Advertisement
E-Paper

আলাপ থেকে ঝালা, শুরু থেকে লোকসভা ভোটের শেষ পর্যন্ত আবহসঙ্গীত রচনা করলেন সুরসাধক

ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা থেকে শুরু করে ফলপ্রকাশ, সরকার গঠন— যে কোনও বিশাল বাজেটের ছবিকেও হার মানাবে।

Bengali music composer Joy Sarkar writes on the ongoing Lok Sabha Election 2024

জয় সরকার

শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০২৪ ১৮:১১
Share
Save

এ বারের ভোটপর্ব বড় দীর্ঘ। সেই ১৬ মার্চ দিনক্ষণ ঘোষণা হয়েছে। সাত পর্বে ভোটগ্রহণ। গণনা ৪ জুন। তার পরে সরকার গঠন। ১৯৯৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত পাঁচ বছর অন্তর লোকসভা নির্বাচন হচ্ছে। তার আগের সময়টা বড় ওলটপালট! আমার মনে হয়, প্রতি পাঁচ বছর অন্তর এত বড় ‘শো’ আমাদের দেশে আর হয় না। ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা থেকে শুরু করে ফলপ্রকাশ, সরকার গঠন— যে কোনও বিশাল বাজেটের ছবিকেও হার মানাবে। পরিকল্পনা, আয়োজন, জাঁকজমক, বিনোদন হরেক চরিত্রের উপস্থিতি, উত্তেজনা, বোঝাপড়া, আপস, গলাগলি, গালাগালি, ষড়যন্ত্র, মারামারি, পরিশ্রম— কী নেই তার মধ্যে! সর্বোপরি এই মহোৎসবের জন্য যা বাজেট বরাদ্দ থাকে, তা গত পাঁচ বছরের সমস্ত হিন্দি ছবি তো বটেই, কলকাতার সব পুজো কমিটিকে একত্রিত করে গপ করে গিলে খেয়ে ফেলতে পারে। এ সব ভাবতে ভাবতেই মনের সঙ্গীত পরিচালক জেগে উঠল। কয়েক দফা ভোট হয়ে গিয়েছে ঠিকই। তবে আমার শহরে ভোট আগামী ১ জুন। একেবারে শেষ পর্বে। গোটা ভোটপর্বটাকে যদি একটা সিনেমা হিসাবে দেখি, তা হলে তার আবহসঙ্গীত কেমন হতে পারে?

দিনক্ষণ ঘোষণা: শুরুয়াত তানপুরায়

সিনেমার শুরু বলে যদি দিনক্ষণ ঘোষণাই ধরি, তা হলে প্রথমেই থাকবে তানপুরার আওয়াজ। ঠিক যেমন শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের শুরুতে শোনা যায়। দেশ, তার সংবিধান এবং নাগরিকদের প্রতি সম্মান এবং শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রচলিত পদ্ধতিতে এক ভাবগম্ভীর পরিবেশে হোক শুরুয়াত।

রাজনৈতিক তৎপরতা: মোৎজ়ার্টের সিম্ফনি

ধীরে ধীরে তুঙ্গে উঠতে শুরু করবে রাজনীতিবিদদের তৎপরতা। কারা ভোটে দাঁড়ানোর টিকিট পাবেন, সেই প্রতিযোগিতাও বটে। কেউ প্রথম সারিতে আসবেন। কেউ আসতে পারবেন না। কেউ অভিমানে অন্য শিবিরে নাম লেখাবেন। কেউ বা সমসাময়িক রাজনীতির ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিকতা হারাবেন। এই আবহ হিসেবে আমি বেছে নেব মোৎজ়ার্টের ৪০ নম্বর সিম্ফনির ‘ফোর্থ মুভমেন্ট’ অর্থাৎ ‘ফিনালে’-কে। দ্রুতগতির এই মিউজ়িকের সঙ্গে এই পর্বের দৃশ্যাবলির প্লে-ব্যাক স্পিডও বাড়িয়ে দেব। দুটো মিলেমিশে একাকার হয়ে যাবে।

প্রার্থিতালিকা প্রকাশ: দেশজ বাদ্যযন্ত্রে অর্কেস্ট্রা

রাজনীতির ময়দানে এর পরেই দলগুলো ঘোষণা করবে প্রার্থিতালিকা। এই পর্বে মূল চরিত্রদের সঙ্গে পরিচয় হয় সাধারণ মানুষের। অনেকটা সঞ্জয় লীলা ভন্সালীর সিনেমার মতো জাঁকজমক এবং আড়ম্বরপূর্ণ পরিবেশ। আবহটা শুরু হবে শিঙা বাজিয়ে। একদম দেশীয় ভাবে। তার পরে একে একে বেজে উঠবে কাড়া-নাকাড়া, তবলা, ঢোল, পাখোয়াজ, মৃদঙ্গম, ধামসা, মাদল, খোল, করতাল-সহ নানা রকমের তালবাদ্য। সুরের যন্ত্রের মধ্যে থাকবে সানাই, সেতার, সরোদ, বাঁশি, সন্তুর, এস্রাজ, হারমোনিয়াম, সারেঙ্গি, বেহালা, ভিয়োলা এবং চেলো। সব মিলিয়ে বিশাল অর্কেস্ট্রা। সব চেয়ে বৈচিত্রপূর্ণ সঙ্গীতের প্রয়োগ হবে এখানে। সঙ্গে থাকবেন কোরাস শিল্পীর দল। তাঁরা নানা রকমের সরগম এবং তারানা গেয়ে এই অনুষ্ঠানকে নিয়ে যাবেন উচ্চতর পর্যায়ে।

প্রচার পর্ব: তবলা রোলের সঙ্গে ইলেক্ট্রনিক মিউজিকের ফিউশন

প্রচারপর্বে রোদে পুড়ে, জলে ভিজে অক্লান্ত পরিশ্রম করে মাঠে, ময়দানে, অলিতে-গলিতে দৌড়ে বেড়ান প্রার্থী এবং দলীয় কর্মীরা। তার সঙ্গে সংবাদমাধ্যম— টেলিভিশন, সংবাদপত্র, অনলাইন। খবর সংগ্রহের জন্য প্রাণপাত করবে তারা। সমাজমাধ্যমও সক্রিয় হবে প্রবল ভাবে। আশির দশকের শেষ দিকে দূরদর্শনে ‘দ্য ওয়ার্ল্ড দিস উইক’ শীর্ষক একটি অনুষ্ঠান অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়েছিল। সারা সপ্তাহের কিছু বাছাই করা খবর দিয়ে আধ ঘণ্টার এই ক্যাপসুলটি তৈরি হত। তার সঙ্গে ছিল একটা দারুণ ‘সিগনেচার টিউন’। যার সুরকার ছিলেন লয় মেনডোনসা (শঙ্কর-এহসান-লয় ত্রয়ীর অন্যতম)। তবলা (বাজিয়েছিলেন রফিউদ্দিন সাবরি) এবং ইলেক্ট্রনিক মিউজ়িকের এই অসামান্য ‘ফিউশন’ এখনও যে কোনও নিউজ় চ্যানেলের সিগনেচার টিউনের সব চেয়ে বড় অনুপ্রেরণা। আমি সেই রাস্তাতেই হাঁটব। অর্থাৎ, এমন একটা তবলা রোলের সঙ্গে ইলেক্ট্রনিক মিউজ়িকের ফিউশনে তৈরি হবে এই অংশের মূল আবহ। তার সঙ্গে মাঝেমধ্যে (মানাক আর না-মানাক) ঢাক আর ট্রাম্পেট বেজে উঠবে। নিজের ঢাক অথবা ট্রাম্পেট বাজানোর সময় তো এটাই।

ভোটের দিন: ঝাঁপতালে সন্তুর, মেঘ-বৃষ্টিতে মেঘমল্লার

এ বারে সোজা ভোটের দিন। শহরে শোরগোল অনেক কম। ছুটির মেজাজ। দোকানবাজার মোটের উপর বন্ধ। টুক করে ভোট দিয়ে এসে মাংসভাত খেয়ে দিবানিদ্রার লোভ কেউ ছাড়তে পারবেন বলে মনে হয় না। এই মধ্যাহ্নের ঝাঁপবন্ধকর পরিবেশে মধ্যলয় ঝাঁপতালে সন্তুরে কোনও ফুরফুরে গৎ বাজলে বেশ ভাল হয়। গরমকাল বলে আমি রাগ হিসেবে শুদ্ধ সারং বেছে নেব। আর যদি মেঘ করে বৃষ্টি পড়ে— মেঘমল্লার। ভোট চলাকালীন কিছু জায়গায় গন্ডগোল হবে। কিন্তু অহেতুক আবহসঙ্গীত প্রয়োগ করে তার গুরুত্ব বাড়াব না। এমন প্রতি বারেই হয়। আবার ক’দিন পরে আমরা তা ভুলেও যাই। ছুটির মেজাজটাই তো আসল!

ভোটগণনা-ফলপ্রকাশ: তিনতালে ঝালা

অতঃপর ভোটগণনা। ফলপ্রকাশ। সিনেমার ‘ক্লাইম্যাক্স’। মহোৎসব ভেবে নিলে তার ‘গ্র্যান্ড ফিনালে’। বেলা যত বাড়বে, উত্তেজনার পারদ তত চড়বে। পরিস্থিতি যখন তখন রং বদলাবে। আবহে দ্রুত তিনতালে ঝালা বাজবে সকাল থেকেই। তবলার সঙ্গে পালা করে সরোদ এবং সেতার, সঙ্গে পাশ্চাত্য ধ্রুপদীর তারবাদ্য যোগ হলে বিষয়টা আরও ব্যাপকত্ব লাভ করবে। ভৈরবী দিয়ে শুরু করে সময় অনুযায়ী রাগ পাল্টাতে থাকবে ঘণ্টায় ঘণ্টায়। সওয়াল-জবাব, সাথসঙ্গত চলতে থাকবে তবলার সঙ্গে। মোটামুটি যে সময় নাগাদ ফল নির্ধারিত হয়ে যাবে, তখনকার রাগে ভর দিয়েই এক বিশাল চক্রধার তেহাইয়ের সঙ্গে শেষ হবে এই মহাসিনেমার আবহ সঙ্গীত। একমাত্র বেজে চলবে সেই শুরুর তানপুরা। একাকী পবিত্রতা নিয়েই।

(লেখক সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক। মতামত নিজস্ব)

Joy Sarkar Music Composer Lok Sabha Election 2024 Celeb Column

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।