প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।
কংগ্রেস হিন্দুদের সম্পত্তি, মঙ্গলসূত্র থেকে পোষা মহিষ কেড়ে নিয়ে মুসলমানদের মধ্যে বিলি করে দিতে চাইছে বলে এত দিন আতঙ্ক তৈরির চেষ্টা করছিলেন নরেন্দ্র মোদী। এ বার প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক উপদেষ্টা পরিষদের রিপোর্ট তুলে ধরে বিজেপি মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ে ফের ‘হিন্দু খতরে মে হ্যায়’ মন্ত্রে প্রচারে নামল।
প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক উপদেষ্টা পরিষদের তৈরি একটি সাম্প্রতিক গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, ১৯৫০ থেকে ২০১৫-র মধ্যে ভারতের জনসংখ্যায় হিন্দুদের ভাগ ৭.৮ শতাংশ কমেছে। উল্টো দিকে মুসলিমদের জনসংখ্যায় ভাগ ৪৩.১৫ শতাংশ বেড়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এখনও এ নিয়ে মুখ না খুললেও আজ বিজেপি নেতারা মুসলিমদের ‘জনসংখ্যা বৃদ্ধি’ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এ জন্য কংগ্রেসের সংখ্যালঘু তোষণের রাজনীতিকেই দায়ী করেছে। কংগ্রেস নেতৃত্ব মনে করছেন, নরেন্দ্র মোদীর হাতে মেরুকরণের অস্ত্র তুলে দিতেই প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক উপদেষ্টা পরিষদকে দিয়ে এই রিপোর্ট তৈরি করানো হয়েছে। এত দিন মোদী কংগ্রেস হিন্দুদের সম্পত্তি মুসলমানদের মধ্যে বিলি করে দিতে চায় বলে অসত্য অভিযোগ তুলছিলেন। দলিত, আদিবাসী, ওবিসিদের সংরক্ষণ কংগ্রেস মুসলিমদের দিয়ে দেবে বলে প্রচার করছিলেন। কারণ মোদীর কাছে কংগ্রেসের জাতগণনা ও ওবিসিদের জনসংখ্যায় ভাগ অনুযায়ী সংরক্ষণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতির কোনও জবাব ছিল না। এ বার মোদী মুসলিমদের জনসংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ে প্রচারে নামবেন। কারণ প্রথম তিন দফার ভোটগ্রহণের পরে ‘গ্রাউন্ড রিপোর্ট’ দেখে তিনি আতঙ্কিত।
অসরকারি সংগঠন পপুলেশন ফাউন্ডেশন অব ইন্ডিয়া বিবৃতি দিয়ে বলেছে, সরকারি জনগণনার রিপোর্টই বলছে, গত তিন দশক ধরে মুসলিমদের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমেছে। মুসলিমদের মধ্যে জন্মের হার সব থেকে বেশি কমেছে। বাস্তবে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারের সঙ্গে ধর্মের কোনও সম্পর্ক নেই। সব ধর্মের মানুষের মধ্যেই জন্মের হার কমছে। অকারণ বিপদের আশঙ্কা ছড়ানোর জন্য এই রিপোর্ট। বাস্তবে হিন্দুদের থেকে অনেক বেশি হারে মুসলিমদের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমছে।
বিজেপি নেতারা এ নিয়ে মাঠে নেমে পড়লেও কংগ্রেস আজ এই নিয়ে বিতর্কে জড়াতে চায়নি। প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরাকে রায়বরেলীতে সাংবাদিকরা এ নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি পাল্টা জানতে চেয়েছেন, এই প্রশ্ন আড়াল থেকে কে করতে বলেছে? সিপিআইয়ের সাধারণ সম্পাদক ডি রাজা প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘কেন প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক উপদেষ্টা পরিষদ লোকসভা ভোটের মধ্যে এই রিপোর্ট তৈরি করল? প্রধানমন্ত্রী আগে থেকেই ধর্মের নামে মেরুকরণ করছেন। এখন বোঝা যাচ্ছে, মেরুকরণের আরও চেষ্টা হবে।’’
বিজেপি মুখপাত্র সুধাংশু ত্রিবেদী আজ বলেছেন, ১৯৫১-র জনগণনায় হিন্দুদের জনসংখ্যায় ভাগ ছিল ৮৮ শতাংশ। জনসংখ্যায় মুসলিমদের ভাগ ছিল ৯.৫ শতাংশ। ২০১১-র জনগণনায় হিন্দুদের জনসংখ্যায় ভাগ কমে ৭৯.৮ শতাংশ হয়েছে। মুসলিমদের জনসংখ্যায় ভাগ বেড়ে ১৪.৫ শতাংশ হয়েছে। সিপিআই নেতা ডি রাজা প্রশ্ন তুলেছেন, ২০২১-এ যে জনগণনা হওয়ার কথা ছিল, মোদী সরকার তা এখনও করায়নি কেন?
কংগ্রেসের মতে, জনগণনা হলে বিজেপির যাবতীয় ধাপ্পা ফাঁস হয়ে যাবে বলেই ২০২১-এর তিন বছর পরেও অমিত শাহের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সে পথে হাঁটেনি। এখন ভোটের মরসুমে নরেন্দ্র মোদী কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে মুসলিমরা জনসংখ্যায় হিন্দুদের ছাপিয়ে যাবেন বলে আতঙ্ক তৈরির পরিকল্পনা করছেন। ঠিক যে ভাবে মোদী বলছেন, কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে রামমন্দিরে ফের ‘বাবরি তালা’ ঝুলিয়ে দেবে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy