ফাইল চিত্র।
শেষমেশ দল থেকে আরাবুল ইসলামকে বহিষ্কার করল তৃণমূল কংগ্রেস। মঙ্গলবার দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় সাংবাদিক বৈঠক করে এ কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির রিপোর্ট পাওয়ার পরেই দল এই ব্যবস্থা নিয়েছে। এরই ভিত্তিতে ভাঙড়ের প্রাক্তন বিধায়ক তথা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আরাবুল ইসলামকে ছয় বছরের জন্য বহিষ্কার করা হল।” পাশাপাশি ওই ব্লকেরই তৃণমূল নেতা জাহাঙ্গির ইসলামকেও একই শাস্তি দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন পার্থবাবু। ঘটনাচক্রে আরাবুল পার্থবাবুরই অনুগামী বলে সর্বজনবিদিত। সরানো হয়েছে ভাঙড়ে শাসক দলের আর এক নেতা কাইজারকেও। তিনি ছিলেন ভাঙড়ের তিনটি অঞ্চলের সভাপতি। তাঁকে ওই পদ থেকে সরানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি এবং শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির সদস্য সুব্রত বক্সি।
এরই পাশাপাশি পূর্ব মেদিনীপুরের দুই নেতা সাংসদ শিশির অধিকারী এবং অখিল গিরিকে পরস্পরের বিরুদ্ধে বিষোদ্গারের জন্য দলের পক্ষ থেকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, দলে অন্যায় কাজ হতে দেখলে, অগণতান্ত্রিক কিছু ঘটতে দেখলে সংবাদ মাধ্যমে মুখ না খুলে দলকেই জানাতে হবে। পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, প্রয়োজনে ওই দু’জনকে চিঠিও দেওয়া হবে। সোমবার চণ্ডীপুরে সাংসদ কার্যালয়ের উদ্বোধন করতে গিয়ে শিশির বলেন, “একটা টেন্ডার হলে ঠিকাদারকে ধরে এনে বলা হয় ৬ শতাংশ কমিশন দিতে হবে। ঠিকাদার ফোন করে বলে বাঁচান বাঁচান! একটা চাকরি এলে বলে ১০ লাখ, ২০ লাখ টাকা দিতে হবে... কে নিল টাকা, এর মধ্যে কে আছে... ৫৮ বছর রাজনীতি করছি। এ সব শুনিনি।” এই পরিপ্রেক্ষিতে এমন সিদ্ধান্ত। পার্থবাবু আরও জানান, তৃণমূল কোনও দলবিরোধী, আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গকারী কারওকেই প্রশ্রয় দেবে না।
গত শনিবার ভাঙড়ে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে রমেশ ঘোষাল এবং বাপন মণ্ডল নামে দু’জন খুন হন। অভিযোগ ওঠে ভাঙড়ের প্রাক্তন বিধায়ক তথা তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলাম অনুগামীরাই রয়েছেন এই খুনের পেছনে। যদিও কলকাতা লেদার কমপ্লেক্স থানায় লিখিত অভিযোগে রমেশ বা বাপনের পরিবারের তরফে কোনও নামই লেখা হয়নি। অভিযোগ ওঠে, থানায় বসে থাকা আরাবুলের নির্দেশেই পুলিশ দুই পরিবারের কাছ থেকে সাদা কাগজে সই করিয়ে নেয়। পরে সেই অভিযোগপত্র পূরণ করে তৃণমূলেরই এক স্থানীয় কর্মী।
ঘটনার কথা জানতে পেরে অস্বস্তি বাড়ে দলের। গোটা ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ঘনিষ্ঠ মহলে তিনি জানান, রং না দেখে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশ প্রশাসনকে বলা হবে। যদিও তার পরেও ঘটনার মূল অভিযুক্ত আরাবুল এ দিনও স্বমহিমায় ঘুরে বেড়িয়েছেন ভাঙড়ে।
এরই পাশাপাশি, ভাঙড়ে জোড়া খুনের ঘটনায় আরও দু’জনকে গ্রেফতার করা হল। মঙ্গলবার সকালে কুতুবউদ্দিন গাজি এবং আলম শাহাজি নামের দুই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ দিন ধৃতদের বারুইপুর আদালতে তোলা হয়। এই নিয়ে ভাঙড়ে খুনের ঘটনায় মোট ১০ জনকে গ্রেফতার করা হল।
রমেশ ঘোষালের স্ত্রী আশাদেবী জানিয়েছেন, আরাবুলের নির্দেশে পুলিশ সাদা কাগজে সই করে দেওয়ার কথা বললেও শেষ পর্যন্ত জোরাজোরি করে তাঁরা ওই অভিযোগপত্রে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির গুলিতে তাঁর স্বামীর মৃত্যু হয়েছে বলে লিখতে পেরেছিলেন। নিহত বাপন মণ্ডলের মা যদিও সেই সুযোগও পাননি। তাঁকে সাদা কাগজে সই করে পুলিশের হাতে তুলে দিতে হয়। পুলিশ যদিও এ দিন জানিয়েছে, আশাদেবীর অভিযোগের ভিত্তিতেই কুতুবউদ্দিন ও আলমকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সোমবার একই অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল পিনাকী মণ্ডল নামে এক ব্যক্তিকে। ওই দিন বারুইপুর আদালতে তোলা হলে বিচারক তার পাঁচ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন।
এর আগে এই খুনে জড়িত থাকার অপরাধে সাত জনকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। ধৃতেরা হলেন— পাঁচু মণ্ডল, তাপস মণ্ডল, রঞ্জিত মণ্ডল, শান্তনু ঘোষাল, বাপি গাজি, দীপঙ্কর বিশ্বাস এবং নিমাই বিশ্বাস। রবিবার বারুইপুর আদালত ধৃতদের প্রত্যেককে পাঁচ দিনের পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছিল।
ধৃত পাঁচু মণ্ডল সক্রিয় তৃণমূল কর্মী। তিনি স্থানীয় পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান ছিলেন। আরাবুলের সঙ্গে বিবাদের জেরেই ওই পদ হারাতে হয় তাঁকে। পাঁচুবাবু পুলিশ, আদালত এবং সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, রমেশ মণ্ডলকে খুন করার পর দুষ্কৃতীরা তাঁর বাড়িতেও হামলা চালায়। ভয় পেয়ে দুই ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে পালিয়ে যান তিনি। দুষ্কৃতীরা তাড়া করে তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। সপরিবার নয়ানজুলিতে লাফিয়ে পড়ায় গুলি তাঁর গায়ে লাগেনি। সেই গুলিই গিয়ে লাগে বাপন মণ্ডলের গায়ে। মৃত্যু হয় বাপনের। যদিও শেষমেশ পুলিশ দুই ছেলে তাপস এবং রঞ্জিত-সহ পাঁচুবাবুকে বাপন খুনে গ্রেফতার করে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy