Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
WBCHSE New Syllabus

উচ্চ মাধ্যমিকে নতুন বিষয় নির্বাচনের জন্য কোন বিষয়ে চাই কত নম্বর? জানাল শিক্ষা সংসদ

সংসদের তরফে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিগুলির মধ্যে একটি বিজ্ঞপ্তিতে সংসদ অনুমোদিত যে ১৬১১টি প্রতিষ্ঠানে নতুন বৃত্তিমূলক বিষয়গুলি পড়ানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছে, তার একটি তালিকাও প্রকাশ করা হয়েছে।

WBCHSE

উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ। সংগৃহীত ছবি।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০২৪ ১৫:৪৩
Share: Save:

চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকেই উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে চালু হচ্ছে সেমেস্টার ব্যবস্থা। একই সঙ্গে জাতীয় শিক্ষানীতি মেনে যোগ হচ্ছে কৃত্রিম মেধা-সহ নানা নতুন বিষয়। পাশাপাশি, উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ অনুমোদিত বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বৃত্তিমূলক পাঠক্রমেও যোগ করা হচ্ছে বেশ কয়েকটি নতুন বিষয়। এই মর্মে আগেই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিল শিক্ষা সংসদ। বৃহস্পতিবার এ বছরের মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল ঘোষণার পর আবারও এ সংক্রান্ত চারটি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে সংসদের তরফে। জানানো হয়েছে, বেশ কিছু বিষয়ে মাধ্যমিকে ন্যূনতম কত নম্বর থাকলে তবেই উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে বিভিন্ন ‘সাবজেক্ট কম্বিনেশন’ নির্বাচন করা যাবে। মাধ্যমিকের ফল ঘোষণার পর সংসদের তরফে এই বিজ্ঞপ্তি জারি হওয়ায় বিপাকে পড়েছে রাজ্যের স্কুলগুলি।

প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, প্রথম এবং দ্বিতীয় ভাষা ছাড়া মোট তিনটি ‘সেট’ থেকে ঐচ্ছিক বিষয় নির্বাচনের সুযোগ দেওয়া হবে পড়ুয়াদের। সেগুলির মধ্যে প্রথম সেট-এ থাকবে ফিজ়িক্স অথবা নিউট্রিশন, রসায়ন অথবা ভূগোল, অর্থনীতি বা নৃতত্ত্ব বা সায়েন্স অফ ওয়েল বিয়িং-এর মতো নানা ‘সাবজেক্ট কম্বিনেশন’। দ্বিতীয় সেট-এ থাকবে অ্যাকাউন্ট্যান্সি, বিজ়নেস স্টাডিজ়, অর্থনীতি বা সায়েন্স অফ ওয়েল বিয়িং বা অ্যাপ্লায়েড আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স-এর মতো বিষয়। এর পর তৃতীয় সেট-এ রাখা হবে পলিটিক্যাল সায়েন্স বা বায়োলজিক্যাল সায়েন্স, এডুকেশন বা নিউট্রিশন-এর মতো ‘সাবজেক্ট কম্বিনেশন’।

তবে এ ক্ষেত্রে যে পড়ুয়া একাদশ-দ্বাদশে বায়োলজিক্যাল সায়েন্স পড়তে চায়, তাকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় জীবনবিজ্ঞানে ন্যূনতম ৩৫ শতাংশ নম্বর পেতে হবে। একই ভাবে কস্টিং অ্যান্ড ট্যাক্সেশন, অ্যাকাউন্ট্যান্সি, সাইবার সিকিউরিটি, ডেটা সায়েন্স, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, কম্পিউটার সায়েন্স, স্ট্যাটিস্টিক্স এবং অঙ্ক পড়তে চাইলে, মাধ্যমিক পরীক্ষায় অঙ্কে ন্যূনতম ৩৫ শতাংশ নম্বর থাকতে হবে। পদার্থবিদ্যা এবং রসায়নের ক্ষেত্রে মাধ্যমিকে ভৌতবিজ্ঞানে ন্যূনতম ৩৫ শতাংশ থাকতে হবে। অন্য দিকে, সাবজেক্ট কমিনেশন-এ ভূগোল রাখতে চাইলেও মাধ্যমিকে ভূগোলে থাকতে হবে ন্যূনতম ৩৫ শতাংশ নম্বর।

এই প্রসঙ্গে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সেক্রেটারি প্রিয়দর্শিনী মল্লিক বলেছেন, “উচ্চ মাধ্যমিকে কিছু কিছু বিষয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে অঙ্ক বা অন্যান্য বিষয়ে ন্যূনতম জ্ঞান থাকা প্রয়োজনীয়। যাতে পড়াশোনার গুণমান বজায় থাকে, সে জন্যই এই পদক্ষেপ করা হয়েছে। এর ফলে যেমন ভবিষ্যতের জন্য পড়ুয়াদের কর্মদক্ষ করে তোলা সম্ভব হবে। তেমনি পড়ুয়ারাও আগেভাগেই সেই বিষয় সম্পর্কে একটা স্পষ্ট ধারণা তৈরি করতে পারবে। জাতীয় শিক্ষানীতি মেনে যথা সম্ভব ইন্টারডিসিপ্লিনারি ‘সাবজেক্ট কম্বিনেশন’ তৈরি করা হয়েছে। যাতে কেউ অঙ্কের পাশাপাশি সংস্কৃত বা রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পাশাপাশি জীববিদ্যার মতো বিষয় পড়তে পারে। সেই জন্যই বিভিন্ন ‘সেট’ তৈরি করা হয়েছে। পাশাপাশি, ছাত্রছাত্রীদের সুবিধার কথা ভেবে কিছু ‘অ্যামালগামেটেড’ বিষয়ও রাখা হয়েছে। যাতে বিভিন্ন জটিল বিষয়কে সরলীকৃত ভাবে পড়ুয়াদের কাছে নিয়ে যাওয়া যায়। উদাহরণস্বরূপ— অ্যাপ্লায়েড আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স-এর কথা বলা যেতে পারে। সংসদের সঙ্গে স্কুলগুলি সব সময় যোগাযোগে রয়েছে। এই বিষয়গুলি যে হেতু স্কুলের বিভিন্ন বিষয়ের বর্তমান শিক্ষকরাই পড়াতে পারবেন, তাই ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হলেও এ ক্ষেত্রে কোনও অসুবিধা হবে না।”

তবে, এ প্রসঙ্গে ভিন্নমত কলেজিয়াম অফ অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমাস্টার্স অ্যান্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমিস্ট্রেসেস-এর সম্পাদক সৌদীপ্ত দাসের। তিনি বলেছেন, “সংসদের সিদ্ধান্তে দেরির জন্য স্কুলগুলি শুধু অপ্রস্তুতই নয়, পড়ুয়াদের অভিভাবকরাও বিরক্ত। এই সমস্ত সিদ্ধান্ত এবং সংশোধনী বিজ্ঞপ্তি অনেক আগেই ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা উচিত ছিল সংসদের।”

এপ্রিলেই সংসদের তরফে নয়া সাবজেক্ট কম্বিনেশন সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছিল। তবে প্রতি সেটে কোন কোন বিষয় থাকছে বা কোন বিষয়ের নির্বাচনের জন্য মাধ্যমিকে কত নম্বর থাকতে হবে, তা জানানো হয়নি। এ দিকে মাধ্যমিকের ফল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই বেশ কিছু স্কুলের ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। আগের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ভর্তির জন্য স্কুলগুলির লিফলেটও ছাপানো হয়ে গিয়েছে। ফলে নয়া বিজ্ঞপ্তি ঘিরে জটিলতা তৈরি হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল বলেছেন, “এ বছর অনেক মৌলিক পরিবর্তন এনেছে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ। এর মধ্যে অন্যতম হল ‘সাবজেক্ট কম্বিনেশন’। এর মধ্যে আমরা লক্ষ্য করলাম, সরকারের লোক দেখানো বিকল্প শিক্ষানীতিকে পাশে সরিয়ে রেখে কেন্দ্রীয় সরকারের নয়া শিক্ষানীতিকে অনুসরণ করা হয়েছে। এতে ছাত্রছাত্রীদের কতটা লাভ হবে, সেটা সময় বলতে পারবে। কিন্তু প্রশ্ন হল, কেন্দ্রের নীতিকে এ ভাবে অনুকরণ করা হচ্ছে কেন? সরকার কেন্দ্রের শিক্ষা নীতি মানবে না বলেই তো বিকল্প শিক্ষা নীতি তৈরি করেছিল!”

যাদবপুর বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক পার্থপ্রতিম বৈদ্যেরও একই মত। তিনি বলেছেন, “বিজ্ঞপ্তিটা আগে দিলে হয়তো অসুবিধে কম হত। কিন্তু যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তা ছাত্র-ছাত্রীদের স্বার্থেই নিয়েছে শিক্ষা সংসদ।”

প্রসঙ্গত, সংসদের তরফে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিগুলির মধ্যে একটি বিজ্ঞপ্তিতে সংসদ অনুমোদিত যে ১,৬১১টি প্রতিষ্ঠানে নতুন বৃত্তিমূলক বিষয়গুলি পড়ানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছে, তার একটি তালিকাও প্রকাশ করা হয়েছে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy