মণিশঙ্কর আইয়ার। ছবি: পিটিআই।
প্রতি বারের মতো এ বারও লোকসভা নির্বাচনের ঢাকে কাঠি পড়তেই কংগ্রেস শিবিরে আশঙ্কা ছিল, মণিশঙ্কর আইয়ার না আবার উল্টোপাল্টা মন্তব্য করে বিজেপির হাতে অস্ত্র তুলে দেন! কিন্তু এখনও পর্যন্ত ওই প্রবীণ কংগ্রেস নেতা নিজে কিছু বললেন না। কিন্তু বিজেপি আজ তাঁরই পুরনো সাক্ষাৎকারে পাকিস্তান সম্পর্কে মন্তব্য খুঁজে বার করে এনে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে পাকিস্তান ও পাক-মদতপুষ্ট সন্ত্রাসবাদ নিয়ে নরম মনোভাব নেওয়ার অভিযোগ তুলল।
যা দেখে বিরোধীরা কটাক্ষ করতে ছাড়েননি। তাঁদের প্রশ্ন, এত দিন মোদী তথা বিজেপি ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’, ‘বিকশিত ভারত’-এর কথা বলত। এখন লোকসভা নির্বাচনে মোদী সরকারের দশ বছরের কাজের খতিয়ানের বদলে বিজেপিকে কেন মণিশঙ্করের পুরনো মন্তব্য খুঁজতে হচ্ছে?
গত বছর এক সাক্ষাৎকারে কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা মণিশঙ্কর আইয়ার বলেছিলেন, পাকিস্তানকে সমঝে চলা উচিত। কারণ পাকিস্তানের কাছে পরমাণু অস্ত্র রয়েছে। তাই পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনায় বসে যে সব কঠিন বার্তা দেওয়া যায়, তা দিতে হবে।
আজ পুরনো এই মন্তব্য নিয়ে অমিত শাহের নেতৃত্বে বিজেপি কংগ্রেসকে নিশানা করেছে। কংগ্রেস মণিশঙ্করের মন্তব্য থেকে দূরত্ব তৈরি করে জানিয়েছে, মণিশঙ্কর পুরনো সাক্ষাৎকারে যা বলেছিলেন, তা কংগ্রেসের বক্তব্য নয়। একই সঙ্গে কংগ্রেসও মোদী সরকারের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের পুরনো সাক্ষাৎকার তুলে ধরেছে। সেখানে জয়শঙ্কর বলছেন, চিন ভারতের তুলনায় অনেক বড় অর্থনীতি। ভারতের পক্ষে চিনের সঙ্গে বিবাদে যাওয়া সম্ভব নয়।
কংগ্রেস-সহ বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছে, নরেন্দ্র মোদীর বিজেপিকে কেন লোকসভা ভোটে মণিশঙ্করের পুরনো সাক্ষাৎকার খুঁজতে হচ্ছে? কেন মোদী সরকারের গত দশ বছরের কাজের নিরিখে বিজেপি ভোট চাইছে পারছে না? তাঁর উত্তর নিজেই দিয়েছেন ওই প্রবীণ কংগ্রেস নেতা। মণিশঙ্করের কটাক্ষ, ‘‘এ থেকেই বোঝা যাচ্ছে যে, বিজেপির প্রচারে সাড়া মিলছে না।’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘যে সাক্ষাৎকারের অংশ দেখানো হচ্ছে, সেখানে আমি সোয়েটার পরে রয়েছি। এ থেকেই বোঝা যায়, ওটা গত বছর শীতের সময়ের। এখন সেটা ওরা খুঁজে বার করেছে।’’
কংগ্রেস মুখপাত্র পবন খেরা বলেন, ‘‘মোদী রোজ যে সব ভুল করছেন, তা থেকে নজর ঘোরাতে আইয়ারের মন্তব্য তুলে এনেছে বিজেপি। আইয়ারের মন্তব্য কংগ্রেসের কথা নয়। কংগ্রেস আমলেই পাকিস্তান ভেঙে বাংলাদেশ তৈরি হয়েছিল। ৫০ বছর আগে ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বে ভারতের পরমাণু ক্ষমতার কথা ঘোষণা হয়েছিল। আর পুরনো সাক্ষাৎকার খুঁজলে দেখা যাবে, বিদেশমন্ত্রী নিজেই চিনকে ভয় পেয়ে চলার কথা বলছেন।’’
সম্প্রতি স্যাম পিত্রোদার উত্তরাধিকার কর ও ভারতীয়দের গায়ের রং নিয়ে মন্তব্যকে নরেন্দ্র মোদী তথা বিজেপি নেতারা হাতিয়ার করেছিলেন। তার পরে পিত্রোদাকে ওভারসিজ় কংগ্রেসের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। কংগ্রেস শিবিরের আশঙ্কা ছিল, এর পরে না মণিশঙ্কর আইয়ার উল্টোপাল্টা মন্তব্য করে মোদীর হাতে অস্ত্র তুলে দেন। কারণ অতীতে তাঁর মোদী সম্পর্কে ‘চা-ওয়ালা’ ও ‘নীচ আদমি’ মন্তব্যকে মোদীই হাতিয়ার করেছেন। এ বার মণিশঙ্কর নিজে না মুখ খুললেও তাঁর পুরনো মন্তব্য বিজেপি খুঁজে বার করেছে।
মণিশঙ্করের মন্তব্য নিয়ে প্রথমে বিজেপি নেতা রাজীব চন্দ্রশেখর সাংবাদিক সম্মেলন করেন। তার পরে অমিত শাহ পটনায় প্রচারে গিয়ে বলেন, কংগ্রেস পাকিস্তানের পরমাণু বোমার কথা বলে নিজের দেশকে ভয় দেখাচ্ছে। সম্প্রতি মোদী নিজে ইউপিএ জমানায় সন্ত্রাস নিয়ে কংগ্রেসের ‘নরম মনোভাবের’ সঙ্গে তাঁর জমানার ‘ঘরে ঢুকে মারা’-র নীতির তুলনা করেছিলেন। পাকিস্তান রাহুল গান্ধীকে প্রধানমন্ত্রী দেখতে চায় বলেও নিশানা করেছিলেন কংগ্রেসকে। কংগ্রেস মনে করছে, বিজেপি আসলে যে কোনও উপায়ে ভোটের বাজারে পাকিস্তান প্রসঙ্গ জিইয়ে রাখতে চায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy