(বাঁ দিকে) অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (বাঁ দিকে) এবং হিরণ চট্টোপাধ্যায় (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
ঘাটালে দেবের সমর্থনে প্রচার করতে গিয়ে ওই কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী হিরণ চট্টোপাধ্যায়কে কটাক্ষ করেছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বার তৃণমূল সেনাপতির সেই কটাক্ষের জবাব দিলেন হিরণ। গত ৭ এপ্রিল ঘাটালে দাঁড়িয়ে অভিষেক দাবি করেছিলেন, কয়েক মাস আগেও তৃণমূলে আসতে চেয়েছিলেন হিরণ। মঙ্গলবার সকালে হিরণকে এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সম্পাদকের ওই দাবি খারিজ করে দেন তিনি। পাল্টা দাবি করেন, অভিষেকই তাঁকে বার বার ফোন করে ডেকেছিলেন। তাই তিনি অভিষেকের দফতরে গিয়েছিলেন। দলকে পুরো বিষয়টি জানিয়ে তিনি গিয়েছিলেন বলেও দাবি করেন হিরণ। এই বিষয়ে তৃণমূলের বক্তব্য, তাদের অন্য কোনও দল থেকে লোক আনার প্রয়োজন পড়ে না। প্রাক্তন রাজ্যসভার সাংসদ তথা তৃণমূল মুখপাত্র শান্তনু সেনের কথায়, “হিরণ দলে যোগ দিয়ে খড়্গপুর পুরসভার চেয়ারম্যান হতে চেয়েছিলেন। আমরা তা মানিনি।”
সম্প্রতি অভিষেক হুঁশিয়ারির সুরে জানিয়েছিলেন, প্রয়োজনে আরও একটি সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ্যে আনবেন তিনি। সেটা হল হিরণের তাঁর ক্যামাক স্ট্রিটের অফিসে যাওয়ার দৃশ্য। এই প্রসঙ্গে হিরণের জবাব, “উনি বার বার আমাকে ফোন করে ডেকেছেন। আমি দলের কাছে জানতে চাই, ‘আমি কী করব?’ শুভেন্দুবাবু (অধিকারী) বলেন, ‘হ্যাঁ, তুমি যাও। গিয়ে শোনো কী বলছে তোমাকে।’’’
ঘাটালে হিরণের নাম না করেই অভিষেক বলেছিলেন, ‘‘এখানে যাঁকে বিজেপি দাঁড় করিয়েছে, তিনি ছ’মাস-আট মাস আগে আমার দফতরে এসেছিলেন। তৃণমূলে ঢোকার জন্য এসেছিলেন। আমি দরজা বন্ধ করে দিয়েছি। ঢুকতে দিইনি। তারও সিসিটিভি ফুটেজ আছে। তাঁকেও বলব, ‘মিথ্যা কথা বলো, কিন্তু বেশি বলতে নেই।’’’ অভিষেকের সিসিটিভি হুঁশিয়ারির পাল্টা ‘প্রমাণ’ হাজির করানোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ঘাটালের বিজেপি প্রার্থী। হিরণের কথায়, “উনি (অভিষেক) যে দিন সিসিটিভির ফুটেজ দেবেন, আমি সে দিন সমস্ত প্রমাণ দেব। উনি কত বার আমায় ফোন করেছেন, কেন আমায় ডাকছিলেন, কী কী বলেছেন, সমস্ত রেকর্ড আমার কাছেও আছে।” তার পরই অভিষেককে কটাক্ষ করে হিরণের সংযোজন, “আমাদের পার্টির কিছু নির্দিষ্ট কৌশল আছে। আমরা কিছু জিনিস মেনে চলি। আমরা পাবলিসিটির জন্য ভুলভাল কথা বলি না।”
শুভেন্দুর বিজেপিতে যাওয়া রুখতে অভিষেক ‘হাতেপায়ে ধরেছিলেন’ বলেও দাবি করে হিরণ বলেন, “২০২০ সালের ১ ডিসেম্বর উনি প্রশান্ত কিশোরের সঙ্গে গিয়েছিলেন শুভেন্দুদার কাছে। হাতেপায়ে ধরেছিলেন। তার সিসিটিভি ফুটেজ উনি প্রকাশ্যে এনেছেন?”
২০২৩ সালের প্রথম দিকে হিরণের বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে ফেরার জল্পনা জোরদার হয়েছিল। সে সময় সমাজমাধ্যমে একটি ছবিও ছড়িয়ে পড়ে। তৃণমূল দাবি করে, খড়্গপুরের বিজেপি বিধায়ক হিরণ তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের ক্যামাক স্ট্রিটের অফিসে যান। ওই নিয়ে যখন ‘বিতর্ক’ তুঙ্গে, তখন তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুরের কোঅর্ডিনেটর অজিত মাইতি দাবি করেন, তাঁর সঙ্গেই অভিষেকের দফতরে গিয়েছিলেন খড়্গপুর সদরের বিজেপি বিধায়ক হিরণ। তাই যে ছবি সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, তা ‘১০০ শতাংশ সত্যি’ বলে দাবি করেন তিনি। মঙ্গলবার এই ‘ভাইরাল’ ছবি নিয়ে হিরণকে প্রশ্ন করা হলে সরাসরি কোনও জবাব দেননি ঘাটালের পদ্ম-প্রার্থী। তবে জানান, অভিষেক সিসিটিভি ফুটেজ দিলেই তিনি সব ‘প্রমাণ’ দিয়ে দেবেন। তখনই সব স্পষ্ট হয়ে যাবে বলে দাবি করেন তিনি।
হিরণ তৃণমূলে যোগ দিতে পারেন, এমন জল্পনার মধ্যেই বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন হিরণ। তার পর সাংবাদিক বৈঠক করে জানান, তিনি বিজেপিতে ছিলেন, বিজেপিতেই থাকবেন। তাঁর যে ছবি সমাজমাধ্যমে ঘুরছে, তা ‘বিকৃত’ করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন হিরণ। যা নিয়ে অভিষেক এক বার কটাক্ষ করে বলেছিলেন, ‘‘আমার ছবি বিকৃত করলে তো আগে পুলিশের কাছে যেতাম।’’
বস্তুত, হিরণের সঙ্গে বিজেপির একাংশের সম্পর্ক ‘মধুর’ নয় বলে তাঁর দলেরই একাংশ দাবি করেন। মেদিনীপুরের বিদায়ী সাংসদ দিলীপ ঘোষের সঙ্গে খড়্গপুরের বিধায়ক হিরণের ‘সুসম্পর্কের’ কথাও সুবিদিত। অভিষেক দেবের প্রচারে গিয়ে সেই বিতর্কই উস্কে দিতে চেয়েছিলেন বলে মনে করেন কেউ কেউ। মঙ্গলবার তার পাল্টা জবাব দিলেন অভিনেতা-রাজনীতিক হিরণ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy