মহুয়া মৈত্র এবং অমৃতা রায়। ছবি: পিটিআই এবং ফাইল চিত্র।
ভোটের রাজনীতির সঙ্গে এ বার সরাসরি যুক্ত হল মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের নাম। কৃষ্ণনগরে তৃণমূলের মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে বিজেপি প্রার্থী করল রাজবাড়ির কুলবধূ অমৃতা রায়কে। রাজবধূ যে প্রার্থী হতে পারেন, তা নিয়ে গত কয়েক দিন ধরেই জল্পনা ছিল। তাতেই সিলমোহর পড়ল রবিবার।
দিল্লিবাড়ির লড়াইয়ে রবিবার পশ্চিমবঙ্গে ১৯ জন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে বিজেপি। সেই তালিকায় অমৃতার নাম রয়েছে। প্রার্থিতালিকা ঘোষণা হওয়ার পর অমৃতা আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘নদিয়ার ইতিহাসে রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের অবদান সকলে জানেন। ভারতে অন্তর্ভুক্তির ব্যাপারে কৃষ্ণনগর রাজপরিবারের ভূমিকা আজও সবাই মনে রেখেছেন। রাজবধূ নয়, সাধারণ জনতার কণ্ঠ হওয়ার জন্যই ভোটের ময়দানে আসা। আশা করি, মানুষ দু’হাত তুলে আশীর্বাদ করবেন।’’
গত কয়েক দিন ধরেই শোনা যাচ্ছিল, কৃষ্ণনগরে মহুয়ার বিরুদ্ধে অমৃতাকে প্রার্থী করতে পারে বিজেপি। সেই জল্পনার আবহে গত সপ্তাহে বুধবার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর হাত ধরে বিজেপিতে যোগ দেন রাজবধূ। তাতেই কার্যত স্পষ্ট হয়ে যায় যে, তাঁকেই এ বার প্রার্থী করতে চলেছে পদ্ম-শিবির। বিজেপি সূত্রে খবর, অমৃতাকে প্রার্থী করার বিষয়ে জেলা নেতৃত্বই প্রথম আগ্রহ দেখান। সেই মতো দলের তরফে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা শুরু হয়। বেশ কয়েক দফা কথাবার্তার পর প্রার্থী হতে রাজি হন অমৃতা।
কিন্তু কোন অঙ্কে রাজবধূকে টিকিট দিল বিজেপি? দলীয় সূত্রে খবর, গত লোকসভা নির্বাচনে মহুয়ার জয়ের নেপথ্যে ছিল চাপড়া, পলাশিপাড়া ও কালীগঞ্জ বিধানসভা। ওই তিনটি বিধানসভা থেকে বিপুল ভোট পেয়েছিলেন মহুয়া। গত পাঁচ বছরে কালীগঞ্জ বিধানসভায় বিজেপির সংগঠন অনেক মজবুত হয়েছে। পলাশিপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্য দুর্নীতির দায়ে জেলবন্দি হওয়ায় ওই বিধানসভায় অনেকটাই অগোছালো অবস্থায় শাসকদল। একমাত্র কাঁটা চাপড়া বিধানসভা। সেখানে এত দিন তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব থাকলেও ভোটের মুখে দলত্যাগী নেতাদের আবার দলে এনে বড় ব্যবধানে জিততে চাইছে তৃণমূল। তাই বিজেপিও পাল্টা চাইছে কৃষ্ণনগর উত্তর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে বড় ব্যবধানে জিততে। কৃষ্ণনগর উত্তর বিজেপির শক্ত ঘাঁটি বলেই পরিচিত। পদ্ম-শিবির সূত্রে খবর, সেখানে ভোটের ব্যবধান বৃদ্ধি করতে ‘রানিমা’র মতো এক জন স্থানীয়, প্রভাবশালী ও পরিচিত মুখকে প্রার্থী করার কথা ভাবা হয়।
গত ১০ মার্চ রাজ্যের ৪২টি আসনেই প্রার্থী ঘোষণা করে দিয়েছে তৃণমূল। কৃষ্ণনগরে সিপিএমও প্রাক্তন বিধায়ক এস এম সাদিকে প্রার্থী করে প্রচারে নেমে গিয়েছে। বিজেপি এত দিন প্রার্থীর নাম ঘোষণা না করায় কর্মীরা কিঞ্চিৎ হতোদ্যম হয়ে পড়েছিলেন। কৃষ্ণনগরের প্রাক্তন সাংসদ, প্রয়াত সত্যব্রত মুখোপাধ্যায় ওরফে জলুবাবুর ছেলে সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়কে প্রার্থী করার জন্য একাংশ চেষ্টা চালিয়েছিলেন। বিজেপি সূত্রের দাবি, তিনি রাজি হননি। সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় ঝুলন গোস্বামী, সোমা বিশ্বাসের মতো জাতীয় স্তরের ক্রীড়াবিদের নাম নিয়েও পর্যালোচনা চলছিল। এক জন চলচ্চিত্র অভিনেতাও এই কেন্দ্রে প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। এ ছাড়া তালিকায় বিজেপির কিসান মোর্চার রাজ্য সভাপতি মহাদেব সরকার থেকে শুরু করে আরএসএস নেতা রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামও ছিল বলে বিজেপির অন্দরের খবর। প্রার্থী হওয়ার জন্য ৩০টিরও বেশি ‘বায়োডেটা’ জমা পড়েছিল।
বিজেপি সূত্রে খবর, হয় প্রস্তাবিত প্রার্থীর নাম রাজ্য বা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তেমন পছন্দ হচ্ছিল না বা তাঁদের পছন্দের ব্যক্তিত্ব প্রার্থী হতে রাজি হচ্ছিলেন না। তাঁরা এই কেন্দ্রে জন্য এক জন ‘নামী’ প্রার্থী দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। জেলা বিজেপিও এমন এক জনকে প্রার্থী হিসাবে চাইছিল, যাঁকে ভোটারদের কাছে নতুন করে পরিচয় করাতে হবে না। এক ডাকে সবাই চিনবেন। সেই হিসাবেই অমৃতা এবং ইদানীং মুম্বই-নিবাসী এক জনপ্রিয় গায়কের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। গায়ক রাজি হননি। তার পরেই অমৃতার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। এবং তিনি রাজিও হয়ে যান। কেন প্রার্থী হিসাবে তাঁর নাম ভাবা হল, তা জবাব দিতে গিয়ে জেলায় বিজেপির এক নেতা বলেন, ‘‘অমৃতা রায় রাজপরিবারের বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে সক্রিয় ভাবে জনসংযোগ করেন। এ ছাড়াও জগদ্ধাত্রী পুজো, দুর্গাপুজা ও রাজবাড়ির বিভিন্ন অনুষ্ঠানের রাশ এখন তাঁর হাতে। ভোটারদের মধ্যে আবেগ রয়েছে রাজপরিবার নিয়ে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy