কাজল শেখ এবং অনুব্রত মণ্ডল। —ফাইল ছবি।
কেউ তাঁর নাম করছেন ‘ভয়ে’, কেউ বা ‘ভক্তিতে’। ভোট আসতেই মঙ্গলকোট ও কেতুগ্রামে চর্চায় ফিরেছেন বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। গরু পাচার মামলায় সিবিআইয়ের হাতে ধৃত অনুব্রত এখন বন্দি সুদূর তিহাড় জেলে। তবে, না থেকেও তিনি প্রবল ভাবে হাজির বীরভূম লাগোয়া পূর্ব বর্ধমানের এই দুই বিধানসভা এলাকায়।
মঙ্গলকোট এবং কেতুগ্রামে দলীয় সংগঠন অনুব্রত ওরফে কেষ্ট সাজিয়েছিলেন নিজের মতো করে। ভোট পরিচালনাও করতেন তাঁর নিজস্ব কায়দায়। বিরোধীদের মোকাবিলা কোন পথে, প্রশ্ন এলেই তাঁর মুখে শোনা যেত ‘গুড় বাতাসা’, ‘নকুলদানা’, ‘চড়াম চড়াম ঢাক বাজানোর’ মতো শব্দবন্ধ। বঙ্গ রাজনীতিতে যা সন্ত্রাসেরই বার্তাবাহক বলে দাবি বিরোধীদের। সেই অনুব্রতের অনুপস্থিতি ভোটের আগে দলীয় কর্মীদের কাছে ধাক্কা বলে মনে করছেন কেতুগ্রাম ও মঙ্গলকোটের তৃণমূল নেতৃত্বের অনেকে। যদিও বিরোধীদের আশঙ্কা, ভোটের দিন যত এগিয়ে আসবে, অনুব্রতের ‘দেখানো পথে’ হাঁটবেন তাঁর অনুগামীরা।
কেতুগ্রামে তৃণমূলের প্রচারে আসছেন স্থানীয় বিধায়ক শেখ সাহানেওয়াজের ভাই, বীরভূমের জেলা সভাধিপতি কাজল শেখ। তিনি তৃণমূলের অন্দরে ‘কেষ্ট বিরোধী’ বলে পরিচিত। মঙ্গলবার পথসভা করে কর্মীদের কাছে কেতুগ্রাম থেকে অন্তত ৬০ হাজার ভোটের ‘লিড’ চেয়েছেন কাজল। বিরোধীদের আশঙ্কা, এই নির্দেশ পালনে ‘সন্ত্রাসের’ পথ ধরবে তৃণমূল। যদিও এমন আশঙ্কা ভিত্তিহীন বলে আগেই জানিয়েছেন কাজল।
তৃণমূল সূত্রের খবর, বোলপুর কেন্দ্রের অন্তর্গত এই দুই বিধানসভার মধ্যে কেতুগ্রামে দলের পর্যবেক্ষক করা হয়েছে কাজলকে। মঙ্গলকোটে ভোট পরিচালনার দায়িত্বে স্থানীয় বিধায়ক অপূর্ব চৌধুরী। দুই এলাকার নেতারাই ভোটের কাজে অনুব্রতের কথা স্মরণ করািচ্ছেন, তাতে কাজও হচ্ছে বলে দাবি তৃণমূল সূত্রের। মঙ্গলকোটের তৃণমূল কর্মী মুন্সি রেজাউলের কথায়, “ভোটের আগে কেষ্টদা নানা কথায় কর্মীদের উৎসাহিত করতেন। জেলে বন্দি থাকলেও তিনি দলের কাছে আগের মতোই গুরুত্ব পান। তাই তাঁর পছন্দের অসিত মালকে ফের প্রার্থী করেছে দল। আমাদের মতো কর্মীরা উৎসাহের সঙ্গে কাজ করছে।’’ কেতুগ্রামের লাল্টু বর্মন বলেন, ‘‘মঙ্গলকোট ও কেতুগ্রামে কেষ্টদার হাতে গড়া ভোট-কৌশল অক্ষুণ্ণ রয়েছে। ভোটের দিন কর্মীরা মানুষকে নানা ভাবে সাহায্য করে। তার ভাল ফল পাওয়া যায়।’’
কেতুগ্রামের বিধায়ক শেখ সাহানেওয়াজের অবশ্য দাবি, ‘‘কেষ্টদার নানা কথার অপব্যাখা হয়েছে। তিনি আমাদের এলাকায় গোড়া থেকেই দলকে শক্ত ভিতের উপরে দাঁড় করিয়েছেন।’’ মঙ্গলকোটের বিধায়ক অপূর্ব বলছেন, “আমরা কেষ্টদার দেখানো পথে রাজনীতি করেই এলাকায় প্রচুর উন্নয়ন করেছি। বিরোধীদের জবাব দিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নামটাই যথেষ্ট।’’
কাটোয়া মহকুমা কংগ্রেসের সভাপতি জগদীশ দত্তের মন্তব্য, ‘‘সবাই জানে, কেতুগ্রাম ও মঙ্গলকোটে বিরোধীদের আটকাতে প্রশাসনকে কাজে লাগায় তৃণমূল। ওরা কেষ্ট মণ্ডলের দেখানো পথেই হাঁটবে।’’ বিজেপির জেলা (কাটোয়া) সভাপতি গোপাল চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “সন্ত্রাসের অপর নাম অনুব্রত মণ্ডল। তার সাঙ্গপাঙ্গেরা এ বারও ভোটে গুড়-বাতাসা, নকুলদানা বা চড়াম চড়াম ঢাক বাজাতে আসতে পারে।’’ তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘‘কোথও তেমন কিছু ঘটলে প্রতিরোধ হবে।’’ কাটোয়ার প্রবীণ সিপিএম নেতা অঞ্চন চট্টোপাধ্যায়ের মন্তব্য, ‘‘গোটা রাজ্যের মতো এই জেলাতেও তৃণমূল মানুষের ভোটাধিকার কেড়েছে। কেন্দ্রেও বিজেপি একই দোষে দুষ্ট। আমাদের বিশ্বাস, গণতন্ত্র রক্ষায় মানুষ আমাদেরই ভোট দেবেন। ভোট লুট করতে এলে প্রতিরোধ হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy