Advertisement
E-Paper

বুথে বৃদ্ধের জন্য বৈভবের ‘দায়িত্ব বোধে’ অবাক সবাই 

গজেন বা সেখানে উপস্থিত কাউকেই চেনে না বৈভব। বাবা বিষ্ণুকান্তি কুন্ডুর সঙ্গে ভোট কেন্দ্রে এসেছিল সে। জানায়, বাবা ভোট দিতে গিয়েছেন। তার মধ্যে এই ঘটনা।

অশীতিপর বৃদ্ধকে ধরতে এগিয়ে এল ছোট্ট বৈভব। শুক্রবার জলপাইগুড়ি জেলা স্কুলের বুথে।

অশীতিপর বৃদ্ধকে ধরতে এগিয়ে এল ছোট্ট বৈভব। শুক্রবার জলপাইগুড়ি জেলা স্কুলের বুথে। —নিজস্ব চিত্র।

সৌমিত্র কুণ্ডু

শেষ আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০২৪ ০৫:৩৭
Share
Save

একা ভোট দিতে এসে বুথ চত্বরে দাঁড়াতে পারছিলেন না অশীতিপর গজেন সেন। হাতে পরিচয়পত্র নিয়ে টলছিলেন। পড়ে যাওয়ার উপক্রম হলে সাহায্যে এগিয়ে আসে দুটো ছোট্ট হাত। কেন্দ্রীয় বাহিনীর এক জওয়ান ততক্ষণে এগিয়ে এসে বৃদ্ধকে ধরেছেন। কিন্তু ছ’বছরও না পেরনো এক বালকের এই ভূমিকায় সে জওয়ানও হতবাক। কাছাকাছি আরও দুই ব্যক্তি এগিয়ে এসে তাকে সরে দাঁড়াতে বলেন। কিন্তু বৈভব কুন্ডুর চটজলদি প্রতিক্রিয়া, ‘‘তোমরাও থাকো, আমাকেও থাকতে হবে। সবাইকেই ধরতে হবে।’’ এর পরে আর কেউ তাকে কিছু বলেনি। জওয়ানের সঙ্গে সে-ও বৃদ্ধের হাত ধরে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে। ইতিমধ্যে দুই পুলিশ কর্মী ততক্ষণে চেয়ার এগিয়ে দিলে বুথ চত্বরে বসেন বৃদ্ধ। বৈভব তখনও সেখানে দাঁড়িয়ে। জলপাইগুড়ি জেলা স্কুলের একটি বুথে শুক্রবার, ভোটের দিন তার এই ভূমিকা এলাকার আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে।

কিছু ক্ষণ পরে, কর্তব্যরত জওয়ান রাকেশ সরকার ওই বৃদ্ধকে দাঁড় করিয়ে হেঁটে বুথে নিয়ে যাওয়ার সময় বৈভব বৃদ্ধের অন্য হাত ধরে রাখে। জওয়ান রাকেশ, সেখানে থাকা দুই পুলিশকর্মী তৌসিদ আহমেদ, সুকুমার মাঝিরা বলেন, ‘‘বাচ্চাটা যা বলেছে, তা মোটেই ছোট কথা নয়। এ বয়সে ওর মধ্যে এই ভাবনা অবাক করেছে।’’ বৃদ্ধ গজেন সেন বলেন, ‘‘ওর দায়িত্ববোধ সত্যিই অবাক করার মতো।’’

গজেন বা সেখানে উপস্থিত কাউকেই চেনে না বৈভব। বাবা বিষ্ণুকান্তি কুন্ডুর সঙ্গে ভোট কেন্দ্রে এসেছিল সে। জানায়, বাবা ভোট দিতে গিয়েছেন। তার মধ্যে এই ঘটনা। অচেনাকে এ ভাবে সাহায্য করতে গেলে কেন? বৈভবের উত্তর, ‘‘সবাইকেই সাহায্য করব।’’ বৈভবের কথা শুনে খুশি বিষ্ণুকান্তিও। এক সময় রায়পুর চা বাগানের প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। বছর চারেক আগে অবসর নিয়েছেন। বৈভবের মা কৃষ্ণা আইসিডিএস কর্মী। বাবার মুখে, বাড়িতে চা বাগানের দুর্দশার কথাও শোনে বৈভব। বিষ্ণুকান্তি বলেন, ‘‘বিভূ (বৈভবের ডাক নাম) অন্যকে সাহায্য করতে ভালবাসে। আমাকে বা অন্য কাউকে দু-তিনটি ভারী ব্যাগ নিয়ে বাড়িতে আসতে দেখলে এগিয়ে একটি ব্যাগ নিতে চায়। এমনই।’’

সারদা শিশুতীর্থ স্কুলে ‘প্রভাত’ (পাঁচ বছরের বেশি বয়সের পড়ুয়া) ক্লাসের ছাত্র। আগামী বছর প্রথম শ্রেণিতে উঠবে বৈভব। স্কুলের প্রধান বিমান চক্রবর্তী বলেন, ‘‘স্কুলে টিফিনের সময় বাড়িতে থেকে কোনও পড়ুয়া টিফিন আনেনি দেখলে, বৈভব তার টিফিন থেকে খাবার ভাগ করে নিতে চায়। কারও পেন্সিল না থাকলে নিজের বাড়তি পেন্সিল এগিয়ে দেয়।’’ ডুয়ার্সের বাসিন্দা পদ্মশ্রী করিমুল হক বৈভবের কথা শুনে বলেন, ‘‘ওকে স্যালুট। ওর এই শিক্ষাই সকলের শেখার।’’

বড় হয়ে কী হতে চাও? বৈভবের জবাব, ‘‘ঢাক বাজাব।’’ বিষ্ণুকান্তি বলেন, ‘‘বাজনায়
খুব শখ ওর।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Lok Sabha Election 2024 Help Jalpaiguri Old Man

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}