(বাঁ দিক থেকে) দিলীপ ঘোষ, শুভেন্দু অধিকারী এবং সুকান্ত মজুমদার। —ফাইল চিত্র।
বিজেপির দ্বিতীয় প্রার্থিতালিকা ঘোষণার আগে শীর্ষ নেতৃত্বের জরুরি তলব শুভেন্দু অধিকারী এবং সুকান্ত মজুমদারকে। রবিবার রাতেই কলকাতা থেকে দিল্লি চলে যাচ্ছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু। রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত অবশ্য সোমবার যাবেন বলে খবর। বিজেপি সূত্রে জানা যাচ্ছে, সোমবার বাংলার বিজেপির শীর্ষনেতারা দিল্লি পৌঁছলে দফায় দফায় বৈঠক করতে পারেন দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা এবং অন্যান্য শীর্ষনেতা। এ জন্য বাংলা থেকে আরও দুই নেতাকে দিল্লি তলব করেছে বিজেপি। সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তী এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) সতীশ ধোঁদ। তাঁরা রবিবারই রাজধানী রওনা হচ্ছেন। সোমবার থেকে বিজেপির কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিটির বৈঠকে উপস্থিত থাকার কথা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের। ওই বৈঠকের পর দেশের বাকি আসনগুলিতেও প্রার্থিতালিকা চূড়ান্ত করে ফেলবে বিজেপি। মঙ্গলবারই ঘোষণা হতে পারে সেই পূর্ণ তালিকা। আর তার আগে জল্পনা শুরু হয়েছে রাজ্য বিজেপির অন্দরে।
শনিবার লোকসভা ভোটের নির্ঘণ্ট প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। সাত দফার মধ্যে প্রথম দুই দফায় বাংলার যে ছয় আসনে ভোট রয়েছে, তার মধ্যে তিনটি আসনে এখনও বিজেপির প্রার্থী ঘোষণা হয়নি। অন্য দিকে, তৃণমূল জোরকদমে প্রচার শুরু করে দিয়েছে দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি এবং রায়গঞ্জে। তবে বিজেপি কেন তাদের গত বার জেতা ওই তিন আসনে এখনও তাদের প্রার্থী ঘোষণা করেনি, তার কারণ জানা যায়নি।
দার্জিলিং আসনটি নিয়ে রাজু বিস্তা ও প্রাক্তন বিদেশসচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলার মধ্যে নীরব টানাপড়েনের প্রসঙ্গ তুলেছেন অনেকে। বিদায়ী সাংসদ রাজু এ বারও দার্জিলিং থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন কি না, তা নিয়ে রাজ্য বিজেপির অন্দরে প্রশ্ন রয়েছে। অন্য দিকে, ২০১৯ সালের লোকসভায় জেতা রায়গঞ্জও বিজেপির চোখে ‘কঠিন’ আসন। বিজেপি বিধায়ক কৃষ্ণ কল্যাণী এ বার তৃণমূলের টিকিটে লোকসভায় লড়ছেন। তাতে বিজেপি কিছুটা চাপেই রয়েছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দেবশ্রী চৌধুরী ওই আসন থেকেই আবার প্রার্থী হবেন কি না, এ নিয়ে জল্পনা চলছে। জলপাইগুড়ি আসনও তাই। গত বার জয়ী হওয়া জয়ন্ত রায়কে স্থানীয় নেতৃত্ব এবং কর্মীরা প্রার্থী হিসাবে চান। কিন্তু সেখানে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব কোনও বদল আনতে চাইছেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। যেমন, আলিপুরদুয়ার আসনে জন বার্লাকে এ বার টিকিট না দিয়ে বিজেপি প্রার্থী করেছে মনোজ টিগ্গাকে। এখন বার্লা অন্য কোন আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বা আদৌ তাঁকে প্রার্থী করা হচ্ছে কি না, তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। শনিবার সন্ধ্যাতেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বার্লা বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডার সঙ্গে দেখা করেছেন।
দক্ষিণবঙ্গেও ‘জটিলতা’ রয়েছে। মেদিনীপুর আসনের জন্য দিলীপ ঘোষের নাম এখনও ঘোষণা করা হয়নি। বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতিকে ওই আসন থেকে আবার প্রার্থী করা হবে কি না, তাই নিয়ে নব্য এবং আদি বিজেপির মধ্যে দ্বন্দ্ব অব্যাহত। দিলীপ নিজে টিকিট পাওয়ার ব্যাপারে ১০০ শতাংশ আত্মবিশ্বাসী। ইতিমধ্যে মেদিনীপুর থেকে জুনকে ২ লক্ষ ভোটে হারানোর হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন। দিলীপের ঘনিষ্ঠ সূত্রেও জানা যাচ্ছে, তিনি ওই আসন থেকেই লড়তে চান। যদিও বিজেপিরই আর একটি সূত্র বলছে, মেদিনীপুর আসনের জন্য ভারতী ঘোষকে নিয়েও আলোচনা চলছে। অনেকে আবার বলছেন, বর্ধমান-দুর্গাপুর আসন থেকে লড়তে পারেন ভারতী। সে ক্ষেত্রে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুরেন্দ্র অহলুওয়ালিয়া কোথায় টিকিট পাবেন, তা নিয়ে আলোচনা চলছে। আসানসোল আসনে প্রার্থী ঘোষণার পরেও ভোজপুরি শিল্পী পবন সিংহ প্রার্থিপদ প্রত্যাহার করে নেওয়ায় গত লোকসভা ভোটে বিজেপির জেতা আসনে কাকে প্রার্থী করা হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
উত্তর কলকাতা থেকে মোটামুটি নিশ্চিত যে সদ্য তৃণমূলত্যাগী তাপস রায়ই বিজেপির প্রার্থী হচ্ছেন। দক্ষিণ কলকাতার প্রার্থী এখনও ঠিক হয়নি। নদিয়ার কৃষ্ণনগর আসনটি তাদের ‘সহজ আসন’ বলে মনে করে বিজেপি। কিন্তু সেখানেও এখনও প্রার্থী ঘোষণা করেনি তারা। একই রকম ভাবে শ্রীরামপুর আসনে প্রার্থী কে হবেন, তা নিয়ে বিজেপিতে আলোচনা চলছে।
রাজ্য বিজেপির একটি সূত্রে খবর, চারটি আসন নিয়ে তাদের ‘চিন্তা’। কৃষ্ণনগর, মেদিনীপুর, আসানসোল এবং ডায়মন্ড হারবার। তৃণমূল সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে বিজেপির কয়েক জন ‘চেনা মুখ’কে প্রার্থী করার প্রস্তাব দিলেও তাঁরা রাজি হননি। ওই কেন্দ্রের প্রার্থী হিসাবে মোট চারটি নাম নিয়ে এখন আলোচনা চলছে।
’২১ সালের বিধানসভা ভোটে টিকিট না পেয়ে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন সাতগাছিয়ার তৎকালীন বিধায়ক সোনালি গুহ। কিন্তু বিজেপিও তাঁকে প্রার্থী করেনি। পরবর্তী কালে পদ্মশিবিরের সঙ্গে তার দূরত্ব রচনা হলেও সম্প্রতি আবার তিনি বিজেপিতে ‘সক্রিয়’ হয়েছেন। তাঁকে কি বিজেপি প্রার্থী করবে? তবে ‘আদি’ বিজেপির নেতারা দলের এক জন পুরনো মুখের নামই প্রস্তাব করেছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy