শহিদ মিনারের সভায় বক্তব্য রাখছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়রা। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।
ধর্মতলায় ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে বিজেপি-র সভার জবাব দিতেই সোমবার শহিদ মিনারের মঞ্চকে ব্যবহার করল তৃণমূল। আগামী ৬ ডিসেম্বর যুব তৃণমূল গাঁধী মূর্তির পাদদেশে ‘শান্তি সন্ধানে সংহতি দিবস’ পালন করবে। সেখানে বক্তা হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের থাকার কথা। এ দিনের সভাকে তারই মহড়া হিসেবে আগে বলা হয়েছিল। কিন্তু ২৪ ঘণ্টা আগের বিজেপি-র সভা সব কিছু ওলটপালট করে দেয়। রবিবার বিজেপি-র ওই সভা থেকে যে অভিযোগের তির তৃণমূল নেতৃত্বের দিকে ছোড়া হয়, তা প্রতিহত করতেই এ দিনের সভাকে বেছে নেন মুকুল রায়, পার্থ চট্টোপাধ্যায় থেকে শুরু করে দলের ‘যুবরাজ’ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়রা।
এ দিন সভার শুরুতেই বিজেপি-র অমিত শাহ, সিদ্ধার্থনাথ সিংহদের কঠোর সমালোচনা করেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়। ওই দিন সিদ্ধার্থনাথ তাঁর ভাষণের একটা জায়গায় ‘ভাগ মদন ভাগ’, ‘ভাগ মুকুল ভাগ’ এবং ‘ভাগ মমতা ভাগ’ বলেছিলেন। এ দিন তারই জবাব দেন মুকুল। তিনি বলেন, “বাংলা থেকে আমাদের পালিয়ে যাওয়ার ডাক দিচ্ছেন কে? না, যিনি বাংলায় জন্মাননি, বাংলাকে ভাল করে চেনেনও না।” শহিদ মিনারের সভায় শঙ্কুদেব পণ্ডা থেকে অশোক রুদ্রের মতো যুব নেতা থেকে শুরু করে হাজির ছিলেন সুব্রত বক্সী, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, সোনালি গুহ, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, ফিরহাদ হাকিম, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, অরূপ বিশ্বাস প্রমুখ। মমতা ছাড়া শীর্ষ নেতৃত্বের প্রায় সকলেই ছিলেন এ দিন।
বিজেপি-র সভা থেকে ওই দিন বারে বারে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আক্রমণ শানানো হয়। বাবুল সুপ্রিয় থেকে শুরু করে অমিত শাহ, রাহুল সিংহ, সিদ্ধার্থনাথ কেউই বাদ যাননি। সারদা-কাণ্ড থেকে খাগড়াগড় বিস্ফোরণ— তৃণমূলকে টেনে মমতাকে এ সবের সঙ্গে জড়িয়ে দেন বিজেপি নেতৃত্ব। তার প্রতিবাদে এ দিন সরব হয় তৃণমূল। রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, “চাঁদের কলঙ্ক থাকতে পারে, কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোনও কলঙ্ক নেই।” তাঁর অভিযোগ, সিবিআইকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করা হচ্ছে। বিজেপি ওই দিন তাদের সভা থেকে তৃণমূলের সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্কের দিকে হাত বাড়ানোর চেষ্টা সংক্রান্ত নানা বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করে। সেই প্রসঙ্গে এ দিন ফিরহাদ বলেন, “যাদের হাতে গুজরাতের রক্ত লেগে আছে, বাংলার সংখ্যালঘু থেকে সংখ্যাগুরু কেউই তাদের বিশ্বাস করে না।”
বিজেপি-র সভায় হাজির জনসমাবেশ নিয়েও এ দিন কটাক্ষ করেন তৃণমূল নেতৃত্ব। রাজ্যের আর এক মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস তো সরাসরি বলেই ফেললেন, “বলা হচ্ছে জনপ্লাবন হয়েছে। কিন্তু প্লাবন তো দূরের কথা, বৃষ্টিও হয়নি।” এ দিনের শহিদ মিনার রবিবারের বিজেপি-কে ৫ গোল দিয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তাঁর কথায়, “আমাদের জুনিয়র টিম ৫ গোল দিয়েছে ওদের। তা-ও তো সিনিয়ররা মাঠেই নামেনি!” আসন্ন কলকাতা পুরসভার নির্বাচনে বিজেপি-কে জেতানোর ডাক দিয়েছিলেন অমিত শাহ। অরূপ তাঁকে পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন এ দিন। তিনি বলেন, “১০টা আসন জিতে দেখান। বুঝব ক্ষমতা!” তিনি বিজেপি-র এ দিন নতুন নামকরণ করেন, ‘বিভেদকামী ঝামেলাবাদী পার্টি’।
তবে এ দিন সব কিছুকে ছাপিয়ে গেল ‘যুবরাজ’-এর ভাষণ। শেষ বক্তা হিসেবে প্রায় ৪০ মিনিট ধরে তিনি কার্যত তুলোধোনা করেন বিজেপি-কে। তাঁর মতে, বিজেপি-র সভায় যে সমস্ত নেতা এসেছিলেন, তাঁদের থেকে তৃণমূলের ব্লক সভাপতিদের গ্রহণযোগ্যতা অনেক বেশি। অমিত শাহ যত বেশি আসবেন, তৃণমূল ততই লাভবান হবে বলে মন্তব্য করেন অভিষেক। কারণ হিসেবে তিনি জানান, গত ৮ সেপ্টেম্বর চৌরঙ্গি কেন্দ্রের উপনির্বাচনে প্রচারে এসেছিলেন অমিত শাহ। বৌবাজারে সভা করেন তিনি। কিন্তু, ফল প্রকাশের পরে দেখা যায়, ১৫০০ ভোটে পিছিয়ে থাকা ওই কেন্দ্র থেকে ১৫ হাজার ভোটে জিতেছেন তৃণমূল প্রার্থী নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়। এর পরেই অমিতকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, “আপনি যত আসবেন, তৃণমূলের জয়জয়কার কেউ আটকাতে পারবে না।” ওই দিন বিজেপি-র সভা থেকে বার বার বিভিন্ন বিষয়ে মমতার কাছে জবাবদিহি চেয়েছিলেন অমিত শাহ। এ দিন সেই অমিতকে নেংটি ইঁদুরের সঙ্গে তুলনা করে অভিষেক বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে জবাব চাইছেন? নেংটি ইঁদুরের সঙ্গে লড়াই করতে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার মাঠে নামে না।”
অন্য দিকে, এ দিনই তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন বিজেপি-র রাজ্য সম্পাদক রাহুল সিংহের ভাই সুদীপ সিংহ। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিনের সভা থেকে তাঁকে দক্ষিণ কলকাতার জেলা তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy