হাওড়ার সদর বক্সি লেনে চলছে এই বহুতলের বেআইনি অংশ পুনর্নির্মাণের কাজ। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।
নির্বাচনী আচরণবিধি চালু হওয়ার পর থেকে অবৈধ নির্মাণ ভাঙার কাজ বন্ধ করে দিয়েছিল হাওড়া পুরসভা। আর সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়েই পুরসভার ভেঙে দেওয়া বেআইনি অংশ ফের মেরামত করে দিবারাত্র চলছে অবৈধ নির্মাণের কাজ। হাওড়া ময়দানের কাছে ওই এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, এই অবৈধ নির্মাণের প্রতিবাদে তাঁরা পুরসভার বিল্ডিং দফতরে গিয়ে বিক্ষোভও দেখিয়েছেন। পুলিশের কাছে বার বার অভিযোগ জানিয়েছেন। কিন্তু তার পরেও ওই নির্মাণ বন্ধ করা যায়নি। উল্টে নিত্যদিন প্রোমোটারদের হুমকির মুখে পড়তে হচ্ছে তাঁদের। তাই এ বার তাঁরা আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছেন।
সমস্যার সূত্রপাত মধ্য হাওড়ার প্রাণকেন্দ্র হাওড়া ময়দানের কাছেই সদর বক্সি লেনে চার ফুট গলিতে তৈরি হওয়া একটি অবৈধ ছ’তলা বহুতল নিয়ে। এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, গত দু’বছর ধরে নির্মাণকাজ চলার সময় থেকেই পুরসভার কাছে বাড়িটি নিয়ে অভিযোগ জানানো হচ্ছিল। গত বছরের ১৭ জুলাই পুরসভা ওই অবৈধ বাড়িটির একটি অংশ ভেঙে দেয়। পাশাপাশি, কাজ বন্ধ রাখার নোটিসও দিয়ে যায়।
এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, এর পরেও লুকিয়ে-চুরিয়ে কাজ চলছিল বাড়িটিতে। আর চলতি বছরে লোকসভা ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই জোরকদমে শুরু হয়ে যায় ওই ভেঙে দেওয়া অংশ পুনর্নির্মাণের কাজ। এমনকি, পাঁচতলা তৈরির কাজও শুরু হয়। সেই সময়ে এলাকার বাসিন্দারাই একজোট হয়ে প্রতিবাদ করায় তা অবশ্য আর হয়নি। এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, পুরসভার ভেঙে দেওয়া অবৈধ অংশ ফের মেরামত করা হচ্ছে জানিয়ে অভিযোগও করা হয় প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে।
সদর বক্সি লেনের বাসিন্দা কৃষ্ণা দত্ত, কেয়া দত্ত, অঞ্জন দে সরকারেরা জানান, পুরসভা ঘোষণা করেছিল, অবৈধ অংশ ভেঙে দেওয়ার পরে তা ফের মেরামত করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে জমির মালিক ও প্রোমোটারের বিরুদ্ধে। কিন্তু সদর বক্সি লেনের ওই অবৈধ অংশ ফের মেরামত করার কথা পুরসভা ও স্থানীয় হাওড়া থানাকে জানিয়ে কোনও লাভ হয়নি। অভিযোগ, বন্ধ হয়নি নির্মাণকাজও। তাই শেষে আদালতের দ্বারস্থ হতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাসিন্দারা।
এরই মধ্যে গত বৃহস্পতিবার বৃষ্টির সময়ে ওই অবৈধ বাড়িটির উপর থেকে একটি চাঙড় খসে পড়ে নীচ দিয়ে যাওয়া এক বাসিন্দার ছাতার উপরে। অল্পের জন্য ওই ব্যক্তি বেঁচে গেলেও এই নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়। বাসিন্দারা জড়ো হয়ে অবৈধ নির্মাণের প্রতিবাদে ফের বিক্ষোভ দেখান। এমনকি, পরের দিন তাঁরা সদলবলে হাওড়া পুরসভায় গিয়ে চেয়ারপার্সন সুজয় চক্রবর্তী ও বিল্ডিং দফতরের ভারপ্রাপ্ত অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে দেখা করেও প্রতিবাদ জানান।
অবৈধ অংশ ভেঙে দেওয়ার পরে ফের নির্মাণের অভিযোগ সম্পর্কে পুরসভার বক্তব্য, নির্বাচনী আচরণবিধি চালু হওয়ার পর থেকে আইনগত বাধ্যবাধকতার জন্য অবৈধ নির্মাণ ভাঙার কাজ বন্ধ ছিল। এই সুযোগটাকেই কাজে লাগিয়ে নির্মাণকাজ চলছিল। তবে ভোট মিটে গেলেই বাড়িটির অবৈধ তিনটি তল ভেঙে দেওয়া হবে।
পুর চেয়ারপার্সন বলেন, ‘‘অভিযোগ পাওয়ার পরেই বাড়িটির অবৈধ অংশ ভেঙে দেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু আদালত থেকে বাড়ির মালিক স্থগিতাদেশ নিয়ে আসায় ভাঙার কাজ শেষ হয়নি। ভোট মিটে গেলেই ফের আইনানুগ ব্যবস্থা খতিয়ে দেখে বাড়িটির বেআইনি অংশ সম্পূর্ণ ভেঙে দেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy