাশিই শুভেন্দু মুর্শিদাবাদের ভরতপুরের তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীরের ‘বিদ্বেষমূলক’ মন্তব্যের প্রসঙ্গ টানেন। তাঁর কথায়, ‘‘বিজেপি নূপুর শর্মাকে সাসপেন্ড করে আর উনি হুমায়ুন কবীরের কথা চুপ করে শোনেন।’’ উল্লেখ্য, হুমায়ুনের সংশ্লিষ্ট মন্তব্যের জন্য নির্বাচন কমিশন তাঁকে শো-কজ় করেছিল।
আরামবাগের সভায় মুখ্যমন্ত্রী ‘বিতর্কিত’ মন্তব্য করার পর সে রাতেই, জলপাইগুড়ি রামকৃষ্ণ মিশনে হামলার ঘটনা লোকসভা ভোটপর্বের মাঝে রাজ্য রাজনীতিতে শোরগোল ফেলেছে। এই আবহে মঙ্গলবার রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন কর্তৃপক্ষ ঘটনার প্রতিক্রিয়া জানান। রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সাধারণ সম্পাদক স্বামী সুবীরানন্দ প্রতিষ্ঠানের তরফে প্রতিক্রিয়া জানান। প্রতিষ্ঠানের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘‘আমরা একটি অরাজনৈতিক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান। যাঁরা আমাদের সন্ন্যাসী এবং ব্রহ্মচারী, তাঁরা রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করেন না, এমনকি, তাঁদের যে ভোটদানের অধিকার আছে তা-ও প্রয়োগ করেন না। ভোটদানে বিরত থাকেন। এই নির্দেশ স্বামীজি মহারাজ (স্বামী বিবেকানন্দ) আমাদের দিয়ে গিয়েছেন, তা আমরা অক্ষরে অক্ষরে পালন করি।’’
শুক্রবার কলকাতার রাজপথে গেরুয়া বসন গায়ে, খালি পায়ে মিছিল করেছেন সাধু-সন্তেরা। ভারত সেবাশ্রমের বেলডাঙা শাখার অধ্যক্ষ কার্তিক মহারাজের নেতৃত্বে বাগবাজার থেকে হেঁটে সিমলায় স্বামী বিবেকানন্দের বাড়ির সামনে জড়ো হন সাধু-সন্তেরা। বিবেকানন্দ রোড এবং বিধান সরণির সংযোগস্থল এলাকায় দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যের সমালোচনা করেছেন সাধুরা। তাঁদের দাবি, সাধুদের সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এ জন্য অবিলম্বে তাঁকে ক্ষমা চাইতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী যাঁর নাম নিয়ে মন্তব্য করেছিলেন, সেই কার্তিক মহারাজ একই সঙ্গে মুর্শিদাবাদের ভরতপুরের বিধায়ক হুমায়ুন কবীর এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে নিশানা করেন। আর তার পরেই ভোট প্রচারে রবিবার নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের কাছ থেকে মিছিলে হাঁটার কর্মসূচি ঘোষণা করল তৃণমূল। আগেই তাঁর বিরুদ্ধে করা মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রীকে আইনি নোটিস পাঠিয়েছেন কার্তিক মহারাজ।
সেই আবহে রবিবার মমতার মিছিল শুরুর জায়গা বাছাকে ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক মহলের অনেকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy