নার্সিং পেশা সংগৃহীত ছবি
নার্সিং বরাবরই একটি জনপ্রিয় পেশা হিসেবেই পরিগণিত। যাঁরা ছোটবেলায় ইংল্যান্ডের নার্স ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের নিঃস্বার্থ সেবার গল্প শুনেছেন, তাঁদের অনেকেই সেই গল্পের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে বড় হয়ে নার্সিংকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। এই পরোপকারী ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলকেই আবার আধুনিক নার্সিংয়ের প্রতিষ্ঠাতাও বলা হয়।
একজন নার্স প্রকৃত অর্থেই একজন শুশ্রূষাকারীর কাজ করেন। এ ছাড়াও তাঁদের মানুষের শরীর সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকে। এ জন্য চিকিৎসাক্ষেত্রে কোনও আপৎকালীন পরিস্থিতিতে নার্সদের একেবারে সামনের সারিতে থেকে রোগীদের শুশ্রূষা করতে হয়।
নার্সিংকে পেশা হিসেবে বেছে নেওয়ার নানাবিধ কারণের মধ্যে তিনটি উল্লেখযোগ্য কারণ হল—
১. সমাজে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন: আমাদের দেশে,দুঃখজনক ভাবে, সব সময়ই রোগীর সংখ্যা দেশের মোট চিকিৎসকের সংখ্যাকে ছাপিয়ে যায়। এই পরিস্থিতিতে, আপনি এক জন নার্স হলে চিকিৎসকের পাশে থেকে রোগীকে সবার আগে সেবা-শুশ্রূষা করতে পারবেন। শুধু তাই নয়, রোগী হাসপাতালে ভর্তি হলে তাঁকে প্রাথমিক ভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রাথমিক চিকিৎসাটুকুর ব্যবস্থা করতে পারবেন। যার ফলে রোগী ও রোগীর পরিজন খুবই উপকৃত হবেন।
২. স্পেশালাইজেশন: আজকের দিনে নার্সিং পেশাটি শুধু মাত্র রোগীর সেবা-যত্ন করা বা তাঁকে সহায়তা করাতেই আটকে নেই। এখন এই নিয়ে পড়াশুনো করলে এবং কিছু অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করলে ক্রিটিক্যাল কেয়ারের মতো বিষয় নিয়েও স্পেশালাইসেশন করা যায়।
৩. চাকরির প্রচুর সুযোগ: স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নতি ও ক্রমবর্ধমান চাহিদার জন্য আজকাল বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, প্যারামেডিক এবং নার্সদের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে।
যে কারণেই হোক, এই পেশাকে বেছে নিলে যে রকম ভাবে অসংখ্য মানুষের নিঃস্বার্থ উপকার করতে পারবেন, তা আর কোনও পেশাতেই সম্ভব নয়। তাই জন্যই নার্সিংকে পেশার চেয়েও বেশি একটি কাজ হিসেবে গণ্য করা হয়।
উচ্চমাধ্যমিক বা এর সমতুল পরীক্ষায় পাশ করার পর পরীক্ষার্থীরা নার্সিং নিয়ে পড়তে চাইলে, তাঁদেরকে যে সমস্ত পরীক্ষা দিতে হয় তা নিম্নলিখিত-
১. ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সির দ্বারা আয়োজিত ন্যাশনাল এলিজিবিলিটি কাম এন্ট্রান্স টেস্ট ওরফে নিট।
২. পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল,এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ, চণ্ডীগড় দ্বারা আয়োজিত পিজিআইএমইআর নার্সিং পরীক্ষা
৩. জওহরলাল ইনস্টিটিউট অব পোস্ট গ্র্যাজুয়েট মেডিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ, পন্ডিচেরি দ্বারা আয়োজিত জেপিএমইআর
৪. অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস,দিল্লি দ্বারা আয়োজিত এইমস নার্সিং পরীক্ষা
৫. ইন্ডিয়ান আর্মির ডিরেক্টরেট জেনারেল অব মেডিক্যাল দ্বারা আয়োজিত সার্ভিসেস ইন্ডিয়ান আর্মি নার্সিং পরীক্ষা
৬. জামিয়া হামদর্দ ইউনিভার্সিটি, নিউ দিল্লি দ্বারা আয়োজিত জামিয়া হামদর্দ নার্সিং পরীক্ষা
৭. বেনারস হিন্দু ইউনিভার্সিটি দ্বারা আয়োজিত বিএইচইউ নার্সিং পরীক্ষা
৮. কিংস জর্জ মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটি, লাখনউ দ্বারা আয়োজিত কেজিএমইউ নার্সিং পরীক্ষা
৯. পশ্চিমবঙ্গ জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষা, নার্সিং
নার্সিং নিয়ে বিএসসি ডিগ্রি কোর্স করার পর কোন কোন বিষয়ে স্পেশালাইজেশন করে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা বা ডিগ্রি পেতে পারেন পরীক্ষার্থীরা, সেগুলি জেনে নেওয়া যাক—
১. ক্রিটিক্যাল কেয়ার নার্সিং
২.কার্ডিওভাসকুলার ও থোরাসিক নার্সিং
৩.এমার্জেন্সি নার্সিং
৪.অপারেটিং রুম নার্সিং
৫. পেডিয়াট্রিক নার্সিং
৬.পেডিয়াট্রিক ক্রিটিক্যাল কেয়ার নার্সিং
৭. মেন্টাল হেলথ নার্সিং
৮. মিডওয়াইফরি
৯. নার্সিং অ্যাডমিনিস্ট্রেশন
ভারতবর্ষে নার্সিং ডিগ্রি কোর্সগুলি ভারতীয় নার্সিং কাউন্সিল দ্বারা স্বীকৃত। নার্সিংয়ের প্রচলিত ডিগ্রি ও ডিপ্লোমা কোর্স ছাড়াও বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিং হোম থেকে ৬ মাস থেকে এক বছরের কিছু সার্টিফিকেট কোর্সও করা যায়।
১. ডিপ্লোমা কোর্সগুলি সাধারণত ১৮ মাস (এএনএম) বা ৩.৫ বছরের (জিএনএম) হয়।
২. গ্র্যাজুয়েশন কোর্সগুলি হয় ৪ বছর (বিএসসি নার্সিং বেসিক), ২ বছর (বিএসসি নার্সিং পোস্ট বেসিক) ও ৩ বছরের (বিএসসি নার্সিং ডিসট্যান্স)
৩. পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন হয় ২ বছরের (এমএসসি নার্সিং)
৪. ডক্টরাল ডিগ্রি হয় ১ বছর বা ২ বছর (এমফিল) এবং ৩-৫ বছরের (পিএইচডি)
নার্সিং-এ ভারতবর্ষের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বিশ্ববিদ্যালয় হল-
১.অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস,দিল্লী
২.আচার্য ইনস্টিটিউট অব হেলথ সায়েন্সেস, বেঙ্গালুরু
৩. খ্রিস্টান মেডিক্যাল কলেজ, ভেলোর
পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে নার্সিং-এ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বিশ্ববিদ্যালয় হল—
১. কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ
২. আইপিজিএমই অ্যান্ড আর ও এসএসকেএম হাসপাতাল
৩.সিস্টার নিবেদিতা ইউনিভার্সিটি
বর্তমানে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে যা অবস্থা, তাতে নার্সদের চাহিদা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই এই সময়ে এই বিষয়ে পড়াশুনো করে নার্সিংকে পেশা হিসেবে বেছে নিলে ছাত্রছাত্রীরাও লাভবান হবেন। তাই যদি মানুষকে সাহায্য করতে, পরিষেবা দিতে বা সেবা শুশ্রূষা করতে ভাল লাগে, তা হলে নির্দ্বিধায় এই পেশা বেছে নিন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy