ধর্মতলামুখী ভিড়। রবিবার রণজিত্ নন্দীর তোলা ছবি।
দুপুর ২.৫৫: মঞ্চে বলতে উঠলেন অমিত শাহ।
তিনি যা বললেন:
• ভারত মাতা কি, জয়! আরও জোরে বলুন, আওয়াজ সচিবালয় পর্যন্ত যাওয়া উচিত।
• দিদি, আপনি সভার অনুমতি দিতে চাননি। শেষে মঞ্চও ছোট করে দিয়েছেন। কিন্তু, বাংলার মানুষের মনে বিজেপি-র যে জায়গা তৈরি হয়েছে, তাকে কী করে ছোট করবেন!
• আগামী বছরের ৩০ নভেম্বর বিজেপি-র ‘উত্থান দিবস’ হবে না, হবে তৃণমূলের ‘পতন দিবস’।
• সম্প্রতি কালো টাকার বিরুদ্ধে সংসদের বাইরে এবং ভিতরে কালো ছাতা-শাল নিয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন তৃণমূল সাংসদেরা। দিদি, আপনার নির্দেশে সাংসদেরা কালো টাকা নিয়ে এ বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। আপনি শুধু এক বার বলুন সারদার টাকা কালো না সাদা! দোষীদের কেন বাঁচাচ্ছেন?
• মনে আছে সিঙ্গুরে আপনি আন্দোলন করেছিলেন। আমরণ অনশনও করেছিলেন। কিন্তু সারদা-কাণ্ডে আপনি দায়িত্ব এড়াচ্ছেন কেন? চিট ফান্ড কেলেঙ্কারিতে তৃণমূলের নেতাদের মদত রয়েছে।
• আপনি বলেছেন, সিবিআই আপনাদের নেতাদের ফাঁসিয়েছে। সিবিআই ঠিক না ভুল সেটা আদালত ঠিক করবে। কিন্তু, হিম্মত থাকলে আপনি শুধু বলুন, সারদা-কাণ্ডে যাঁদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তাঁরা নির্দোষ!
• সৃঞ্জয় বসু কে? কে কুণাল ঘোষ? কে কিনেছিল আপনার ছবি? শ্যামল সেন কমিশন কেন বন্ধ হয়ে গেল?
• ২ অক্টোবর খাগড়াগড় বিস্ফোরণ-কাণ্ডে নিহত শাকিল আহমেদ আগেই অভিযুক্ত ছিল। ওকে কেন গ্রেফতার করেনি রাজ্য পুলিশ?
• নুরুল হাসান চৌধুরী কে ছিল?
• এনআইএ-কে কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না।
• আপনাকে রাজ্যের মানুষ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বানিয়েছে। অনুপ্রবেশকারীরা ভোট দিয়ে আপনাকে বাংলাদেশের মুখ্যমন্ত্রী বানায়নি। তাই বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের আশ্রয় দেওয়া বন্ধ করুন।
• খাগড়াগড়ের বিস্ফোরণের পিছনে সারদার টাকা আছে। সিবিআই সেটাও দেখছে। এই বিস্ফোরণে তৃণমূলের নেতারাও জড়িত। ভোটব্যাঙ্ক নিয়ে কেন রাজনীতি করছেন?
• মোদীজির ইচ্ছে ছিল, কংগ্রেসমুক্ত ভারত। তা হয়েছে। তাঁর আরও ইচ্ছে তৃণমূলমুক্ত পশ্চিমবঙ্গ। সেই স্বপ্নপূরণ করার দায়িত্ব আপনাদের।
• রাজ্যে বিদ্যুত্ উত্পাদন বাড়েনি। অথচ বিদ্যুত্ উদ্বৃত্ত। কেন? কারণ, রাজ্যের কারখানা সব বন্ধ। একে একে বন্ধ হয়েছে রাজ্যের সমস্ত উদ্যোগ। বর্তমানে প্রায় ১৬ হাজার চা-শ্রমিক রয়েছেন যাঁদের কোনও রোজগার নেই। পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি এলে পাঁচ বছরের মধ্যে দেশের এক নম্বর হিসেবে এই রাজ্যকে হিসেবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিলাম।
• দেশের সবচেয়ে মেধাবী যুবক-যুবতী এ রাজ্যে আছেন। আছেন মেহনতি যুবকও। সুজলাং-সুফলাং বাংলা গোটা দেশকে পথ দেখাতে পারে।
• মহারাষ্ট্র, হরিয়ানায় বিজেপি জিতেছে। ঝাড়খণ্ড, জম্মু-কাশ্মীরে নির্বাচন চলছে। সেখানেও বিজেপির জয় হবে। এর পর একে একে দিল্লি, বিহারেও জয় হবে বিজেপির।
• মহারাষ্ট্রে বিজেপি জিতেছে, সে কোনও বিজয় নয়। কোথাকার কোনও কিছুই বিজয় নয়। পশ্চিমবঙ্গে সরকার গঠন করতে পারাটাই বিজেপি-র আসল বিজয়। আপনারা সবাই বিজেপি-র সঙ্গে পরিবর্তনের সেই রাস্তায় হাঁটতে রাজি তো?
• সামনেই কলকাতায় পুর-নির্বাচন। আগে গোটা দেশের পরিবর্তনে কলকাতা পথ দেখাত। পুরসভায় বিজেপি-কে এনে গোটা পশ্চিমবঙ্গকে পথ দেখাক কলকাতা। পুরসভার এই নির্বাচন থেকেই শুরু হোক তৃণমূলের পতন।
• অমিত শাহ কে? দিদি, শুনতে পেলে শুনুন, দেখতে পেলে দেখুন। আমি অমিত শাহ। বিজেপি-র এক সামান্য কর্মকর্তা। আমিই অমিত শাহ। বাংলার মাটি থেকে তৃণমূলকে উপড়ে ফেলতে এসেছি।
• বাংলায় এখন এমন সরকার চাই, যা বিস্ফোরণে জড়িতদের মদত নয়, বরং দোষীদের ফাঁসির দড়ি পর্যন্ত নিয়ে যাবে। এমন সরকার যা, চিট ফান্ড কাণ্ডে জড়িতদের উপযুক্ত সাজা দেবে, অনুপ্রবেশকারীদের আশ্রয় দেওয়া বন্ধ করবে।
দুপুর ২.৩৫: মঞ্চে এলেন রাহুল সিংহ।
তিনি যা বলেন:
• আমি যত দূর দেখছি, কেবল মাথা আর মাথা।
• বিজেপি-র সভায় যে এত ভিড় হবে, তা তৃণমূল বুঝতে পেরেছিল। ব্রিগেডে বলেছিলাম, তোমারে বধিবে যে, গোকুলে বাড়িছে সে। এই সভায় বলছি, তোমারে বধিবে যে, ধর্মতলায় বাড়িছে সে।
• অবস্থা এমন জায়গায় গিয়েছে, বিজেপি-ভীতিতে ভুগছে তৃণমূল। সরকারে আছেন বলে বিজেপি-র সভা বানচাল করতে হবে?
• বিজেপি সিপিএম নয় যে, ফিস ফ্রাই খাওয়াবেন আর নেতারা আপনাদের বশে এসে যাবেন। কংগ্রেসও নয় যে দিল্লিতে গিয়ে নেতাদের সঙ্গে দেখা করলেই আপনার পায়ে মাথা ঠেকাবে কর্মীরা।
• মনে পড়ছে মহাভারতের কথা। সেখানে পাণ্ডবেরা চেয়েছিল পাঁচটি গ্রাম। আর কৌরবেরা বলেছিল, সূচাগ্র মেদিনীও কাউকে দেব না। সেখানে পাণ্ডবদের দাবি না মেনে কৌরবদের হয়েছিল বিনাশ। বিজেপি-র দাবি না মানায় তেমনই তৃণমূলের বিনাশ হবে।
• আজ অবধি আপনার সরকার কোন কাজটা করেছে? কোথায় গেল সুইত্জারল্যান্ডের গল্প? লন্ডনের গল্প। আপনি তাঁদের অনিষ্ট করবেন আর রাজ্যের মানুষ আপনাকে ক্ষমা করে দেবে!
• যে ভাবে সাংবাদিক এবং পুলিশের উপরে আপনার বাহিনীকে লেলিয়ে দিয়েছেন, তা লজ্জাজনক।
• আপনার বাড়ি থেকে দু’কিলোমিটার দূরে পুলিশ থানায় টেবিলের তলায় লুকোচ্ছে। ফাইল দিয়ে মাথা ঢাকছে। যত দূর জানি, চোর-গুন্ডারা টেবিলের তলায় লুকোয়।
• যে সাংসদ রেপ করার হুমকি দেন, আপনি তাঁর মুখ আঁচল দিয়ে ঢাকছেন!
• আগে উল্টে দিয়ে পরে পাল্টাতে হয়। ২০১১-তে সিপিএমকে উল্টে তৃণমূল এসেছে, ২০১৬-তে আমরা তাদের পাল্টে দেব।
দুপুর ২.২৫: অমিত শাহকে শুভেচ্ছাজ্ঞাপন রাহুল সিংহের।
দুপুর সওয়া ২টো: মঞ্চে উঠলেন বিজেপি-র কেন্দ্রীয় সম্পাদক ও রাজ্যের পর্যবেক্ষক সিদ্ধার্থনাথ সিংহ।
তিনি যা বলেন:
• বীরভূমের পাড়ুই থেকে আসা কর্মী-সমর্থকদের আমি মাথা ঝুঁকিয়ে সম্মান জানাই।
• রাজ্যে পরিবর্তনের আগে তৃণমূল বলেছিল, তারা তিন ‘এম’-এর সরকার গড়বে। ‘এম’ মানে মমতা, ‘এম’ মানে মাটি, ‘এম’ মানে মানুষ। ২০১১ সালের পর ‘মা-মাটি-মানুষের’ সেই সরকার তিন ‘এম’-এরই হয়, তবে তা মমতা-মুকুল-মদনের সরকার। এখন সেই তিন ‘এম’ হয়েছে ‘বিএমবি’। ২০১৪-তে ‘ভাগ মদন ভাগ’, ২০১৫-তে ‘ভাগ মুকুল ভাগ’, আর ২০১৬-তে ‘ভাগ মমতা ভাগ’। আসলে রাজ্যে একটাই ‘এম’ দরকার, সেটি মোদী।
• মহারাষ্ট্রে হয়েছে, হরিয়ানায় হয়েছে। অমিত ভাইকে এ বার ঝাড়খণ্ড ও বিহারে বিজেপির জয় আনতে হবে। দিদি, এ বার আপনার ভয় আরও বাড়বে। ক্ষমতা ছাড়ুন। ‘ডর ডর কে জিনে মে ক্যায়া ফায়দা।’
• আজ বলা হচ্ছে খাগড়াগড়ের বিস্ফোরণ আরএসএস-এর নির্দেশে ‘র’ করেছে। তা হলে ২০১২-র মেটিয়াবুরুজ, ২০১৩-তে গার্ডেনরিচ, ২০১৪-তে মুর্শিদাবাদের বেলডাঙায় যে বিস্ফোরণ ও রকেট লঞ্চার টেস্ট হয়, কেন্দ্রে তখন তো বিজেপি-র সরকার ছিল না। তা হলে কার নির্দেশে হয়েছিল?
দুপুর ২.০৫: রাজ্যসভার সাংসদ চন্দন মিত্রের বক্তব্যের পর বলতে উঠলেন দার্জিলিঙের সাংসদ সুরিন্দর সিংহ অহলুওয়ালিয়া।
তিনি বলেন:
• রাজ্যে বোমা তৈরি করে তা বাংলাদেশে পাচার করছে তৃণমূল সরকার। যাতে ওই দেশে বিদ্রোহের পরিস্থিতি তৈরি হয়।
• আজ যে ভাবে বাড়ি দখল, জমি দখল চলছে, বোমা তৈরি করছে তৃণমূল, তাতে বাংলার মানুষ আক্রান্ত।
• সন্ত্রাসকে যদি শেষ করতে হয়, তবে টিএমসি-কে শেষ করতে হবে।
• আমরা চাই তৃণমূলমুক্ত পশ্চিমবঙ্গ। আমরা চাই শিল্প, চাকরি, সার্বিক উন্নয়ন এবং সন্ত্রাসমুক্ত পশ্চিমবঙ্গ।
দুপুর ১.৫৫: মঞ্চে এলেন বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ এবং রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ।
মঞ্চে এলেন বাবুল সুপ্রিয় (দুপুর ১.৪৫)।
তিনি যা বললেন:
• আজ নতুন বাংলার শুরুর শুরু।
• শেষের ঘণ্টা বাজবে ২০১৬ সালে।
• দিদি, কালীঘাটে বসে সমস্ত কালি নিজের গায়ে মাখছেন!
• তৃণমূল কংগ্রেসকে নির্মূল কংগ্রেস করব।
এর পরে বলতে ওঠেন বসিরহাট দক্ষিণের বিধায়ক ও বিধানসভায় বিজেপি-র একমাত্র প্রতিনিধি শমীক ভট্টাচার্য।
তিনি যা বললেন:
• পশ্চিমবঙ্গে রাজনীতির মেরুকরণ হয়েছে।
• সিপিএম বিরোধীদের কোনও মর্যাদাই দেয়নি।
• তৃণমূল একই পথে হাঁটছে।
• নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতির জন্ম দিয়েছে তৃণমূল।
• রাজ্য থেকে ‘ফ্লাইট অফ ক্যাপিটাল’ চলছে।
• সব হয়েছে, রাজ্যে এখন লুঙ্গি ডান্স-টা বাকি আছে।
• সংখ্যালঘু ভাইবোনদের মনে রাখতে হবে— তারা মুর্শিদাবাদে বিড়ি বাঁধবে, বসিরহাটে ইটভাঁটায় কাজ করবে, সীমান্তে চোরাপাচারের কাজে যুক্ত হবে, নাকি শহরের উপকণ্ঠে রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করবে।
সভায় বক্তব্য রাখেন বিজেপি-র প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি তথাগত রায়। তৃণমূলকে তিনি সবচেয়ে বড় সাম্প্রদায়িক দল বলে অভিহিত করেন।
দুপুর সওয়া ১টা নাগাদ শুরু হল বিজেপি-র সভা।
সকাল সাড়ে ১১টা:
কলকাতা হাইকোর্টের রায়ে শাসক দলের ‘উদ্যোগ’ বানচাল হওয়ার পর আগ্রহ ছিল দলের ‘উত্থান দিবসে’ ধর্মতলার সভায় কেমন ভিড় হয়! সকাল যদি সারা দিনের মুখ হয়, তবে বলতেই হয় ভিড় টানতে অন্তত প্রাথমিক ভাবে যথেষ্টই সফল বিজেপি। সভাপতি অমিত শাহের রবিবাসরীয় সভাস্থলের দিকে পা বাড়িয়েছেন অসংখ্য দলীয় কর্মী-সমর্থক। এ দিন সকাল থেকেই শিয়ালদহ ও হাওড়া স্টেশন চত্বরে ভিড় জমিয়েছেন রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা বিজেপি-র সমর্থকেরা। দুপুর ১১টার মধ্যেই ভিড় ধর্মতলা থেকে লেনিন সরণি ছাড়িয়েছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা ধর্মতলা ছাড়িয়েছে।
উত্তরবঙ্গ তো বটেই কর্মী-সমর্থকেরা এসেছেন দক্ষিণ ২৪ পরগনা, দুই মেদিনীপুর, নদিয়া-মুর্শিদাবাদ-সহ রাজ্যের নানা দিক থেকে। লোকাল ট্রেনে চড়ে সকাল থেকেই শিয়ালদহ-হাওড়া স্টেশনে নেমে কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে শৃঙ্খলাবদ্ধ ভাবে সভার দিকে এগোতে থাকে মিছিল। এ রকমই এক মিছিলের নেতৃত্বে ছিলেন জাদুকর পি সি সরকার। গত লোকসভা নির্বাচনে তিনি বারাসত থেকে দাঁড়িয়েছিলেন। এ দিন মিছিলে হাঁটতে হাঁটতেই তিনি বলেন, “পরিবর্তনেরও পরিবর্তন দরকার।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy