(বাঁ দিক থেকে) পার্থ চট্টোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ‘ঘনিষ্ঠ’ হিসাবে পরিচিতা অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের দু’টি ফ্ল্যাট থেকে নোট-পর্বত উদ্ধার হওয়ার ঘটনাকে বাংলায় ‘কলঙ্কজনক অধ্যায়’ বলে উল্লেখ করলেন তৃণমূলের সেনাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সাম্প্রতিক অতীতে নানাবিধ কেলেঙ্কারি, আর্থিক অনিয়ম নিয়ে রাজ্য রাজনীতি আন্দোলিত হয়েছে। কিন্তু কোনও ক্ষেত্রেই পাহাড়প্রমাণ টাকা উদ্ধারের দৃশ্য দেখা যায়নি। দেশের অন্য রাজ্যে এই ধরনের ঘটনা নতুন না হলেও বাংলায় তা ছিল ‘নজিরবিহীন’। সে কথা মেনে নিয়েছেন অভিষেকও। এবং একই সঙ্গে স্মরণ করিয়ে দিতে চেয়েছেন, দল পার্থের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। মন্ত্রিসভা থেকে তাঁকে অপসারিতও করা হয়েছে।
সেই প্রসঙ্গেই এসেছে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ওরফে বালুর নাম। তিনিও তো দুর্নীতির অভিযোগে জেলবন্দি। তিনি কী করে রাজ্য মন্ত্রিসভায় রয়ে গিয়েছেন? এই প্রশ্নে জোড়া জবাব দিয়েছেন অভিষেক। প্রথমত, অভিষেক বলেন, ‘‘হ্যাঁ, আজ মন্ত্রী আছেন। কালও যে থাকবেন, তা কে বলতে পারে?’’ এবং দ্বিতীয়ত অভিষেক বলেছেন, ‘‘ইডি বা সিবিআই ভগবান নয়। যে তারা কাউকে গ্রেফতার করলেই তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে!’’ অনেকের মতে, অভিষেক বোঝাতে চেয়েছেন, এ ক্ষেত্রে দলের সিদ্ধান্তের বিষয় রয়েছে। কাউকে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা গ্রেফতার করা মানেই দল তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে, এমনটা নয়। তবে জ্যোতিপ্রিয়ের বিষয়টি যে দল আতশকাচের নীচে রেখেছে, তা-ও বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি অভিষেক এ-ও মনে করিয়ে দিয়েছেন যে, জ্যোতিপ্রিয়কে ইডি গ্রেফতার করেছে রাজ্য পুলিশের এফআইআরের উপর ভিত্তি করেই। অর্থাৎ, রাজ্য সরকার যে দুর্নীতি রুখতে সচেষ্ট, তার নিদর্শন হচ্ছে রেশনকাণ্ডে রাজ্য পুলিশের এফআইআর। একইসঙ্গে বাম আমলের ভুয়ো রেশনকার্ড বাতিল করার সিদ্ধান্তের কথাও টেনে এনেছেন তৃণমূলের অন্যতম শীর্ষনেতা।
পার্থের ক্ষেত্রে কয়েক দিনের মধ্যে কী করে পদক্ষেপ করেছিল দল ও সরকার? এ ব্যাপারে পরিপার্শ্বের তথ্যপ্রমাণের (সারকামস্ট্যানশিয়াল এভিডেন্স) বিষয়টিকেই প্রাধান্য দিয়েছেন অভিষেক। অর্থাৎ অর্পিতার দুই ফ্ল্যাট থেকে টাকার পাহাড় উদ্ধারের ঘটনা। তাঁর কথায়, ‘‘ওখানে সারকামস্ট্যানশিয়াল এভিডেন্স ছিল। মানুষ টাকার পাহাড়ের ছবি দেখেছিলেন। জ্যোতিপ্রিয়ের ক্ষেত্রে আমরা শুনেছি যে, তাঁর অ্যাকাউন্টে টাকা জমা পড়েছে। আমরা তো চাই, তদন্তে কেউ যদি এতটুকুও দোষী প্রমাণিত হন, তা হলে তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর থেকে কঠোরতম ব্যবস্থা নেওয়া হোক!’’ কিন্তু কোনও একটি ‘রাজনৈতিক বার্তা’ দেওয়ার জন্যও কি জ্যোতিপ্রিয়কে মন্ত্রিসভা থেকে সরানো উচিত ছিল না? অভিষেকের জবাব, ‘‘আমি রাজনৈতিক বার্তা দেওয়ার জন্য দল করি না।দল করি মানুষের সেবার জন্য। মানুষকে পরিষেবা দেওয়ার জন্য।’’
এই প্রসঙ্গেই অভিষেক কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার ভূমিকারও তীব্র সমালোচনা করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘দেড় বছর তো হয়ে গেল পার্থ চট্টোপাধ্যায় জেলে! তদন্তে কী অগ্রগতি হয়েছে? সারদা, নারদ মামলা তো এত দিন হয়ে গেল। সারদার এফআইআর হয়েছিল ২০১৩ সালে। ১১ বছর হয়ে গিয়েছে! এখনও পর্যন্ত বিচারপ্রক্রিয়াও শুরু করা যায়নি। তাই আমি মনে করি, সময় বেঁধে তদন্ত করা উচিত।’’ পাশাপাশি অভিষেকের এ-ও বক্তব্য যে, কুস্তিকর্তা ব্রিজভূষণ শরণ সিংহ, মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী নারায়ণ রাণেদের বিরুদ্ধেও গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু বিজেপি তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করেনি। যদিও তৃণমূল করেছে।
কিন্তু পার্থ যে তলে তলে এত কিছু করেছেন, দল তা জানত না? খবর রাখেনি? অভিষেকের বক্তব্য, ‘‘পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের উপর আস্থা-ভরসা ছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। কেউ যদি সেই আস্থা-ভরসার সুযোগ নেয়, তার চেয়ে দুর্ভাগ্যজনক আর কী হতে পারে!’’ পার্থের ঘটনার পরে দল কি কোনও নজরদারি ব্যবস্থা চালু করেছে? অভিষেকের বক্তব্য, ‘‘ওই ভাবে দল চালানো যায় না। যদি কাউকে দলে নেওয়ার আগে তাঁর পটভূমিকা সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়া যায়, তা হলে কোনও খুঁত পাওয়া গেলে আমি তাঁকে দলেই নেব না। কিন্তু ব্যক্তিগত পরিসরে কে কী করবেন, তা দল কী করে খোঁজ রাখবে?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy