সন্দেশখালির ত্রিমণী বাজার এলাকায় বুধবার বিকেলে কেন্দ্রীয় বাহিনীর রুটমার্চ। —নিজস্ব চিত্র।
সন্দেশখালি: এলাকায় ভোট হতে এখনও দিন পনেরো বাকি। কিন্তু নতুন করে গোলমাল শুরু হওয়ায় সন্দেশখালি বিধানসভা এলাকার দু’টি পঞ্চায়েত, বেড়মজুর ১ ও ২-এ বুধবার থেকে রুটমার্চ শুরু করল কেন্দ্রীয় বাহিনী। গ্রামবাসীরা মনে করছেন, এর ফলে উত্তেজনা কিছুটা হলেও কমবে।
এক তৃণমূল কর্মীকে মারধর এবং স্থানীয় বিধায়ককে হেনস্থার অভিযোগে রবিবার রাতে বেড়মজুর ১ পঞ্চায়েতের কাঠপোলের বাসিন্দা গীতা বর নামে এক আন্দোলনকারীকে পুলিশ গ্রেফতার করে। তিনি বিজেপি কর্মী। ওই ঘটনায় আরও কয়েক জন অভিযুক্তের খোঁজে পুলিশি তল্লাশি জারি রয়েছে বেড়মজুরে। এর পরে মিথ্যা মামলা করানোর অভিযোগে গ্রেফতার হন আর এক বিজেপি কর্মী, পিয়ালি দাস।
এই পরিস্থিতিতে দলের লোকজনকে আশ্বস্ত করতে বুধবার পুরোদমে মাঠে নামেন বিজেপি নেতারা। বুধবার রাজ্য বিজেপি নেত্রী ফাল্গুনী পাত্র দেখা করতে আসেন কাঠপোলের মহিলাদের সঙ্গে। প্রার্থী রেখা পাত্র যান রামপুরের বাগদিপাড়ায় আন্দোলনকারী মহিলাদের সঙ্গে দেখা করতে। মহিলারা রেখার কাছে অভিযোগ করেন, ‘ভিলেজ পুলিশ’ হিসেবে কাজ করা শেখ শাহজাহানের এক আত্মীয় বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দিচ্ছেন। ধৃত বিজেপি কর্মী গীতা বরের বাড়িতেও যান রেখা। এখানেও মহিলারা পুলিশের বিরুদ্ধে অত্যাচারের অভিযোগ তুলে নিরাপত্তাহীনতার কথা জানান। অসমের বিজেপির এসসি মোর্চার রাজ্য সভানেত্রী মন স্বর্ণকার আসেন কোরাকাটি পঞ্চায়েতের জেকে মিলন বাজারে পথসভা করতে।
রেখা মহিলাদের জানান, বিজেপি পাশে আছে। কেউ কোনও অত্যাচার করলে, ভিডিয়ো করে অভিযুক্তদের নামের তালিকা মণ্ডল সভাপতিদের হাতে তুলে দিন। পরে তিনি বলেন, ‘‘শাহজাহানের আত্মীয়কে পুলিশে ঢোকানো হয়েছে গুন্ডামি করার জন্য। পুলিশ মিথ্যা মামলা দিয়ে রাতে দরজা ভেঙে ঢুকে মহিলাদের গায়ে হাত দিচ্ছে। পুরুষদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। পুলিশের অত্যাচার নিয়ে গোটা ঘটনার সিবিআই তদন্তের প্রয়োজন।’’
বসিরহাটের পুলিশ সুপার হোসেন মেহেদি রহমান এ নিয়ে বিশেষ মন্তব্য করতে চাননি। তিনি বলেন, ‘‘পুলিশের বিরুদ্ধে ওঠা অত্যাচারের অভিযোগের বিষয়ে কিছু বলার নেই।’’
স্থানীয় বিজেপি নেত্রী অর্চনা ভুঁইয়ার অভিযোগ, ‘‘রাতের বেলায় বেড়মজুরে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তৃণমূলের নেতারা হুমকি দিচ্ছেন। বলছে, বিজেপি করা যাবে না। কিছু দিন আগে ওদের কয়েক জন আমার বাড়িতে এসে লক্ষাধিক টাকার টোপ দিয়ে আমাকে রেখার বিরুদ্ধে তৃণমূল প্রার্থী করা হবে বলে জানিয়েছিল। আমি প্রত্যাখ্যান করি।’’ বিজেপির আইনজীবী নেত্রী প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়ালও এ দিন সন্দেশখালিতে এসে আন্দোলনকারী মহিলাদের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁদের আইনি সাহায্যের আশ্বাসও দেন।
প্রিয়াঙ্কা বলেন, ‘‘এঁদের আন্দোলন এত যন্ত্রণা দিচ্ছে যে, স্টিং ভিডিয়ো করছে তৃণমূল। প্রাণনাশের হুমকি আসছে অথবা টাকার প্রলোভন দেওয়া হচ্ছে। কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতির সামনে তুলে ধরব সব।’’ যদিও স্টিং ভিডিয়োর প্রসঙ্গে সবিস্তার মন্তব্য এ দিন কার্যত এড়িয়ে গিয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব।
তৃণমূল কোনও অভিযোগ মানেনি। বিধায়ক সুকুমার মাহাতো বলেন, ‘‘আমাদের টাকা বেশি হয়নি যে, অন্যকে দিতে যাব। আমাদের উপযুক্ত প্রার্থী আছে। প্রার্থী তৃণমূলে কম পড়েনি। হুমকির অভিযোগও পুরোপুরি মিথ্যা।’’ তাঁর আরও দাবি, ‘‘বিজেপিই এখন গুন্ডামি করছে। গঙ্গাধরকে জাতীয় পুরস্কার দেওয়া উচিত সত্যি বলার জন্য। বিজেপিই ওকে সন্দেশখালি আসতে দিচ্ছে না। যদি সত্যি সামনে চলে আসে, সেই ভয়ে।’’ মন স্বর্ণকারের প্রসঙ্গ তুলে সুকুমারের দাবি, ‘‘অসম থেকে বিজেপি নেত্রীরা এসে গোপনে স্কুলের তালা খুলিয়ে বৈঠক করছেন। সৎ সাহস থাকলে অনুমতি নিয়ে প্রকাশ্যে মিটিং করুন। আসলে অস্ত্র ভাগাভাগি করার জন্যই এই গোপন মিটিং।’’
সন্দেশখালি বিজেপি নেতা বিকাশ সিংহ পাল্টা বলেন, ‘‘বিজেপিকে ভয় পাচ্ছে তৃণমূল। তাই ভিত্তিহীন অভিযোগ করছেন। কোরাকাটিতে অনুমতি নিয়ে বৈঠক হচ্ছে।’’
এই আবহে মঙ্গলবার রাতেই বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রের জন্য ২৬ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী এসে পৌঁছয়। এর মধ্যে এক কোম্পানি সন্দেশখালি থানায় এবং এক কোম্পানি ন্যাজাট থানায় আসে। শুরু হয় রুট মার্চ। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে আরও কেন্দ্রীয় বাহিনী আসবে বলে পুলিশ সূত্রে খবর। আগের গোলমালের ঘটনায় এ দিন বিকেলে সন্দেশখালির ত্রিমণী বাজারে তৃণমূল ধিক্কার-মিছিল করে বিধায়কের নেতৃত্বে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy