Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
আনন্দবাজার ওয়েব এক্সক্লুসিভ

কে এই সঞ্জয় সেন?

আগামী দশ বছর কেন! তার পরেও হয়তো ওঁকে শুনতে হবে যে, আসল কৃতিত্বটা তাঁর ছিল না! ছিল সুভাষ ভৌমিকের! মোহনবাগানের এই টিমটা তাঁরই আসলে তৈরি করা। সঞ্জয় সেন সেই জমিতে ফুল ফুটিয়েছেন মাত্র। যেমন গত চুয়াল্লিশ বছর ধরে শুনে আসছেন অজিত ওয়াড়েকর। যে, ১৯৭১-এ ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর ইংল্যান্ডের জোড়া সিরিজ জেতার আসল কারিগর নাকি টাইগার পটৌডি। টিমকে তিনি তৈরি করেছিলেন। ওয়াড়েকর নন।

গৌতম ভট্টাচার্য
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০১৫ ০০:০১
Share: Save:

আগামী দশ বছর কেন! তার পরেও হয়তো ওঁকে শুনতে হবে যে, আসল কৃতিত্বটা তাঁর ছিল না! ছিল সুভাষ ভৌমিকের!

মোহনবাগানের এই টিমটা তাঁরই আসলে তৈরি করা। সঞ্জয় সেন সেই জমিতে ফুল ফুটিয়েছেন মাত্র। যেমন গত চুয়াল্লিশ বছর ধরে শুনে আসছেন অজিত ওয়াড়েকর। যে, ১৯৭১-এ ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর ইংল্যান্ডের জোড়া সিরিজ জেতার আসল কারিগর নাকি টাইগার পটৌডি। টিমকে তিনি তৈরি করেছিলেন। ওয়াড়েকর নন।

মাত্র মাসখানেক আগে আরব সাগরের ধারে দশ তলার ফ্ল্যাটে বসে এক ভদ্রলোক বলছিলেন, ‘‘পটৌডি থাকলে ওই সিরিজটা আমরা জিততাম না। টিমে পরিবেশটাই অন্য রকম করা হয়েছিল। রোজ খেলার পর আমার ঘরে ড্রিঙ্কসের আসর বসত। বারটেন্ডার পালা করে হত জয়সিমা আর দুরানি। দুটো সবচেয়ে সিনিয়র ক্রিকেটারকে এমন কায়দা করে ইনভল্‌ভ করিয়ে দিয়েছিলাম যে, টিমের স্পিরিটটাই অন্য জায়গায় চলে গিয়েছিল।’’

বক্তার নাম অবশ্যই অজিত ওয়াড়েকর। ক্রিকেট বোদ্ধাদের প্রসংশা আজও পটৌডির দিকে ধাবমান। যা শুনে যিনি মৃদু হেসে বলেছিলেন, ‘‘আহা রে উইসডেনে ওরা ঢুকতে পারেনি। ক্রিকেট রেকর্ডেও না। ওখানে ১৯৭১-এর পাশে লেখা থাকবে অজিত ওয়াড়েকর। আমি মারা যাওয়ার পরেও।’’

সঞ্জয় সেনও সম্ভবত ভবিষ্যৎ জীবনে কলকাতার ফুটবল লিখিয়েদের একই কথা বলে যাবেন, ‘‘যখন ২০১৫ আই লিগ চ্যাম্পিয়ন দেখাবে পাশে আমার নামটাই জড়িয়ে থাকবে।’’

নাকি তাও বলবেন না? মোহনবাগান যখন ০-১ পিছিয়ে। যখন ক্রমশ বিলীন হচ্ছে আই লিগ জেতার স্বপ্ন। এই লম্বা, স্টাউট চেহারার কালো শার্ট টাচ-লাইনের ধারে অচঞ্চল পদচারণায় ব্যস্ত ছিলেন। কোথায় পিকে-র গর্জন। কোথায় সুভাষের আবেগ। কোথায় সুব্রতর আক্রমণাত্মক মুখভঙ্গি। এই লোকটি প্লেয়ার বদল অবধি করতে যাননি। যা বড় ক্লাবের কোচেরা সমর্থকদের থেকে পিঠ বাঁচাতে ঐতিহাসিক ভাবে করে এসেছেন। যে আমি একটা কিছু প্রাণপন চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমি মাঠের বাইরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হারিনি!

অত্যন্ত পক্ষপাতপূর্ণ এবং আশ্চর্যজনক ভাবে বেঙ্গালুরু এফসি-র পক্ষে টেনে ধারাভাষ্য শেষ হওয়ার পর ম্যাচ পর্যালোচনা টেন অ্যাকশনেই শুনছিলাম। যেখানে বহু বছরের নামী ফুটবল বিশেষজ্ঞ নভি কাপাড়িয়া বলছিলেন, ‘‘সঞ্জয় যেন ভারতীয় ফুটবলের মরিনহো। নিজে বড় ফুটবলার না হয়েও বড় কোচেদের ছুঁয়ে ফেললেন।’’

শুনতে শুনতে মনে হচ্ছিল সত্যি তো একটা ট্রেন্ড চালু করে দিলেন সঞ্জয় সেন। যে ফুটবল বোঝা এবং দল পরিচালনার জন্য সব সময় সর্বোচ্চ পর্যায়ের ফুটবল খেলার দরকার নেই। আজ লিখতে বসলে মনে হচ্ছে, পিকে-অমলদের আমলে তো দল পরিচালনা তুলনামূলক ভাবে অনেক সহজ ছিল। অর্ধেকের বেশি প্লেয়ার বাংলার। আই লিগ বা জাতীয় লিগের বালাই ছিল না। এত বেশি ম্যাচ ছিল না।

একটা চিমা, একটা মজিদ বাসকারকে সামলাতে তখনকার দিনে ঘাম ছুটে গিয়েছে পিকে-র। সঞ্জয়কে তো প্রায় পুরোটাই অবাঙালি এবং বিদেশি ব্রিগেডের ম্যান ম্যানেজমেন্ট করতে হয়েছে।

শেষ অ্যাওয়ে ম্যাচ গত বারের চ্যাম্পিয়ন টিমের বিরুদ্ধে। তার মাঠে। তারা ১-০ এগিয়ে। প্রচণ্ড বৃষ্টি এবং প্রায় খেলার অযোগ্য সারফেস হয়ে যাচ্ছে এই অবস্থায় এমন অচঞ্চল থেকে দল পরিচালনা কলকাতা মাঠে গত ৩০ বছরে কাউকে দেখিনি। মনে করতে পারছি না। এক মাত্র অরুণ ঘোষ। কিন্তু, অরুণ তো সফল কোচেদের তালিকাতেই পড়েন না।

সঞ্জয় সেনকে ব্যক্তিগত ভাবে চিনি না। সহকর্মীদের কাছে তাঁর সম্পর্কে শুনি। বা তাঁদের নেওয়া ওঁর ইন্টারভিউগুল‌ো পড়ি। সময় বলে দেবে আজকের তুঙ্গস্পর্শী সাফল্য নিয়ে আগামী দিনের ‘সঞ্জয়উবাচ’ কেমন চেহারা নেবে।

অমল দত্তের মতো খামখেয়ালি হয়ে যাবেন? পিকে-র মতো দীর্ঘ দিন থাকবেন? দ্রুতই বিশাল সাফল্য পাওয়া অনেকের মতো বিগড়ে যাবেন?

জানি না। জানতে চাইছি না। ওয়াড়েকরের মতো রেকর্ড বইটা দেখছি এই মুহূর্তে। যা জানাচ্ছে, আই লিগ ২০১৫ অঘোষিত ফাইনালের ভাষ্যকার তিনি মোটেও ছিলেন না যে ধৃতরাষ্ট্রকে যুদ্ধের বর্ণনা শুনিয়ে গিয়েছেন!

তিনি সঞ্জয় সেনই ছিলেন বাগানের আসল যোদ্ধা। অর্জুন! তাঁকে বর্ণনা করার জন্য এখন কিছু সঞ্জয়ের দরকার।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE