Advertisement
E-Paper

ঠাকুরবাড়িতে উচ্ছ্বাস, অন্য পক্ষ বলছে ‘ভাঁওতা’

সিএএ (সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন) কার্যকর করতে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে কেন্দ্র। মঙ্গলবার থেকেই তা কার্যকর হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে।

উচ্ছ্বসিত মতুয়াদের একাংশ। সোমবার সন্ধ্যায় ঠাকুরবাড়িতে। ছবিটি তুলেছেন নির্মাল্য প্রামাণিক।

উচ্ছ্বসিত মতুয়াদের একাংশ। সোমবার সন্ধ্যায় ঠাকুরবাড়িতে। ছবিটি তুলেছেন নির্মাল্য প্রামাণিক।

সীমান্ত মৈত্র  

শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০২৪ ০৭:২৫
Share
Save

খবরটা ছড়িয়ে পড়তেই ভরসন্ধ্যায় বদলে গেল মতুয়া বাড়ির চিত্র। এ ওকে মিষ্টিমুখ করাচ্ছেন, আলিঙ্গন করছেন, আনন্দে মেতে উঠেছেন। অনেকের চোখে আনন্দাশ্রু। ডাঙ্কা-কাঁসি বাজছে সজোরে। সোমবার সন্ধ্যায় পুরোপুরি উৎসবের মেজাজ গাইঘাটার ঠাকুরনগরে মতুয়াদের ঠাকুরবাড়িতে।

তবে ভিন্ন চিত্রও আছে। যাঁরা এত দিন ধরে এ রাজ্যে আছেন, ভোট দেন, আধার কার্ড, রেশন কার্ড আছে— তাঁদের কেন আবেদনের ভিত্তিতে নতুন করে নাগরিকত্ব নিতে হবে— সে প্রশ্ন তুলছেন মতুয়াদের অন্য অংশ।

সিএএ (সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন) কার্যকর করতে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে কেন্দ্র। মঙ্গলবার থেকেই তা কার্যকর হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে। উৎসবে যোগদানকারী মতুয়াদের মতে, তাঁদের স্বপ্নপূরণ হল। নাগরিকত্বের দাবিতে তাঁদের আন্দোলন বহু দিনের। ২০১৯ সালে ঠাকুরনগরে এসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সিএএ কার্যকর করার আশ্বাস দেন। পরে সিএএ আইনে পরিণত হলেও এত দিন কার্যকর হয়নি। কখনও করোনা পরিস্থিতি, কখনও ধারা তৈরিতে দেরির কথা বলেছিলেন বিজেপির কেন্দ্রীয় ও রাজ্যের নেতারা।

এই পরিস্থিতিতে মতুয়ারা অনেকেই ক্ষুব্ধ হচ্ছিলেন। সাংসদ শান্তনু ঠাকুরও ‘ধৈর্যচ্যূতি’র ইঙ্গিত দেন। পরে অবশ্য তিনি একাধিক বার দাবি করেন, লোকসভা ভোটের আগে সিএএ কার্যকর হচ্ছেই। এমনকী, ভোট ঘোষণার এক ঘণ্টা আগে হলেও সিএএ কার্যকর হবে বলে দাবি করেন।

অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের মহা সঙ্ঘাধিপতি তথা গাইঘাটার বিজেপি বিধায়ক সুব্রত ঠাকুর বলেন, ‘‘সিএএ কার্যকর হওয়ার ফলে যে সব মতুয়া উদ্বাস্তু নমঃশূদ্র মানুষের ভোটার কার্ড, আধার কার্ড, রেশন কার্ড বা ভারতীয় পরিচয়পত্র নেই তাঁদের খুবই উপকার হবে। ধর্মীয় কারণে নিপীড়িত হয়ে ৫০-৫৫ বছর আগে বাংলাদেশ থেকে যে সব মতুয়া উদ্বাস্তু মানুষ চলে এসেছিলেন, তাঁদের হয় তো খুব বেশি অসুবিধা হবে না। কিন্তু পরে যাঁরা এসেছেন, তাঁদের সমস্যার সুরাহা হল।’’ সুব্রতের দাবি, ‘‘ধর্মীয় কারণে নিপীড়িত হয়ে যে মতুয়া উদ্বাস্তুরা এ দেশে এসেছিলেন, তাঁদের পাসপোর্ট তৈরি করতে গেলে বা জমি কিনতে গেলে পুরনো দলিল চাওয়া হত। বাপ-ঠাকুরদার পরিচয় জানতে চাওয়া হত। নানা ভাবে তাঁদের হেনস্থা হতে হত। এমনকী, তাঁদের বে-নাগরিক বলে গ্রেফতার পর্যন্ত করা হত। সিএএ কার্যকর হওয়ায় তাঁরা সেই দুর্দশা থেকে মুক্তি পেলেন।’’

অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি তথা তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ মমতা ঠাকুর আবার মনে করছেন, সিএএ আসলে ঘুরিয়ে এনআরসি চালু করার পরিকল্পনা। তাঁর কথায়, ‘‘আমি এটা বুঝতে পারছি না, মতুয়া উদ্বাস্তুদের ভোটার কার্ড আছে। তাঁরা ভোট দেন। তাঁরা নাগরিক। তা হলে নতুন করে কেন নাগরিকত্ব নিতে হবে? আমাদের পূর্বপুরুষেরা অখণ্ড ভারতে জন্মেছেন। আমরা সকলেই এ দেশের নাগরিক।’’

মমতা ঠাকুরের প্রশ্ন, ‘‘সিএএ কার্যকর হলে আমাদের সুবিধা বা অসুবিধা কী, সেটাই আমরা জানি না। আমরা সমস্ত সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাই। নতুন করে কী দেবে?’’

মমতা এর পিছনে বিজেপির রাজনীতি দেখছেন। তিনি বলেন, ‘‘সিএএ কার্যকর করার ইচ্ছা থাকলে পাঁচ বছর আগেই করতে পারত। এখন ভোটের আগে রাজনীতি করছে। তা ছাড়া, সিএএ-তে নিঃশর্ত নাগরিকত্বের কথা বলা নেই। আবেদনের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব নিতে হবে। তার মানে, আমাদের আবেদন করে বলতে হবে, আমরা নাগরিক নই। তখন ওরা এনআরসি চালু করবে।’’

বিজেপির বনগাঁ দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়ক স্বপন মজুমদারের প্রতিক্রিয়া, ‘‘মতুয়া উদ্বাস্তু মানুষদের কাছে সিএএ কার্যকর হওয়া ছিল স্বপ্ন। প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে তা সম্ভব হল।’’ বিজেপির দাবি, সিএএ কার্যকর করার ফলে ভোটে মতুয়াদের ‘আশীর্বাদ’ তাদের দিকে থাকবে। তৃণমূল বলছে উল্টো কথা। বনগাঁ লোকসভার তৃণমূল প্রার্থী বিশ্বজিৎ দাস বলেন, ‘‘ভোটের আগে সিএএ নিয়ে মতুয়াদের ভাঁওতা দিতে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হল। ভোটে এর কোনও প্রভাব পড়বে না। কারণ, মতুয়ারা জানেন তাঁরা ইতিমধ্যেই নাগরিক।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Lok Sabha Election 2024 CAA Bangaon

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}