Advertisement
০৪ নভেম্বর ২০২৪

কলকাতায় বিজয়রথ তৃণমূলের, উত্তরে স্বস্তিতে বিরোধীরা

প্রত্যাশিত ভাবেই কলকাতা-সহ রাজ্যের ৯২টি পুরসভার ভোটে আধিপত্য বজায় থাকল তৃণমূলের। আগের চেয়েও আসন বাড়িয়ে কলকাতা পুরসভা দখলে রাখল শাসক দলই। পুরভোটের গণনা শুরু হয়েছে মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে। শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, ৯২টির মধ্যে তৃণমূল এগিয়ে ৭০টি পুরসভায়। বিরোধীদের মধ্যে বামফ্রন্ট ৬ এবং কংগ্রেস ৫টি করে পুরসভায় এগিয়ে। ত্রিশঙ্কু অবস্থায় রয়েছে ১১টি পুরবোর্ড। ভোটে যে প্রবণতা দেখা গিয়েছে, তাতে দক্ষিণবঙ্গে প্রায় একচ্ছত্র দাপট থাকছে তৃণমূলেরই। তুলনায় উত্তরবঙ্গে বিরোধীরা ভাল লড়াই দিতে পেরেছে। শিলিগুড়ি পুরসভা সম্ভবত দখলে আনতে চলেছে বামেরা, দিনহাটা পুরসভায় জয়ী তারাই।

কালীঘাটে তৃণমূল সমর্থকদের উল্লাস। ছবি: সুমন বল্লভ।

কালীঘাটে তৃণমূল সমর্থকদের উল্লাস। ছবি: সুমন বল্লভ।

সন্দীপন চক্রবর্তী
শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০১৫ ১৮:১৫
Share: Save:

প্রত্যাশিত ভাবেই কলকাতা-সহ রাজ্যের ৯২টি পুরসভার ভোটে আধিপত্য বজায় থাকল তৃণমূলের। আগের চেয়েও আসন বাড়িয়ে কলকাতা পুরসভা দখলে রাখল শাসক দলই।

পুরভোটের গণনা শুরু হয়েছে মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে। শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, ৯২টির মধ্যে তৃণমূল এগিয়ে ৭০টি পুরসভায়। বিরোধীদের মধ্যে বামফ্রন্ট ৬ এবং কংগ্রেস ৫টি করে পুরসভায় এগিয়ে। ত্রিশঙ্কু অবস্থায় রয়েছে ১১টি পুরবোর্ড। ভোটে যে প্রবণতা দেখা গিয়েছে, তাতে দক্ষিণবঙ্গে প্রায় একচ্ছত্র দাপট থাকছে তৃণমূলেরই। তুলনায় উত্তরবঙ্গে বিরোধীরা ভাল লড়াই দিতে পেরেছে। শিলিগুড়ি পুরসভা সম্ভবত দখলে আনতে চলেছে বামেরা, দিনহাটা পুরসভায় জয়ী তারাই। শিলিগুড়িতে জয়ী হয়েছেন প্রাক্তন পুরমন্ত্রী, সিপিএমের অশোক ভট্টাচার্য। আবার উত্তর দিনাজপুর জেলার দু’টি পুরসভায় প্রভাব ধরে রাখতে পারছেন কংগ্রেস নেত্রী দীপা দাশমুন্সি। মুর্শিদাবাদেও কান্দি, লালবাগের মতো পুরসভায় গড় অটুট রাখতে চলেছে কংগ্রেস।

কলকাতা যা ছিল (২০১০)

কলকাতা যা হল (২০১৫)

তৃণমূল ৯৫

তৃণমূল ১১৪

বামফ্রন্ট ৩২

বামফ্রন্ট ১৫

কংগ্রেস ১০

বিজেপি

বিজেপি

কংগ্রেস

অন্যান্য

কলকাতায় অবশ্য বিরোধীদের বহু পিছনে ফেলে এগিয়ে গিয়েছে তৃণমূল। মোট ১৪৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে এখনও পর্যন্ত শাসক দল এগিয়ে ১১৪টিতে। বামেরা ১৫, বিজেপি ৭, কংগ্রেস ৫ এবং অন্যান্যেরা ৩টি ওয়ার্ডে এগিয়ে। এর মধ্যে বেশ কিছু ওয়ার্ডের ফল ইতিমধ্যেই ঘোষিত। আনুষ্ঠানিক ভাবে গোটা পুরসভার ফল ঘোষণা অবশ্য এখনও বাকি। নামী প্রার্থীদের মধ্যে বিদায়ী মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় ৫ হাজারেরও বেশি ভোটে জয়ী হয়েছেন। জিতেছেন অতীন ঘোষ বা পুরভোটের ঠিক আগে দল বদলে তৃণমূলে আসা মালা রায়। আবার হেরে গিয়েছেন ডেপুটি মেয়র ফরজানা আলম, বিদায়ী পুরবোর্ডের চেয়ারম্যান সচ্চিদানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়, মেয়র পারিষদ পার্থপ্রতিম হাজারি, মইনুল হক চৌধুরী। পরাজিত হয়েছেন বিদায়ী পুরবোর্ডের বিরোধী নেত্রী, সিপিএমের রূপা বাগচী। বিগত বোর্ডে ৩ এবং ১১ নম্বর বরোয় বেশ কিছুটা প্রভাব ছিল বামেদের। এ বার দেখা যাচ্ছে, সেই এলাকাতেই বামেদের বেশি ধাক্কা দিয়েছে তৃণমূল। বেলেঘাটায় ৩ নম্বর বরোর মধ্যে ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূলের প্রার্থী অলকানন্দা দাস জিতেছেন ১৪ হাজারের বেশি ভোটে! যদিও ওই ওয়ার্ডের লাগোয়া ২৯ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল প্রার্থী, বিধায়ক পরেশ পালকে প্রায় ৮ হাজার ভোটে হারিয়ে দিয়েছেন কংগ্রেসের বিদায়ী কাউন্সিলর প্রকাশ উপাধ্যায়! ৬২ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূলের দাপুটে নেতা ইকবাল আহমেদের কন্যা সানার জয় এসেছে প্রায় ১৫ হাজার ভোটে! স্বাভাবিক ভোট হলে এমন ব্যবধান কোনও মতেই সম্ভব নয় বলে বিরোধীদের দাবি। শোভনবাবু অবশ্য জানিয়ে দিয়েছেন, বিরোধীদের যাবতীয় অপপ্রচার এবং অভিযোগ নস্যাৎ করে মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপরেই ভরসা রেখেছেন।

স্বয়ং মমতা এ বারের পুরভোটের জয় উৎসর্গ করেছেন মা-মাটি-মানুষকেই। বিরোধী এবং সংবাদমাধ্যমের যাবতীয় অপপ্রচারকে হারিয়ে তাঁরা জয়ী হয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি এ দিন বলেছেন, ‘‘বিরোধীরা রিগিং, রিগিং বলে হইচই করছিল! এক শ্রেণির সংবাদমাধ্যমও নানা মিথ্যে খবর করেছে আমাদের বিরুদ্ধে। রিগিং যদি হতো, আমাদের বর্তমান কাউন্সিলরেরা কি হারতেন?’’ তবে ‘কুত্সার জবাবে জয়’ এলেও নেপাল ও উত্তরবঙ্গে ভূমিকম্পের কারণে বিজয় মিছিল করতে দলের কর্মীদের নিষেধ করেছেন মমতা। আগামী ৯ মে ব্লকে ব্লকে রবীন্দ্র জয়ন্তী পালন করেই তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা মানুষকে কৃতজ্ঞতা জানাবেন বলে মমতা জানিয়েছেন।

উত্তরবঙ্গের চিত্র অবশ্য কলকাতার চেয়ে আলাদা। শিলিগুড়িতে ৪৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে বামেরা ২৩, তৃণমূল ১৭, কংগ্রেস ৪ এবং বিজেপি ২টি ওয়ার্ডে জিতেছে। জয়ী এক নির্দল প্রার্থীর সমর্থন নিয়ে তাঁরাই সেখানে বোর্ড গড়বেন বলে বামেদের মেয়র পদ-প্রার্থী অশোকবাবু আশাবাদী। তাঁর মতে, ‘‘এই জয় গণতন্ত্রের। সব মানুষের জন্য এই লড়াইটা লড়েছিলাম। মানুষের জন্যই এই ফল সম্ভব হয়েছে।’’ যদিও তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশের দাবি, তাঁদের হারানোর জন্য বিরোধীরা যে রামধনু জোট গড়েছিল, ভোটের ফলেই তা স্পষ্ট। দিনহাটা পুরসভায় জয়ী ফরওয়ার্ড ব্লক বিধায়ক উদয়ন গুহের প্রতিক্রিয়া, ‘‘এই জয় দিনহাটার গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষের। আর আমার ব্যক্তিগত জয়টা রবীন্দ্রনাথ ঘোষকে (কোচবিহারের তৃণমূল জেলা সভাপতি এবং রাজ্যের পরিষদীয় সচিব) উৎসর্গ করছি!’’

দক্ষিণবঙ্গের মধ্যে ভোটের দিন তুমুল অশান্তি দেখেছিল কাটোয়া পুরসভা। ভোটগণনায় দেখা যাচ্ছে, এখনও পর্যন্ত তৃণমূল এবং কংগ্রেসের লড়াই সেখানে সমানে সমানে। কাটোয়ার মতোই ত্রিশঙ্কু অবস্থায় আছে পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়্গপুর, রামজীবনপুর, মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ান ও বেলডাঙা, দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগর-মজিলপুর। উত্তরবঙ্গের কোচবিহারও তা-ই। আর বর্ধমানের দাঁইহাট, মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর, জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জ, নদিয়ার তাহেরপুর পুরসভায় বোর্ড গড়তে চলেছে বামেরা।

ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে তৃণমূল বিরোধীদের প্রায় নিশ্চিহ্ন করে আধিপত্য বিস্তার করেছে! কাঁচরাপাড়ায় মুকুল রায়ের পুত্র, তৃণমূল বিধায়ক শুভ্রাংশু রায় তিন হাজারের বেশি ভোটে জিতেছেন। উত্তর ২৪ পরগনার বিস্তীর্ণ অঞ্চলেই অবশ্য ভোট-লুঠের অভিযোগ এনেছিল বিরোধীরা। কাঁচরাপাড়া, হালিশহর, নৈহাটি, ভাটপাড়া, ব্যারাকপুর, টিটাগড়, খড়দহ, কামারহাটির মতো পর পর সব পুরসভাতেই বিরোধীদের ভাগে জুটেছে হাতে-গোনা কয়েকটি মাত্র আসন! গঙ্গার অন্য পারে হুগলি শিল্পাঞ্চলের ভদ্রেশ্বর, বৈদ্যবাটী, শ্রীরামপুর, রিষড়া, কোন্নগরের মতো পুরসভাতেও একচ্ছত্র দাপট তৃণমূলেরই।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE