প্রশান্তকুমার মারিক। ছবি: সংগৃহীত
খেলতে খেলতে পড়া, না কি পড়তে পড়তে খেলা? ছোট্ট একটি স্কুলবাড়ি আর তার বাইরের উঠোনে খেলে বেড়াচ্ছে ছোট ছোট ছেলেমেয়ে। মাঝেমাঝে শোনা যাচ্ছে বিভিন্ন নম্বরের গুণ-ভাগ অথবা নিত্যনতুন শব্দ। ব্যারাকপুরের গুড়দহ গ্রামের শালবাগান জিএসএফপি স্কুলে গিয়ে উপস্থিত হলে এই চিত্রই দেখাই যাবে। এই খেলা থুড়ি, পড়ার ঘরের মূল কান্ডারি প্রশান্ত কুমার মারিক। চলতি বছরে পশ্চিমবঙ্গ থেকে যাঁর হাতে যুগ্ম ভাবে তুলে দেওয়া হয়েছে জাতীয় শিক্ষকের পুরস্কার। ৫ সেপ্টেম্বর, শিক্ষক দিবসের দিনই রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু দেশের সেরা ৫০ জন শিক্ষকের হাতে শিক্ষাক্ষেত্রে তাঁদের অবদানের জন্য এই সম্মান তুলে দেন।
রবীন্দ্রসাহিত্যের অনুরাগী বলেই হয়তো খোলা আকাশের নীচে স্কুলের মুক্ত উদ্যানকেই ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের ক্লাসরুম বলতে পছন্দ করেন প্রধানশিক্ষক প্রশান্ত মারিক। বহু বছর ধরে খেলার ছলে শিক্ষাদানই তাঁর নিজস্ব গবেষণার বিষয়। লক্ষ্য, পড়ুয়াদের সার্বিক উন্নয়ন। প্রাথমিক স্তরের পড়ুয়াদের কাছে পড়া, লেখা, বর্ণপরিচিতি এবং প্রাথমিক সংখ্যা সম্পর্কিত ধারণা বা নিউম্যারিকাল লিটারেসি বিষয়টি সহজ করে তোলাই তাঁর কাজ। আর এর জন্য হাতিয়ার হিসাবে তিনি বেছে নিয়েছেন বিভিন্ন গড়পড়তা ঘরোয়া খেলাকেই।
তাঁর কথায়, “৩-৫, ৬-৮ এবং ৮-১১ বছর— এই তিন ভাগে ভাগ করে ছোট ছেলেমেয়েদের পাঠদানই আমার কাজ। যে হেতু শিশুরা খেলতে ভালবাসে, খেলার কথা বলতে ভালবাসে, খেলার গল্প শুনতেও পছন্দ করে, তাই খেলাকেই আমি মাধ্যম হিসাবে বেছে নিয়েছি।” এর ফলে যেমন পড়ুয়ারা খেলছে, পড়ছে পাশাপাশি তাঁদের মনস্তত্ত্বেরও বিকাশ ঘটছে।
এর জন্য তিনি কী কী খেলা বেছে নিয়েছেন? তিনি জানিয়েছেন, বেশ কিছু খেলা রয়েছে। যেমন, ছেলেমেয়েদের দিয়ে লুডো খেলা হয়। এক জনের লুডোর ছক্কা চালার পর যে নম্বর আসে, সেই সংখ্যাটি লেখা হয় ক্লাসরুমের বোর্ডে। এর পর পরের পড়ুয়া তার দান দেবে, তার নম্বরটিও বোর্ডে লেখা হবে। এর পর সেখান থেকে মোট নম্বর, অর্থাৎ দু’টি নম্বরের যোগফল কত তা বার করা হয়। এ ভাবেই বিয়োগ, গুণ বা ভাগ করাও শিখতে পারে পড়ুয়ারা। এর ফলে ছোটদের মেধা, অনুভূতি এবং সৃজনশীলতা, অর্থাৎ সার্বিক বিকাশ সাধন সম্ভব হয়।
তবে শুধু যে পড়াশোনার বিবিধ বিষয়ই পড়ানো হয় ছোটদের, তা নয়। তাঁর বানানো স্বরচিত ছড়ার মাধ্যমে নীতিশিক্ষা, শৃঙ্খলাবোধ, স্বাস্থ্য এবং সমাজ সচেতনতার নানা বার্তাও দেওয়া হয় পড়ুয়াদের। প্রশান্ত জানিয়েছেন, তাঁর এই কাজকে বাস্তবায়িত করার জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তাঁর স্কুলের আরও ছ’জন শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী। তাঁর কাজের সুবাদে এখন তাঁকে রাজ্য সরকারি অন্যান্য স্কুলেও ‘রিসোর্স পার্সন’ হিসাবে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। যেখানে ছোটদের পাশাপাশি শিক্ষকদেরও এই নয়া শিক্ষাপদ্ধতির বিষয়ে তিনি প্রশিক্ষণ দেন।
তিনি বলেছেন, “শিক্ষকদের অনন্ত ভালবাসাই পড়ুয়াদের জীবনের পাথেয়।” তাই নয়া শিক্ষকদের প্রতি তাঁর বার্তা, পড়ুয়াদের প্রতি আরও যত্নশীল হতে হবে, সহমর্মী হতে হবে। তাঁর শিক্ষণ পদ্ধতির জন্যই এখন স্কুলের পড়ুয়ার সংখ্যা ৪০ থেকে বেড়ে হয়েছে ১০০-রও বেশি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy