বছর শেষ হতে চলল। অভিযোগ, এখনও রাজ্যের প্রাথমিক মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের কোনও স্কুলকেই দেওয়া হয়নি কম্পোজ়িট গ্রান্টের টাকা। এই অভিযোগ প্রকাশ্যে আসার পরই নড়েচড়ে বসে রাজ্য সরকার। অবশেষে মোট খরচের ২৫ শতাংশ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করল শিক্ষা দফতর। ইতিমধ্যেই ছাত্রসংখ্যার নিরিখে কোন স্কুল কত টাকা পাবে, তার তালিকাও পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে জেলা স্কুল পরিদর্শকদের কাছে।
কম্পোজ়িট গ্রান্ট বাবদ স্কুলগুলির দৈনন্দিন খরচ চালানোর জন্য কেন্দ্র দেয় ৬০ শতাংশ এবং রাজ্য দেয় ৪০ শতাংশ। পড়ুয়ার সংখ্যার ভিত্তিতে স্কুলকে এই টাকা দেওয়া হয়। শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের স্কুলে যেখানে পড়ুয়ার সংখ্যা ১০০০-এর বেশি, তাদের বছরে এক লক্ষ টাকা পাওয়ার কথা। যেখানে পড়ুয়ার সংখ্যা ১০০০-এর কম, কিন্তু ২৫০-এর বেশি, সেখানে ৭৫ হাজার টাকা এবং যে স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা ১০০ থেকে ২৫০-এর মধ্যে, সেখানে ৫০ হাজার টাকা পাওয়ার কথা। যে স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা ১০০-র আশেপাশে, সেই স্কুলের ২৫ হাজার টাকা পাওয়ার কথা।
আরও পড়ুন:
উপরোক্ত পরিমাণের মাত্র ২৫ শতাংশ দেওয়ার ফলে বছর শেষে যৎসামান্য টাকা পাচ্ছে স্কুলগুলি।
প্রাথমিক, মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলগুলির পড়ুয়ার সংখ্যার ভিত্তিতে তালিকা পাঠানো হয়েছে ডিস্ট্রিক্ট এডুকেশন অফিসারদের (ডিআই) কাছে। সেই তালিকা অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে, পড়ুয়ার সংখ্যা যেখানে ৩০-এর মধ্যে তাদের দেওয়া হবে ২৫০০ টাকা, ৩০ থেকে ১০০র মধ্যে পড়ুয়ার সংখ্যা সেখানে ৬২৫০ টাকা, ১০০ থেকে ২৫০ যেখানে পড়ুয়ার সংখ্যা সেখানে ১২ হাজার ৫০০ টাকা, ২৫০-১০০০ পড়ুয়া হলে দেওয়া হবে ১৮৭৫০ টাকা। আর হাজারের বেশি যাদের পড়ুয়ার সংখ্যা, তাদের দেওয়া হবে ২৫ হাজার টাকা করে।
আরও পড়ুন:
কলকাতার লেকটাউনে অবস্থিত বাঙুর স্কুলের বর্তমান ছাত্রসংখ্যা ১৩০০-র আশপাশে। যার বছরের বিদ্যুৎ বিলের খরচ এক লক্ষ পঁচিশ হাজার টাকা। আর বার্ষিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ছাপাতে খরচ হয়েছে ৩২ হাজার টাকা। বছরশেষে এই সামান্য টাকায় কী হবে, প্রশ্ন তুলছেন স্কুলের প্রধানশিক্ষক।
বাঙুর স্কুলের প্রধানশিক্ষক সঞ্জয় বড়ুয়া বলেন, “যেখানে বছরের ইলেকট্রিক বিল এবং পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ছাপানো বাবদ খরচ প্রায় দেড় লক্ষ টাকা, সেখানে আমরা সরকারের তরফ থেকে পাই এক লক্ষ টাকা মতো। আর এ বছর মাত্র ২৫ শতাংশ। বাদবাকি টাকা কোথা থেকে আসবে!”
স্কুলের প্রধানশিক্ষকদের একাংশের মতে, শিক্ষা দফতর বার বার বলছে, কেন্দ্র কম্পোজ়িট গ্রান্ট বাবদ তাদের অংশের টাকা দিচ্ছে না। তাঁদের প্রশ্ন, কেন্দ্র যদি না-ও দেয়, তা হলে রাজ্য কেন তার অংশের টাকা দিচ্ছে না? আবাস যোজনা থেকে শুরু করে অনেক প্রকল্পই তো রয়েছে, যেগুলিতে কেন্দ্র ও রাজ্য মিলিয়ে টাকা দেয়। সে ক্ষেত্রে কেন্দ্র টাকা না দিলেও রাজ্য দিয়ে দেয়।
শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক কিংকর অধিকারী বলেন, “বছরশেষে মাত্র ২৫ শতাংশ দিয়ে স্কুলগুলির কোনও উপকার হবে না। রাজ্যের উচিত অন্তত নিজের ভাগের ৪০ শতাংশ টাকা দেওয়া। এ ভাবে চলতে থাকলে স্কুলগুলি ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়বে।”
শিক্ষা দফতরের এক কর্তা জানান, চলতি বছরে কম্পোজ়িট গ্রান্ট বাবদ বরাদ্দ টাকা অনুমোদনের জন্য কেন্দ্রের কাছে দফতরের তরফে আবেদন করা হয়েছিল। এখনও পর্যন্ত তার কোনও উত্তর তাঁরা পাননি। তা সত্ত্বেও রাজ্য তার ভাগের ২৫ শতাংশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডলের বক্তব্য, “শিক্ষাবর্ষের শেষে তার মাত্র ২৫ শতাংশ টাকা দেওয়া হচ্ছে। এই করে সরকারি শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করতে চাইছে। আমরা দাবি করছি, কম্পোজ়িট গ্রান্টের বাকি টাকা অবিলম্বে মিটিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক।”
পার্ক ইনস্টিটিউশন স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুপ্রিয় পাঁজা বলেন, “১০০ বছর পুরনো পরিকাঠামো রক্ষা এবং চক-ডাস্টার কিনতে যা খরচ হয়, তা এই টাকায় কখনও সম্ভব নয়। সরকারের কম্পোজ়িট গ্রান্টের অনুদান নিয়ে আরও ভাবা উচিত।"