এনডিএ-র বৈঠকে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে জোটসঙ্গীরা। বুধবার নয়াদিল্লিতে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে। ছবি: পিটিআই।
মুখে নিঃশর্ত সমর্থনের কথা বলেও বিজেপির সঙ্গে দর কষাকষি চালিয়ে যেতে দ্বিধা করছে না এনডিএ-র শরিক দলগুলি। এ বারে দুর্বল বিজেপিকে পেয়ে শরিক দলের পক্ষে দাবি উঠেছে, ছেড়ে দিতে হবে ‘বিগ ফোর’ — স্বরাষ্ট্র, অর্থ, প্রতিরক্ষা ও বিদেশ (অনেকের মতে রেল) মন্ত্রক-এর মধ্যে যে কোনও একটি মন্ত্রক। যদিও সেই দাবি খারিজ করে বিজেপি নেতৃত্ব জানিয়েছেন, ওই চারটি মন্ত্রক ছাড়ার কোনও প্রশ্নই নেই। শরিকদের ভুললে চলবে না, একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলেও বিজেপির পিছনে ২৪০ জন দলীয় সাংসদের সমর্থন রয়েছে। অতীতের মতোই শক্ত হাতে সরকার চালাবেন নরেন্দ্র মোদী। যদিও মন্ত্রকের দাবিতে শরিকদের চাপে বেশ বিড়ম্বনায় বিজেপি নেতৃত্ব।
বিজেপির সরকার গড়তে শরিকি সাহায্য প্রয়োজন বুঝেই কোপ মারতে নেমে পড়েছেন টিডিপির চন্দ্রবাবু নায়ডু ও জেডিইউয়ের নীতীশ কুমার। এর মধ্যে টিডিপির আসন সংখ্যা সব থেকে বেশি (১৬ জন) হওয়ায় ফল প্রকাশের দিনেই শোনা গিয়েছিল, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক থেকে অমিত শাহকে সরানোর দাবি তুলেছে নায়ডুর দল। সূত্রের মতে, এনডিএ-তে যোগ দেওয়ার শর্ত হিসেবে এ বার ‘বিগ ফোরে’র একটি মন্ত্রক চেয়েছে তারা। যদিও কোনও পক্ষই এর সত্যতা স্বীকার করেনি। বিজেপি নেতৃত্বের মতে, ‘বিগ ফোর’ হল সরকারের চালিকাশক্তি। ওই মন্ত্রকগুলি শরিক দলের হাতে ছাড়ার কথা অন্তত এই মুহূর্তে ভাবা হচ্ছে না। দল মনে করছে, বিগ ফোরে শরিকি বাধ্যবাধকতা তৈরি হলে ভবিষ্যতে সরকার চালাতে সমস্যা তৈরি হতে পারে। তা মোটেই অভিপ্রেত নয়। বিজেপির এক নেতার কথায়, ‘‘ইউপিএ আমলে কংগ্রেসের শক্তি আমাদের থেকে অনেক কম ছিল। সেই কংগ্রেসও কিন্তু কোনও শরিককে বিগ ফোরের ক্যাবিনেট বা পূর্ণমন্ত্রীর পদ ছাড়েনি। তা ছাড়া টিডিপি-র যে ১৬ জন সাংসদ জিতেছেন, তাঁদের মধ্যে এক জন বাদে বাকি সকলেই নতুন।’’ আনকোরা সাংসদদের বিগ ফোরের গুরুদায়িত্ব দেওয়ার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে বিজেপি। তবে পূর্ণমন্ত্রী না হলেও বিগ ফোরের প্রতিমন্ত্রীর পদ শরিক দলকে ছাড়তে সমস্যা নেই বিজেপির। সূত্রের মতে, প্রয়োজনে অর্থ মন্ত্রকের একটি প্রতিমন্ত্রীর পদ নায়ডুকে ছাড়তে রাজি বিজেপি।
নীতীশ ও নায়ডু দু’জনই নিজেদের রাজ্যের জন্য বিশেষ প্যাকেজ চেয়ে রেখেছেন। অন্য দিকে চার জন সাংসদ পিছু একটি মন্ত্রক দাবি করেছেন দুই নেতাই। নায়ডু যখন বিগ ফোর চাইছেন, তখন পরিকাঠামো সংক্রান্ত মন্ত্রকগুলির দিকে নজর রয়েছে নীতীশের। যার মধ্যে রয়েছে রেল, গ্রামোন্নয়ন, জলসম্পদের মতো মন্ত্রকগুলি। যদিও আজ জেডিইউ নেতা কে সি ত্যাগী দাবি করেছেন, ‘‘দল বিজেপির কাছে কোনও মন্ত্রকের দাবি জানায়নি। আমাদের সমর্থন নিঃশর্ত।’’ অন্য দিকে চন্দ্রবাবু চাইছেন তথ্যপ্রযুক্তি, জলসম্পদ, গ্রামোন্নয়ন, সড়ক পরিবহণ মন্ত্রক। বিজেপির কাছে সমস্যার হল, শুধু বিগ ফোর নয়, শরিকদের পরিকাঠামো সংক্রান্ত মন্ত্রক ছাড়তেও আপত্তি রয়েছে তাদের। অতীতে রেল মন্ত্রকের দায়িত্ব শরিক দলের হাতে থাকলেও মোদী ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ওই মন্ত্রক নিজেদের হাতে রাখার সিদ্ধান্ত নেন। তা ছাড়া পরিকাঠামো ক্ষেত্রে গতিশক্তি প্রকল্পে আগামী দিনে বড় মাপের অর্থ বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত আগে থেকেই নিয়ে রেখেছেন মোদী। তাই শরিক কোনও দলের সাংসদ দায়িত্বে এলে সেই উন্নয়নের পথে
প্রতিবন্ধকতা তৈরি হতে পারে বলেই আশঙ্কা রয়েছে গেরুয়া শিবিরের। সমস্যা শুধু এখানেই শেষ নয়। কৃষি, যুব ও নারী কল্যাণের মতো মন্ত্রকগুলি নিজের হাতে রাখার পক্ষপাতী বিজেপি। কারণ দলের মূল যে ভোটব্যাঙ্ক, সেই গরিব, মহিলা, যুব ও কৃষক সমাজের উন্নয়নের লক্ষ্যে নেওয়া প্রকল্প রূপায়ণে ওই মন্ত্রকগুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে থাকে।
সমাধান হিসাবে জেডিইউকে পঞ্চায়েতিরাজ, গ্রামোন্নয়নের মতো মন্ত্রকগুলি ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবছে বিজেপি। অন্য দিকে নায়ডুকে ইস্পাত, বিমান, তথ্যপ্রযুক্তির মতো মন্ত্রক ছেড়ে দিতে রাজি আছে তারা। একনাথ শিন্দের দল শিবসেনা (৭ সাংসদ) ও চিরাগ পাসোয়ানের এলজেপি (৫ সাংসদ) একজন করে পূর্ণমন্ত্রী ও এক জন প্রতিমন্ত্রীর দাবিতে অনড়।
বিজেপির ওই দুই দলের সমর্থন প্রয়োজন হওয়ায় শিন্দে ও চিরাগের দলকে যথাক্রমে ভারী শিল্পমন্ত্রক ও সামাজিক ন্যায় মন্ত্রকের পূর্ণমন্ত্রীর পদ দেওয়ার বিষয়ে ভাবনাচিন্তা চলছে বিজেপিতে। আজ দলীয় সাংসদদের সঙ্গে বৈঠকের পরে শিন্দে জানান, ‘‘রাজার ছেলে রাজা নয়, যে যোগ্য সেই রাজা হবে— ওই নীতি মেনে যিনি যোগ্য, তিনি মন্ত্রী হবেন। আমার ছেলে তিন বারের সাংসদ হয়েও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হচ্ছেন না।’’ চিরাগ জানান বিজেপির সঙ্গে মন্ত্রক নিয়ে দর কষাকষি করার প্রশ্নই নেই। তাঁর কথায়, ‘‘কোনও দাবি নেই। দলের লক্ষ্য ছিল মোদীকে তৃতীয় বার প্রধানমন্ত্রী পদে দেখা। সেই স্বপ্ন পূর্ণ রয়েছে।’’ যদিও বিজেপি সূত্রের দাবি, আজ দুপুর পর্যন্ত দু’টি মন্ত্রীপদ পাওয়ার জন্য দর কষাকষি করে গিয়েছেন চিরাগ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy