রাষ্ট্রবিজ্ঞান পড়ে কোন চাকরি করতে পারেন? সংগৃহীত ছবি
উচ্চমাধ্যমিক স্তরে যাঁরা কলাবিভাগ নিয়ে পড়াশুনো করেন, তাঁদের অনেকেরই পছন্দের বিষয় রাষ্ট্রবিজ্ঞান। রাষ্ট্রবিজ্ঞান পড়লে বাস্তব রাজনীতির নানা দিক সম্পর্কে জানা যায় বা সেই বিষয়গুলিকে অনেক সহজেই বিশ্লেষণ করা যায়। আন্তর্জাতিক থেকে রাজ্যস্তরে সরকার, রাষ্ট্র বা অন্যান্য প্রতিষ্ঠান কী ভাবে কাজ করে, তা বোঝার ক্ষেত্রেও শিক্ষার্থীরা তাঁদের বৌদ্ধিক ও বাস্তবিক জ্ঞানকে কাজে লাগাতে পারেন । তবে বিষয় সম্পর্কিত জ্ঞানের বাইরে এই বিষয় পড়ে ভবিষ্যতে কোন পেশাকে বেছে নেওয়া যায় বা কী কী চাকরি পাওয়া যায়, তা নিয়ে অনেকেরই স্পষ্ট ধারণা থাকে না। এই লেখায় যে পাঁচটি পেশাকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক শিক্ষার্থীরা বেছে নিতে পারেন, তা বিস্তারিত আলোচনা করা হল।
১. স্কুল-কলেজে শিক্ষকতা: রাষ্ট্রবিজ্ঞান পড়ে স্নাতক হওয়ার পর শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক ভাবে যে পেশাটি বেছে নিতে পারেন, সেটি হল স্কুল বা কলেজের শিক্ষকতা। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের তাত্ত্বিক বিষয়গুলি সহজ ভাবে অন্যদেরকে বোঝানোতে যদি কেউ দক্ষ হন, তা হলে তাঁদের ক্ষেত্রে এই পেশাই আদর্শ। স্কুলে এই বিষয়টি পড়াতে হলে শিক্ষার্থীদের বিএড ডিগ্রিটি লাভ করতে হবে স্নাতক হওয়ার পর। এর পর সরকারি স্কুলে শিক্ষকতার জন্য টেট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে ও ইন্টারভিউও দিতে হবে। বেসরকারি স্কুলের ক্ষেত্রে অবশ্য বিএড ডিগ্রি পাশের পর এই জাতীয় কোনও পরীক্ষা দিতে হয় না। শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট স্কুলের ইন্টারভিউ প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে হয়। অন্য দিকে, কলেজে পড়াতে হলে স্নাতকোত্তর স্তরে ৫৫ শতাংশ নম্বর সহ নেট/ সেট পরীক্ষাতেও পাশ করতে হয়। যদি কারও গবেষণার ক্ষেত্রটি বেশি পছন্দের হয়, তা হলে তাঁরাও এই নেট/ সেট পরীক্ষা পাশ করে ইউজিসি-র ফেলোশিপ পেতে পারেন।
২. সিভিল সার্ভিস: রাষ্ট্রবিজ্ঞান পড়ে শিক্ষার্থীরা আরও একটি পেশাকেও বেছে নিতে পারেন, সেটি হল সিভিল সার্ভিস। রাজ্য ও কেন্দ্রীয় স্তরে দু'ধরনের সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার আয়োজন করা হয়। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় স্তরের আইএএস, আইপিএস ও আইএফএস পরীক্ষার জনপ্রিয়তা বিপুল। এই পদগুলিতে আসীন ব্যক্তিরা প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে, দেশের আইনরক্ষার ক্ষেত্রে এবং আন্তর্জাতিক স্তরে দেশের প্রতিনিধিত্ব করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন । জাতীয় স্তরে যে পরীক্ষার মাধ্যমে এই পদগুলিতে নিয়োগ করা হয়, সেটি ইউপিএসসি পরীক্ষা এবং রাজ্যস্তরে এর যে পরীক্ষাটি হয় সেটি ডাব্লিউবিসিএস পরীক্ষা বলে পরিচিত। স্নাতক স্তরে রাষ্ট্রবিজ্ঞান পড়লে শিক্ষার্থীরা এই পরীক্ষার বেশির ভাগ বিষয়ই আগে থেকেই পড়ে ফেলার সুযোগ পান।
৩. আইন সংক্রান্ত পেশা : স্নাতকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে পড়ে শিক্ষার্থীরা এর পর আই্ন সংক্রান্ত পেশাতেও যেতে পারেন। যে হেতু, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিষয়গুলি আইনি বিষয়ের সঙ্গে অনেকটাই সম্পর্কিত, তাই এই বিষয়টি পড়ার ক্ষেত্রেও বিশেষ সুবিধা হয় শিক্ষার্থীদের। বিশ্বের অগ্রণী আইনজ্ঞদের অনেকেই রাষ্ট্রবিজ্ঞান বা অর্থনীতির ছাত্র।
৪. সাংবাদিকতা : সংবাদপত্র, গণমাধ্যম বা সমাজমাধ্যমে আমরা যে খবরগুলি দেখি, তার বেশির ভাগই রাজনৈতিক খবর। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক শিক্ষার্থীরা বিষয়গুলির সঙ্গে আগে থেকেই পরিচিত হওয়ার কারণে এই রাজনৈতিক খবরগুলি সহজেই বুঝতে বা বিশ্লেষণ করতে পারেন। এর জন্য স্নাতক হওয়ার পর শিক্ষার্থীরা সাংবাদিকতার কোনও কোর্সও করতে পারেন। তবে সাংবাদিকের পেশায় যাওয়ার জন্য কোনও কোর্স করার বাধ্যবাধকতা নেই। ছাত্রছাত্রীরা সাংবাদিক হিসাবে লেখালেখি, রিপোর্টিং ও সম্পাদকীয় কাজ করতে পারেন।
৫. এনজিওতে কাজ: এনজিও প্রতিষ্ঠানগুলি সরকারের পাশাপাশি সমাজের সমস্ত স্তরে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য ও অন্যান্য পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে স্নাতক শিক্ষার্থীরা যাঁদের সামাজিক সেবামূলক কাজ সম্পর্কে ধারণা বা ভাল লাগা আছে,তাঁরা এনজিওকেও তাঁদের চাকরি ক্ষেত্র হিসাবে বেছে নিতে পারেন।
রাষ্ট্রবিজ্ঞান পড়ে উপরোক্ত পেশাগুলি ছাড়াও রাজনৈতিক বিশ্লেষক, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, আইনসভায় সহকারী-সহ আরও অন্যান্য চাকরি করতে পারেন। প্রতিটি পেশাতেই উপার্জনের সুযোগও মন্দ নয়। তাই এই বিষয়টি পছন্দ হলে নির্দ্বিধায় এই নিয়ে পড়াশুনো করে নিজেদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে পারেন শিক্ষার্থীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy