প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেবগৌড়া। ছবি: পিটিআই।
ছেলে লড়ছেন। নাতি লড়ছেন। লড়ছেন জামাই।
আসলে নব্বই বছরের বৃদ্ধ লড়তে নেমেছেন। এ তাঁর অস্তিত্ব রক্ষার শেষ লড়াই। তাঁর নিজের হাতে তৈরি দল জনতা দল (সেকুলার) ওরফে জেডিএস-এর প্রাসঙ্গিকতা টিকিয়ে রাখার অগ্নিপরীক্ষা। শ্বাসকষ্ট। কিডনির অসুখ। হাঁটুতে ব্যথা। এই নিয়েও দিনে চারটি সভা করেছেন। টানা আধা ঘণ্টা বক্তৃতা। প্রতিটি সভার শেষে একটিই কথা বলেছেন—‘নান্নু ওন্ডু হুট্টু হোরাটাগারা’। ‘আমি আজন্ম লড়াকু নির্ভীক যোদ্ধা’। শুনে আবেগতাড়িত হয়ে পড়েছেন হাসনের আখ খেতের চাষি থেকে মাণ্ড্যের কাঠের খেলনার ব্যবসায়ী। এর পরেও বুড়ো মানুষটাকে খালি হাতে ফিরিয়ে দেওয়া যায়?
দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেবগৌড়া আশাবাদী। তাঁকে খালি হাতে ফিরতে হবে না।
শুক্রবার কর্নাটকের ২৮টি লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে ১৪টিতে ভোটগ্রহণ হয়ে গেল। বাকি ১৪টি লোকসভা কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ আগামী ৭ মে। শুক্রবার হাসনে নিজের ভোট দিয়ে একানব্বইতে পা দিতে চলা দেবগৌড়া দাবি করলেন, ‘‘বিজেপি-জেডিএস ১৪টির মধ্যে ১৪টি আসনেই জিতবে।’’
হাসনের হারাধনাহাল্লি গ্রাম জানে, কর্নাটকের লোকসভা ভোট এ বার তাঁর ভূমিপুত্র হারাধনাহাল্লি ডোড্ডেগৌড়া দেবগৌড়া ওরফে এইচ ডি দেবগৌড়ার নিজস্ব লড়াই। গত বছর বিধানসভা ভোটে তাঁর দল কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। কর্নাটকের ভোট লড়াই ক্রমশ বিজেপি বনাম কংগ্রেসের সরাসরি লড়াই হয়ে উঠছে। নিজের প্রাসঙ্গিকতা বজায় রাখতে জেডিএস নরেন্দ্র মোদীর বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়েছে।
কর্নাটকের দুই প্রভাবশালী সম্প্রদায় লিঙ্গায়ত ও ভোক্কালিগা। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বি এস ইয়েদুরাপ্পা ও তাঁর ছেলে, রাজ্য সভাপতি বিজয়েন্দ্রের সুবাদে লিঙ্গায়ত ভোট নিয়ে বিজেপি অনেকটাই নিশ্চিন্ত। ভোক্কালিগা ভোটব্যাঙ্কের জন্য বিজেপি দেবগৌড়া-কুমারস্বামীর সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। কিন্তু প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি, উপমুখ্যমন্ত্রী ডি কে শিবকুমার নিজেও ভোক্কালিগা। ভোক্কালিগা ভোটব্যাঙ্ক কার হাতে থাকবে, তা নিয়ে দুই কুমার—শিবকুমার ও কুমারস্বামী পাঞ্জা কষছেন।
দেবগৌড়া নিশ্চিন্তে বসে থাকতে পারেননি। হাঁটুর ব্যথা নিয়েই মাঠে নেমে পড়েছেন। সকালে ইডলি বা ধোসা খেয়ে বেরিয়ে পড়েছেন। দুপুরে মুড্ডে বা রাগির গোল্লার সঙ্গে সবজি দিয়ে মধ্যাহ্নভোজ। মাঝে মাঝে লস্যি, গরমজল আর তরমুজ। তাঁর জিপের পিছনের গাড়িতে নার্সও থাকছেন। নিজে ভোটে লড়ছেন না ঠিকই। মাণ্ড্য থেকে লড়ছেন তাঁর ছেলে, রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এইচ ডি কুমারস্বামী। হাসন থেকে প্রার্থী তাঁর নাতি প্রাজ্বল রেভন্না। আর গ্রামীণ বেঙ্গালুরু থেকে প্রার্থী হয়েছেন তাঁর জামাই, সি এন মঞ্জুনাথ। কুমারস্বামী সদ্য হৃদযন্ত্রের অস্ত্রোপচার সারিয়ে ফিরছেন। তরুণ প্রাজ্বলের বিরুদ্ধে যৌন কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠেছে। ভিডিয়ো ঘুরছে মোবাইলে। হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ মঞ্জুনাথ সবে রাজনীতিতে নেমেছেন। তিনি অবশ্য লড়ছেন বিজেপির টিকিটে। সবাইকে জেতানোর দায় নব্বই বছরের বৃদ্ধের কাঁধে।
দলটা থাকবে তো? প্রশ্ন তুলছেন কর্নাটকের কংগ্রেস সরকারের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া। জনতা দল ভেঙে ১৯৯৯-এ যখন দেবগৌড়া জনতা দল (সেকুলার) তৈরি করলেন, তখন সিদ্দা ছিলেন দেবগৌড়ার ডান হাত। এখন দেবগৌড়া বিজেপির সঙ্গে হাত মেলানোয় সিদ্দা বলছেন, ‘‘উনি তো দলের নাম থেকে সেকুলার শব্দটা বিসর্জন দিলেন। জামাইকে বিজেপিতে পাঠিয়েছেন। এরপরে ছেলে-পুলে নিয়ে নিজেও যাবেন।’’
বিজেপি সেই আশাই করছে। তামিলনাড়ুতে বিজেপি এডিএমকে-র সঙ্গে এত দিন জোট বেঁধে থেকে এ বার এডিএমকে-রই ভোটব্যাঙ্ক দখল করতে চাইছে। তা বুঝে এডিএমকে বিজেপির সঙ্গ ত্যাগ করেছে। কর্নাটকে জেডিএস-এর ভোটব্যাঙ্ক দখল করতে চায় বিজেপি। বিজেপির রাজ্য নেতাদের ধারণা, অদূর ভবিষ্যতে জেডিএস বিজেপিতে মিশে যাবে। সেই অভিসন্ধি বুঝেও দেবগৌড়া বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন। কংগ্রেসের ডি কে শিবকুমারের মতে, ‘‘এটা প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক আত্মহত্যা।’’
পাঁচ বছর আগে লোকসভা ভোটে কর্নাটকে জেডিএস মাত্র একটি আসন জিতেছিল। সে বার দেবগৌড়া ছিলেন কংগ্রেসের সঙ্গে। এ বার বিজেপির সঙ্গে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কর্নাটকে এসে তাঁর পূর্বসূরির সঙ্গে প্রচার করে গিয়েছেন। কংগ্রেসের নেতাদের কটাক্ষ, বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে ‘হাওয়া’ নেই। আর প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর ‘প্রাসঙ্গিকতা’ নেই।
প্রাক্তন ও বর্তমান, দুই প্রধানমন্ত্রীরই পরীক্ষা কঠিন কর্নাটকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy