Advertisement
Back to
Lok Sabha Election 2024 Results

উত্তরপ্রদেশে বিজেপি ডুবল কার দোষে? শাহ-যোগী শিবিরের বিবাদ, ‘গৃহযুদ্ধ’ শুরু অযোধ্যার রাজ্যে?

উত্তরপ্রদেশে গত লোকসভা ভোটে বিজেপি ৮০টি আসনের মধ্যে ৬২টি জিতেছিল। এ বার বিজেপি মাত্র ৩৩টি আসন জিতেছে। বিজেপির তার থেকেও বেশি মুখ পুড়েছে বারাণসী ও অযোধ্যায়।

(বাঁ দিকে) যোগী আদিত্যনাথ এবং অমিথ শাহ (ডান দিকে)।

(বাঁ দিকে) যোগী আদিত্যনাথ এবং অমিথ শাহ (ডান দিকে)। —ফাইল ছবি।

প্রেমাংশু চৌধুরী
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০২৪ ০৭:২৪
Share: Save:

অমিত শাহ না কি যোগী আদিত্যনাথ? কার জন্য উত্তরপ্রদেশে ডুবল বিজেপি?

লোকসভা ভোটের ফল প্রকাশের পরে এই নিয়ে বিজেপির অন্দরে কার্যত ‘গৃহযুদ্ধ’ শুরু হয়ে গেল। বিজেপির সাংসদ, বিদায়ী সাংসদরাই প্রকাশ্যে অভিযোগ তুললেন, উত্তরপ্রদেশে বিজেপির অন্দরেই অন্তর্ঘাত হয়েছে। যোগী আদিত্যনাথ ও অমিত শাহ— দুই শিবিরের নেতাদের মধ্যেও পারস্পরিক দোষারোপ শুরু হয়ে গিয়েছে। দিল্লিতে তলব করা হয়েছে উত্তরপ্রদেশ বিজেপির রাজ্য সভাপতি ভূপেন্দ্র চৌধরিকে।

উত্তরপ্রদেশে গত লোকসভা ভোটে বিজেপি ৮০টি আসনের মধ্যে ৬২টি জিতেছিল। এ বার বিজেপি মাত্র ৩৩টি আসন জিতেছে। বিজেপির তার থেকেও বেশি মুখ পুড়েছে বারাণসী ও অযোধ্যায়। বারাণসীতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জয়ের ব্যবধান পাঁচ লক্ষের কাছাকাছি থেকে দেড় লক্ষের কাছাকাছি নেমে এসেছে। অমেঠীতে কংগ্রেসের কিশোরীলাল শর্মা এর থেকে বেশি ব্যবধানে স্মৃতি ইরানিকে হারিয়েছেন। অযোধ্যায় রামমন্দির অর্ধনির্মিত অবস্থাতেই ভোটের আগে উদ্বোধন করে দিয়ে বিজেপি গোটা দেশে জয়ের স্বপ্ন দেখছিল। রামমন্দির যে লোকসভা কেন্দ্রের আওতায়, সেই ফৈজাবাদেই বিজেপি সমাজবাদী পার্টির কাছে হেরে গিয়েছে।

উত্তরপ্রদেশে যোগী আদিত্যনাথের মতো ‘দোর্দণ্ডপ্রতাপ’ মুখ্যমন্ত্রী থাকতেও কেন এই ভরাডুবি, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। যোগী প্রচারে বিশেষ গা লাগাননি বলে অভিযোগ ছিলই। কিন্তু যোগীর ঘনিষ্ঠ নেতারা বলছেন, মুখ্যমন্ত্রী জেলা স্তরের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে যে সব নেতাদের প্রার্থী করার সুপারিশ করেছিলেন, অমিত শাহ তা খারিজ করে দিয়ে বহু ক্ষেত্রে নিজের পছন্দমতো নেতাদের প্রার্থী করেছেন। ওমপ্রকাশ রাজভড়ের দলের সঙ্গেও শাহ আসন সমঝোতার সিদ্ধান্ত নেন। যোগী-শিবিরের তাতে আপত্তি ছিল।

অযোধ্যায় বিজেপির হারের জন্য কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব আবার যোগীর দিকেই আঙুল তুলছেন। কারণ, অযোধ্যায় মন্দিরের পরিকাঠামোর জন্য জমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণ, পুরনো দোকান ভেঙে নতুন দোকান তৈরি করতে ব্যবসায়ীদের ক্ষতিপূরণ নিয়ে অযোধ্যার স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে বিপুল ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল। এই ক্ষোভকে কাজে লাগানোর পাশাপাশি জাতপাতের সমীকরণের ফায়দা তুলতে সমাজবাদী পার্টির অখিলেশ যাদব দলিত পাসি সম্প্রদায়ের নেতা অবধেশ প্রসাদকে প্রার্থী করেছিলেন। তিনিই বাজিমাত করেছেন।

যোগী শিবির বলছে, অযোধ্যার সমস্ত কাজই প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে দেখভাল করা হচ্ছিল। প্রধানমন্ত্রীর দফতরের প্রাক্তন প্রিন্সিপাল সচিব নৃপেন্দ্র মিশ্রকেই রামমন্দিরের ট্রাস্টের প্রধান করে সব দায়িত্ব দেওয়া হয়। নৃপেন্দ্রর ছেলে সাকেতকে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব শ্রাবস্তী থেকে প্রার্থী করেছিল। তিনি হেরেছেন। অন্য দিকে, যোগী অযোধ্যায় সব আয়োজন করলেও তার কোনও কৃতিত্ব পাননি। যা নিয়ে বিধানসভায় দাঁড়িয়ে অখিলেশ যাদব যোগীকে কটাক্ষ করে বলেছিলেন, ‘‘হুজুর-এ-আলা আজ তক খামোশ বৈঠে ইসি গম মে, মেহফিল লুট গয়া কোই জবকি সাজাই হামনে!’’

একই ভাবে বারাণসী লোকসভা কেন্দ্রের পুরো দায়িত্বও ‘টিম নরেন্দ্র মোদী’-র হাতে ছিল বলে যোগীর ঘনিষ্ঠ নেতাদের বক্তব্য। তাঁদের যুক্তি, প্রথম থেকেই মোদী গুজরাতের নেতাদের নিয়ে এসে বারাণসীর দায়িত্ব দিয়েছিলেন। তাঁদের সঙ্গে গুজরাতের ব্যবসায়ীরাও বারাণসীতে এসে প্রতিপত্তি বিস্তার করেন। গুজরাতিরাই সব প্রকল্পের বরাত, ব্যবসার সব মুনাফা কুড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছেন বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের মনে ক্ষোভ তৈরি হয়। সর্বোপরি বারাণসীতে কাশী বিশ্বনাথ করিডর তৈরি নিয়েও পুরনো বারাণসীর বাসিন্দাদের মধ্যে প্রবল ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল।মোদীর লোকসভা কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা গুজরাতের নেতারা সে দিকে নজর দেননি।

লোকসভা ভোটের আগে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়াল বলেছিলেন, নির্বাচনের পরেই উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে যোগীকে সরানো হবে। কিন্তু বিজেপি নেতারা বলছেন, যেখানে বারাণসীতে মোদীর জয়ের ব্যবধান কমেছে, সেখানে উত্তরপ্রদেশে আসন কমে যাওয়ার জন্য যোগীকে সরানো মুশকিল। তবে কোপ পড়তে পারে রাজ্য সভাপতির উপরে। তাৎপর্যপূর্ণ হল, আজ মোদী যোগীর জন্মদিনে তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে কাজের প্রশংসা করেছেন।

কিন্তু তাতে খারাপ ফল নিয়ে অসন্তোষ ধামাচাপা দেওয়া যাচ্ছে না। বিজেপির সাক্ষী মহারাজ, সাধ্বী নিরঞ্জন জ্যোতিরা অভিযোগ তুলেছেন, উত্তরপ্রদেশে বিজেপির ভিতরেই অন্তর্ঘাত হয়েছে। উন্নাওয়ের সাংসদ সাক্ষী মহারাজ ভোটে জিতেছেন। কিন্তু তাঁর জয়ের ব্যবধান কমেছে। সাক্ষীর বক্তব্য, অন্তর্ঘাতই এর কারণ। বিজেপির কিছু ‘আস্তিনে লুকিয়ে থাকা সাপ’ ও ‘গদ্দার’-রাই এই কাজ করেছে। ফতেপুর থেকে হেরে গিয়ে বিদায়ী সরকারের মন্ত্রী সাধ্বী নিরঞ্জন জ্যোতি অভিযোগ তুলেছেন, অন্তর্ঘাতের জন্যই তাঁকে হারতে হয়েছে।

রায়বরেলী থেকে অমিত শাহ রাজ্যের মন্ত্রী দীনেশ প্রতাপ সিংহকে প্রার্থী করেছিলেন। কিন্তু তাঁকে প্রার্থী করায় স্থানীয় বিধায়ক অদিতি সিংহের মতো বেশ কয়েক জন ক্ষুব্ধ হয়ে প্রচার থেকে সরে যান। শাহ তাঁদের বোঝালেও লাভ হয়নি। আজ দীনেশ বলেছেন, ‘‘বিজেপিকে গভীর ভাবে আত্মমন্থন করতে হবে। আমরা ৫০০ বছরের প্রতীক্ষার পরে রামমন্দির তৈরি করলাম। অযোধ্যায় এত বিশাল রেল স্টেশন, বিমানবন্দর তৈরি হল। তারপরেও মানুষের মনে বিভ্রান্তি তৈরি হল।’’

অযোধ্যার রামদল ট্রাস্টের প্রধান কল্কি রাম অভিযোগ তুলেছেন, বিজেপির বিদায়ী সাংসদ লাল্লু সিংহ অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের ফলে হেরেছেন। মন্দিরই তাঁকে এ বারের ভোটে জিতিয়ে দেবে ধরে নিয়ে তিনি প্রচারই করেননি।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy