পশ্চিম বর্ধমান জেলা তৃণমূল সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর সঙ্গে দুই প্রার্থী শত্রুঘ্ন সিন্হা ও কীর্তি আজাদ। —নিজস্ব চিত্র।
বিজেপিকে ‘বহিরাগত’ ও ‘বাংলা বিরোধী’ দল বলে সভায় তোপ দেগেছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সভা থেকেই আসন্ন লোকসভা ভোটের জন্য যে প্রার্থিতালিকা তাঁরা ঘোষণা করেছেন, তাতে অন্য রাজ্যের বেশ কয়েক জন বাসিন্দার নাম রয়েছে। রবিবার ব্রিগেডে ‘জনগর্জন’ সভার পরে এই ‘বহিরাগত’ প্রার্থীর প্রশ্নে তৃণমূলকে আক্রমণ করল বিজেপি।
বহরমপুর কেন্দ্রে ইউসুফ পাঠান, আসানসোলে শত্রুঘ্ন সিন্হা এবং বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রের জন্য কীর্তি আজাদকে প্রার্থী করার কথা ঘোষণা করেছে তৃণমূল। শত্রুঘ্ন ও কীর্তি আদতে বিহারের বাসিন্দা, ইউসুফ গুজরাতের। তৃণমূলের সভার পরেই বিজেপির সর্বভারতীয় আইটি সেলের প্রধান অমিত মালবীয় সমাজমাধ্যমে কটাক্ষ করেন, ‘ইউসুফ পাঠান গুজরাতের না বাংলার? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যাঁদের বহিরাগত বলেন, তৃণমূলের তালিকা সেই রকম নামে ভরা। তৃণমূল কি যথেষ্ট ভূমিপুত্র খুঁজে পায়নি?’
সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী এ দিন রামপুরহাটে বলেন, “ওরা বলছে, জয় বাংলা। যাঁরা বাংলা লিখতে-পড়তে জানেন না, বাংলায় কথা বলতে জানেন না, তাঁদের তো প্রার্থী করে জয় বাংলা স্লোগান দিচ্ছেন।” তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের পাল্টা বক্তব্য, “ভৌগোলিক অবস্থানের ভিত্তিতে কাউকে বহিরাগত বলা হয় না। বহিরাগত তারা, যারা বাংলাকে বঞ্চনা, অপমান করেছে।”
আসানসোলে ২০২২ সালে উপনির্বাচনে জিতে সাংসদ হন শত্রুঘ্ন। এ বারও তাঁকে প্রার্থী করার কথা আগেই জানিয়েছিল তৃণমূল। বিজেপি এ বার আসানসোলে ভোজপুরি তারকা পবন সিংহকে প্রার্থী করার কথা জানানোর পরে, পর্দায় তাঁর ভূমিকা ‘বাঙালি বিরোধী’ বলে দাবি করে সরব হয় তৃণমূল। পবন সরে দাঁড়িয়েছেন। সে কথা মনে করিয়ে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা বিজেপির শুভেন্দু অধিকারী এ দিন বলেন, “পবন সিংহকে যখন বিজেপি প্রার্থী করেছিল, ‘বহিরাগত’ বলে তৃণমূল তোলপাড় করেছিল। উনি নিজে প্রার্থিপদ প্রত্যাহার করেছিলেন। কীর্তি আজাদ, শত্রুঘ্ন সিন্হা, ইউসুফ পাঠান কোন কালে বাংলার মানুষ ছিলেন, জানতে চাই।”
বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রের সাতটি বিধানসভা এলাকার মধ্যে দু’টি দুর্গাপুর ও পাঁচটি পূর্ব বর্ধমানের গ্রামীণ এলাকায় পড়ে। প্রাক্তন ক্রিকেটার কীর্তি আজাদকে প্রার্থী করার পরে স্থানীয় তৃণমূলের একাংশেরও আশঙ্কা, তাঁর ভাষার সমস্যা গ্রামীণ এলাকায় জনসংযোগে অন্তরায় হতে পারে। প্রচারে ‘বহিরাগত’ প্রার্থী নিয়ে আক্রমণ সামলানোর বিষয়েও সংশয়ে রয়েছেন তাঁরা। যদিও বহিরাগত প্রার্থী নিয়ে কীর্তি বলছেন, “নরেন্দ্র মোদী যদি গুজরাতের মানুষ হয়ে বারাণসীতে প্রার্থী হতে পারেন, তবে আমি প্রাক্তন জাতীয় খেলোয়াড় হয়ে কেন এখানকার মানুষের সেবা করতে পারব না?”
কীর্তির মতো আর এক ক্রিকেটার ইউসুফ পাঠানও এ বারে তৃণমূলের প্রার্থী, তা-ও আবার বহরমপুরের মতো ওজনদার কেন্দ্র থেকে। সেখানকার কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরী এ দিন বলেন, “দিদিভাই জানেন, জেলার নাম মুর্শিদাবাদ। সংখ্যালঘু ভোটকে না কাটতে পারলে অধীর চৌধুরীকে রোখা যাবে না। তাই সংখ্যালঘু ভোট কেটে দাও আর হিন্দু ভোটকে ধাক্কা দিয়ে বলো যে, মোদীর দলে ভোট দাও।” তাঁর অভিযোগ, “বাংলার মুখ্যমন্ত্রী সঙ্কীর্ণ রাজনীতি করতে ধর্মীয় তাস খেলে ভাল এক জন খেলোয়াড়কে নর্দমায় নামালেন।” যা শুনে বহরমপুর-মুর্শিদাবাদ জেলা তৃণমূলের সভাপতি অপূর্ব সরকার বলেন, “কংগ্রেস তো ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলে। আজকে ইউসুফ পাঠানের মতো বিশ্ববন্দিত ক্রিকেটার যখন বহরমপুরের প্রার্থী হয়েছেন, তখন অধীর চৌধুরীর মুখে মোদীর সুরে বিভাজনের কথা শোনা গেল।”
ইউসুফ এক্স হ্যান্ডলে এর মধ্যেই তৃণমূল পরিবারকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেছেন, “মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে আমাদের দায়িত্ব গরিব ও বঞ্চিতদের উন্নয়ন। আশা করি আমি তা করতে পারব।” তাঁর জন্য বাড়ি দেখা শুরু হয়েছে বহরমপুরে। সেখান থেকেই কয়েক দিনের মধ্যে প্রচারে নামার কথা কেকেআর-এর প্রাক্তন ক্রিকেটারের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy