এক-দু’জন নয়। অভিযোগ, আট-ন’জন মিলে রাতের পর রাত ধর্ষণ করত তাকে। আর সেই ধর্ষণে মদত দিত দলেরই এক মহিলা। সেই মহিলাই দলের অন্যতম পাণ্ডা! উত্তরপ্রদেশের বিজনৌর থেকে উদ্ধার হওয়া কলকাতার বাগুইআটি এলাকার বাসিন্দা বছর ষোলোর নাবালিকার চেহারা দেখে এবং পরে তার বিবরণ শুনে শিউরে উঠেছিলেন এ রাজ্যের সিআইডি-র অ্যান্টি হিউম্যান ট্রাফিকিং ইউনিট-এর (এএইচটিইউ) আধিকারিকেরা।
পরে সেই মেয়েরই কাছ থেকে চক্রের প্রতিটি সদস্যের বিবরণ শুনে উত্তরপ্রদেশ এবং উত্তরাখণ্ডের পুলিশের সহায়তায় জালে ধরা পড়ল আন্তঃরাজ্য পাচার চক্রের মহিলা পাণ্ডা-সহ পাঁচ দালাল। তবে আর এক পাণ্ডা বিহারীর খোঁজে তল্লাশি চলছে বিভিন্ন রাজ্যে।
সিআইডি সূত্রের খবর, বাগুইআটির বাসিন্দা বছর ষোলোর ওই কিশোরী পড়শি এক যুবকের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। কিন্তু বাড়ির মত না থাকায়, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে সে ওই যুবকের সঙ্গে পালিয়ে যায়। প্রায় মাস দুই ধরে মেয়েটির পরিবার বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ চালিয়েও হদিশ পায়নি তার। স্থানীয় থানা, এমনকী, সিআইডিতেও মেয়েটির নিখোঁজ ডায়েরি হয়। এরই মধ্যে তিন মাসের মাথায়, আচমকা মায়ের মোবাইলে ফোন করে ওই কিশোরী। কিন্তু মাত্র দু’-তিন মিনিট। তার পর ফোন কেটে যায়। কিন্তু ওইটুকু কথাই আলো দেখায় তদন্তকারী অফিসারদের।
মোবাইলের সূত্র ধরে খোঁজ করতে করতে মেয়েটির হদিশ মেলে উত্তরপ্রদেশের বিজনৌরে। আর সেই বিজনৌর থেকেই সোমবার গ্রেফতার হয় পাচার চক্রের পাণ্ডা মহিলা চিত্রা শর্মা। বিজনৌরের বাসিন্দা হলেও চিত্রার যোগাযোগ ছিল উত্তরাখণ্ডের দেহরাদূন এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্তের দালালদের সঙ্গে। আর এ ভাবেই নাবালিকাদের বিয়ের টোপ দিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মেয়েদের নিয়ে এসে বিক্রি করে দেওয়া হত বলে প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা। চিত্রার সঙ্গে এই চক্রে তার স্বামী রাজীব শর্মা এবং ছেলে শুভম শর্মাও জড়িত। পুলিশ এদের ছাড়াও বিষম শর্মা এবং সুশীল শর্মা নামের দুই অপরাধীকেও গ্রেফতার করেছে।
গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, উদ্ধারের পর মেয়েটি তদন্তকারী দলকে জানায়, যুবকটি কলকাতা থেকে প্রথমে নিয়ে যায় ঝাড়খণ্ডের পালামৌতে। সেখানে নিয়ে গিয়ে তাকে বিয়েও করে। কিন্তু পরে সেই ‘স্বামী’ই এক দিন উত্তরাখণ্ডের দেহরাদূনে বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার নাম করে তুলে দেয় তাকে একটি লোকের হাতে। সেখানে কয়েক দিন। আবার সেখান থেকে উত্তরপ্রদেশের বিজনৌরে। একের পর এক লোকের হাতে হাতবদল হলেও, তাকে কোনও যৌন ব্যবসায় নামায়নি এই চক্রটি। উল্টে চক্রের লোক জনই দিনের পর দিন তাকে ধর্ষণ করত। মেয়েটি গোয়েন্দাদের জানিয়েছে, আর সব কিছু হত চিত্রার নির্দেশে। তবে চিত্রার সঙ্গে আর একটি লোক ছিল, বিহারি। সোমবার সবাইকে ধরতে পারলেও, সে পালিয়েছে বলেই সিআইডি সূত্রের খবর।
সিআইডি-র অ্যান্টি হিউম্যান ট্রাফিকিং ইউনিটের আধিকারিক শর্বরী ভট্টচার্য জানাচ্ছেন, বিয়ের টোপ দিয়ে মেয়ে পাচারের ঘটনা এর আগেও একাধিক এসেছে। কিন্তু একটি চক্রের এত লোককে এক সঙ্গে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy