সংগৃহীত চিত্র।
এক বার নয়, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় বছরে দু’বার ভর্তির সুযোগ। পাশাপাশি, দু’টি ভিন্ন বিষয় নিয়ে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর করতে পারবেন পড়ুয়ারা। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বা ইউজিসি-র খসড়ায় এমনই প্রস্তাব আনা হয়েছে। পরিকাঠামো এবং অর্থাভাবে বাস্তবে ক্ষতি হবে শিক্ষাব্যবস্থার, এমনটাই মনে করছেন রাজ্যের শিক্ষাবিদরা।
শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার বলেন, “আমেরিকার আদলে এখানকার শিক্ষাব্যবস্থায় বদল আনতে চাইছে কেন্দ্র। যার পোশাকি নাম ‘ক্যাফেটেরিয়া অ্যাপ্রোচ।’ এই শিক্ষাব্যবস্থা চালু করতে গেলে বিপুল খরচার প্রয়োজন, তা কে দেবে? স্পেশ্যালাইজেশনের একটা নির্দিষ্ট মান রয়েছে। একাধিক বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করলে সংশ্লিষ্ট ছাত্র বা ছাত্রী কী শিখবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকছে। আমেরিকা যা করে, সেটা আমাদের করতে হবে, এটা একটা হাস্যকর বিষয়।”
দেশের উচ্চশিক্ষায় ব্যাপক বদল আনতে চলেছে ইউজিসি। ভর্তি থেকে বিষয় নির্বাচন— উচ্চশিক্ষার খোলনলচে বদলে দিতে চাইছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। আর সেখানেই শিক্ষাবিদদের বক্তব্য, যে বিষয়গুলি নিয়ে তাঁরা পড়তে চাইবেন, সেই বিষয়ে পড়ানোর যথাযথ পরিকাঠামো এবং শিক্ষক নেই কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে। তার প্রধান কারণ, রাজ্য বা দেশ জুড়ে জনপ্রিয় বিষয়গুলির জন্য নতুন করে শিক্ষকের পদ সৃষ্টি করা হয়নি। দেশের বিভিন্ন কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে চুক্তির ভিত্তিতে অথবা অতিথি শিক্ষক নিয়োগ করা হচ্ছে। তাই মাঝেমধ্যেই কোনও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ভাল সুযোগ পেলে তাঁরা সেখানে শিক্ষকতার জন্য চলে যাচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজগুলির আর্থিক উন্নয়ন কী করে ঘটবে, সেটা আরও বেশি করে দেখা উচিত ইউজিসি-র।
অধ্যাপক ওমপ্রকাশ মিশ্র বলেন, "পরিকাঠামো উন্নয়ন এবং ‘রোডম্যাপ’ নিয়ে ইউজিসি এক বারও আলোচনা করছে না। ইউজিসি হল গ্রান্ট কমিশন। সেই বিষয়টি উঠে গিয়ে এখন প্ল্যানিং কমিশনে পরিণত হয়েছে। গ্রান্ট দেওয়ার বিষয়ে তাদের কোনও ভাবনাচিন্তাই নেই। এই বিষয়গুলি গ্রহণ করলে রাজ্যের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে।"
বর্তমানে সিমেস্টার পদ্ধতিতে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে পড়াশোনা চলে। সেখানে বিজ্ঞানের পড়ুয়াদের প্রাকটিক্যাল ক্লাসের জন্য যে সমস্ত যন্ত্রপাতি বা উপকরণ প্রয়োজন, তার খরচ চালাতেই হিমশিম খাচ্ছে রাজ্যের কলেজগুলি।
একাধিক বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করতে হলে কলেজগুলির পরিকাঠামোর উন্নতি করতে হবে। না হলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে যে গবেষণা চলছে তার ব্যাপক ক্ষতি হবে।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক পার্থপ্রতিম রায় বলেন, "এমনিতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু শিক্ষক, আধিকারিক এবং শিক্ষাকর্মীর পদ খালি। পরিকাঠামোর অভাবে চার বছরের স্নাতক ডিগ্রি দিতে হিমশিম অবস্থা । সেখানে বছরর দু'বার করে পড়ুয়া ভর্তি সম্ভবই নয়। প্রত্যেক কোর্সের দু'টি করে ব্যাচ হবে। আসলে পুরো সরকারি শিক্ষাব্যবস্থাকেই তুলে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।"
শিক্ষক মহলের একাংশ মনে করছেন, এক জন পড়ুয়া একাধিক কোর্সে ভর্তি হলে হঠাৎ করে তিনি যদি একটি কোর্স ছেড়ে দেন, তা হলে কলেজগুলি আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবে। পাশাপাশি, পড়ুয়াদের উপর পড়াশোনার খরচের বোঝাও বাড়বে। এর ফলে মধ্যবিত্ত মেধাবী ছাত্রছাত্রীরা ঋণের জালে জড়িয়ে পড়তে পারেন। আশুতোষ কলেজের অধ্যক্ষ মানস কবি বলেন, "এই নয়া ব্যবস্থা কার্যকর হলে, রাজ্যের আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি শিক্ষাব্যবস্থার মান নষ্ট হবে।"
শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, "এই পরস্পর বিরোধী নীতি বাস্তবায়িত হলে শিক্ষাব্যবস্থা ব্যয়বহুল হয়ে পড়বে। আসলে এর মাধ্যমে শিক্ষাব্যবস্থাকে বেসরকারিকরণের দিকে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।"
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy