Advertisement
Back to
Lok Sabha Election 2024

আসানসোলে জিতেন বনাম জিতেন! সুরেন্দ্র প্রার্থী হওয়ায় পদ্মের চিন্তা বাড়াচ্ছে দলে ওঠা স্লোগান

গত এক মাসে আসানসোলে বিজেপি প্রার্থী হিসাবে অনেকের নাম নিয়েই জল্পনা চলছিল কর্মীদের মধ্যে। তাঁদের মধ্যে সুরেন্দ্রর সঙ্গে আলোচনা চলছিল জিতেন্দ্রর নামেও।

জিতেন্দ্র তিওয়ারি এবং সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া।

জিতেন্দ্র তিওয়ারি এবং সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া। —ফাইল চিত্র।

সাথী চট্টোপাধ্যায়
আসানসোল শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০২৪ ২০:০৪
Share: Save:

লোকসভা ভোট ঘোষণার পর প্রায় এক মাস ধরে টালবাহানার শেষে আসানসোলে প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিজেপি। প্রার্থী করা হয়েছে গত বার বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্র থেকে জেতা সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়াকে। দেরিতে প্রার্থী ঘোষণা হওয়ায় দলীয় নেতাদের যেখানে একজোট হয়ে লড়াইয়ে ঝাঁপানোই লক্ষ্য হওয়া উচিত, সেখানে প্রকাশ্যে চলে এল দলীয় কোন্দল! জিতেন্দ্র তিওয়ারিকে দল প্রার্থী না করায় আনন্দে মাততে দেখা গেল দলের একটি অংশকে। এর বিরুদ্ধে পাল্টা সুর চড়াতে দেখা গিয়েছে জিতেন্দ্রর অনুগামীদেরও। এই স্লোগান ও পাল্টা স্লোগানের ঠেলায় আসানসোলে অস্বস্তি বেড়েছে পদ্মের অন্দরে!

গত এক মাসে আসানসোলে বিজেপি প্রার্থী হিসাবে অনেকের নাম নিয়েই জল্পনা চলছিল কর্মীদের মধ্যে। তাঁদের মধ্যে সুরেন্দ্রর সঙ্গে আলোচনা চলছিল জিতেন্দ্রর নামেও। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথম প্রার্থিতালিকায় আসানসোলের জন্য ভোজপুরি গায়ক-নায়ক পবন সিংহের নাম ঘোষণার পর যে ঘটনা ঘটেছে, তাতে এ বার খানিক সাবধান ছিলেন নেতৃত্ব। পবন প্রার্থী হতে না চাওয়ায় অস্বস্তিতে পড়েছিল দল। তৃণমূলের শত্রঘ্ন সিন্‌হার বিরুদ্ধে তখন থেকেই দলের জেলা নেতৃত্ব এক জন স্থানীয় প্রার্থী দেওয়ার পক্ষে মত দিচ্ছিলেন। সুরেন্দ্রর বেড়ে ওঠা আসানসোলের খনি-শিল্পাঞ্চলেই। তবে গত পাঁচ বছরে বর্ধমান-দুর্গাপুরে সাংসদ হিসাবে তাঁকে পাশে পাওয়া নিয়ে সেখানে নানা প্রশ্ন উঠেছে। কিন্তু তার পরেও যে হেতু আসানসোলের মাঠ সুরেন্দ্রর কাছে পরিচিত, তা নজরে রেখেই তাঁকে প্রার্থী হিসাবে বেছে নিয়েছেন দলীয় নেতৃত্ব।

আসানসোলে দল প্রার্থী ঘোষণা করার পরেই উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন বিজেপির কর্মী-সমর্থকেরা। গোটা লোকসভা কেন্দ্র জুড়েই দেওয়াল লিখন শুরু করে দেন তাঁরা। সেই আবহে বিজেপির আসানসোল সাংগঠনিক জেলার মুখপাত্র জিতেন চট্টোপাধ্যায় ও তাঁর অনুগামীদের উচ্ছ্বাসের ধরন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে দলের অন্দরে। গাড়িতে করে যাওয়ার সময় নিজের ফেসবুক পেজ থেকে লাইভ করে তাঁকে গানের তালে তালে বলতে শোনা গেল, ‘‘হল না, হল না!’’ গাড়ির পিছনের আসনে বসা তাঁর অনুগামীরাও সুরে সুর মেলালেন। বিজেপির একটি অংশের দাবি, জিতেনের নিশানায় ছিলেন জিতেন্দ্র (আসানসোলের রাজনীতিতে তিনি জিতেন নামেই সমধিক পরিচিত)। অহলুওয়ালিয়া প্রার্থী হওয়াতে যত না খুশি জিতেন, তার চেয়েও তিনি বেশি খুশি হয়েছেন জিতেন্দ্র প্রার্থী না হওয়ায়। এই মর্মে জিতেন্দ্র-ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত আসানসোলের কয়েক জন নেতা সমাজমাধ্যমে ক্ষোভও উগরে দিয়েছেন। কেউ কেউ লিখেওছেন, ‘‘কিছু নেতার মানসিকতা ছিল বিজেপিকে জেতানো নয়, জিতেন্দ্র তিওয়ারিকে আটকানো। আজ তারা সফল হয়ে গেলেন।’’ ঘটনাচক্রে, গত বিধানসভা নির্বাচনে পাণ্ডবেশ্বরে জিতেন্দ্রকে প্রার্থী করেছিল বিজেপি। কিন্তু সেখানে হেরে গিয়েছিলেন তিনি। তাঁর অনুগামীদের একটি অংশের দাবি, পাণ্ডবেশ্বরের নেতা জিতেনের অন্তর্ঘাতের কারণে জিতেন্দ্রর হার হয়েছিল বিধানসভা নির্বাচনে। যদিও এই বিষয়টি বরাবরই অস্বীকার করে এসেছে জিতেন-পক্ষ।

অহলুওয়ালিয়ার মতো জিতেন্দ্রও আসানসোলের ‘ভূমিপুত্র’। কেন তাঁকে প্রার্থী হিসাবে বেছে নেওয়া হল না, তা নিয়ে জিতেন্দ্রর অনুগামীদের একাংশের মনে প্রশ্ন রয়েইছে। তাঁদের দাবি, আসানসোলে জেলা নেতৃত্বের একটি অংশ চাননি বলেই জিতেন্দ্রকে প্রার্থী করা হয়নি। কিন্তু আসানসোলের প্রাক্তন মেয়র ও পাণ্ডবেশ্বরের প্রাক্তন বিধায়ক জিতেন্দ্রর আসানসোল কেন্দ্র থেকে জিতে আসার সাংগঠনিক ক্ষমতা রয়েছে। অনেকের দাবি, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও জিতেন্দ্রকেই প্রার্থী হিসাবে চাইছিলেন। তবে দলের একটি অংশের মতে, আসানসোলে জিতেন্দ্রর ‘সমান্তরাল’ সংগঠন রয়েছে। জিতেন্দ্র জেতার পর সেই সংগঠনের ‘প্রভাব’ বেড়ে যেতে পারত। তাতে আখেরে ক্ষতি হত দলের সংগঠনের! হতে পারে, আসানসোলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা দলীয় নেতৃত্বের কাছে বার বার এই বিষয়টি তুলে ধরেছেন। হয়তো সেই বিষয়টি নজরে রেখেই শেষমেশ অহলুওয়ালিয়ার নামে সিলমোহর দিয়েছেন নেতৃত্ব। তাঁদের আশা, তৃণমূল থেকে বিজেপিতে আসা নেতা জিতেন্দ্রর বদলে দলের দু’বারের লোকসভার সাংসদ অহলুওয়ালিয়ার উপরেই কর্মী-সমর্থকেরা বেশি ভরসা রাখবেন।

বিজেপির একটি সূত্রে খবর, আসানসোলে ‘জিতেন্দ্র-বিরোধিতা’র বিষয়টি ‘চাপা’ ছিল। প্রকাশ্যে সে ভাবে কেউ মুখ খুলতেন না। কিন্তু জিতেনের ‘জিতেন্দ্র-বিরোধী’ স্লোগানে সব প্রকাশ্যে চলে এল বলে মনে করা হচ্ছে। পাল্টা সুর চড়িয়ে ‘জিতেন্দ্র-ঘনিষ্ঠ’দের বক্তব্য, অবিলম্বে দ্বন্দ্ব ভুলে দলীয় প্রার্থী হয়ে একজোট হয়ে প্রচারে না নামলে হার অনিবার্য! জিতেন্দ্র-ঘনিষ্ঠ এক নেতার কথায়, ‘‘এ ভাবে যদি চলতে থাকে, তা হলে ৪ জুন ভোটের ফলঘোষণার দিন ‘হল না, হল না’ স্লোগানের পরিবর্তে ‘পারল না, পারল না’ স্লোগান দিতে হবে কিন্তু।’’ এতেই আশঙ্কিত দলের জেলা নেতৃত্বের একাংশ। তাঁদের ‘ভয়’, এ সবে ক্ষুব্ধ হয়ে হয়তো জিতেন্দ্রই অন্তর্ঘাত করে দিতে পারেন।

এই পরিস্থিতিতে তড়িঘড়ি আসরে নামতে হয়েছে জেলা নেতৃত্বকে। জিতেনকে ওই ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার বার্তা দেওয়া হয় দলের তরফে। জেলা সভাপতি বাপ্পাদিত্য চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘জিতেন চট্টোপাধ্যায়কে এই ধরনের আচরণ থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের কোনও অভিযোগ না আসে, তা বলা হয়েছে।’’ পাশাপাশি তিনি জানান, অহলুওয়ালিয়াকে জেতাতে জিতেন্দ্র-সহ দলের সকলে একজোট হয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়বেন। জিতেন্দ্রও অবশ্য অহলুওয়ালিয়ার পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘আসানসোলে অভিজ্ঞ সাংসদ দরকার ছিল। সেটা আসানসোলের জন্য ভালই হবে। রাজ্যে এত অভিজ্ঞ সাংসদ নেই।’’ প্রার্থী হওয়ার পর বৃহস্পতিবার আসানসোলে আসেন অহলুওয়ালিয়া। অন্ডাল বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানাতে জেলা সভাপতি বাপ্পা গিয়েছিলেন। গিয়েছিলেন কুলটির বিধায়ক অজয় পোদ্দারও। কিন্তু জিতেন্দ্রকে সেখানে দেখা যায়নি।

অন্য বিষয়গুলি:

Lok Sabha Election 2024 Jitendra Tiwari
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy