সারাদিন চোখ স্ক্রিনে। কখনও নেটফ্লিক্স, কখনও সোশ্যাল মিডিয়া ঘেঁটে ক্লান্ত হচ্ছে মন। বাড়ছে মস্তিষ্কের স্থবিরতা। এই আবহে অনেকেরই জিয়া নস্টাল। রেডিয়োয় কান পেতে অচেনা মানুষের গলায় কোনও গল্প বা নাটক শুনে যে কল্পনার জগতে ভাসতেন সকলে। সে দিনগুলিই নতুন করে ফিরে যেতে চাইছেন তাঁরা। তাই চাহিদা বাড়ছে অডিয়ো স্টোরি (গল্প) বা থিয়েটার (নাটক)-এর। এই ভাবনা থেকেই একটি নতুন কোর্স নিয়ে হাজির কলকাতার লেডি ব্রেবোর্ন কলেজ।
কলকাতারই একটি বেসরকারি সংস্থা টাইমস অফ থিয়েটার স্কুল অফ ড্রামা-র সঙ্গে হাত মিলিয়ে ভিন্ন ধারার কোর্স চালু করবে লেডি ব্রেবোর্ন। এটি কলেজের একটি ‘অ্যাড অন কোর্স’। আয়োজনের দায়িত্বে রয়েছে কলেজের ইন্টারনাল কোয়ালিটি অ্যাশিয়োরেন্স সেল বা আইকিউএসি। ক্লাস শুরু আগামী ৫ এপ্রিল থেকে।
কলেজ সূত্রে খবর, ‘অডিয়ো স্টোরি এবং অডিয়ো থিয়েটার’-এর কোর্সটি গত বছর থেকেই চালু করা হয়েছিল। তবে সেটি শুধু কলেজের ছাত্রীরাই করতে পারতেন। এ বছর রাজ্যের অন্য কলেজের পড়ুয়াদের জন্যও কোর্সে ভর্তির সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।
আরও পড়ুন:
কিন্তু হঠাৎ কেন এই বিষয়ে কোর্স করানো হচ্ছে? কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপিকা অর্পিতা ভট্টাচার্য বলেন, “এই কোর্স যে শুধু পড়ুয়াদের সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ ঘটাবে তা নয়। কর্মসংস্থানের সুযোগও বৃদ্ধি করবে। প্রথাগত সিলেবাসের থেকে একটু অন্য ভাবে যদি জীবন এবং জীবিকাকে দেখা যায়, চলতি পথের সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করা যায়, তারই প্রচেষ্টায় আমাদের এই কোর্স।”
পাঠক্রমে মোট ৩০ ঘণ্টার ক্লাস হবে। চলবে চার মাস ধরে। কোর্সে শেখানো হবে রেডিয়োর জন্য নাটকের স্ক্রিপ্ট লেখা, বিভিন্ন ওয়ান লাইনার লেখা, বাচিক মাধ্যমে অভিনয়, পডকাস্টিং, অ্যাঙ্করিং, অ্যানাউন্সমেন্ট, প্রেজ়েন্টেশন, রেকর্ডিং টেকনোলজি, ভয়েস মডিউলেশন-এর নানা দিক এবং পদ্ধতি।
এ প্রসঙ্গে অর্পিতা ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, মঞ্চে অভিনয়ের জন্য সাউন্ড এফেক্টের মাধ্যমে নানা সুবিধা লাভ করা যায়। যেটা বাচিক মাধ্যমে সম্ভব না। তাই এই বিষয়গুলি শেখানো হবে পড়ুয়াদের। তবে শুধু পড়ুয়ারাই নন, কর্মরতরাও যদি এই বিষয়ে আগ্রহী হন, তাঁরাও কোর্সে ভর্তি হতে পারবেন। তবে দু’টি শর্ত রয়েছে — এক, তাঁদের মহিলা হতে হবে। দুই, তাঁদের বয়স হতে হবে ১৮-৪০ বছরের মধ্যে।
আরও পড়ুন:
কোর্সের অধিকাংশ ক্লাস হবে কলেজেই। রেকর্ডিং-এর নানা খুঁটিনাটি শেখানো হবে টাইমস অফ থিয়েটার স্কুল অফ ড্রামা-র নিজস্ব রেকর্ডিং স্টুডিয়োতে। ক্লাস নেবেন সৌমিত্র বসু, জগন্নাথ বসু, উমির্মালা বসু, বিজয়লক্ষ্মী বর্মন, শাশ্বতী গুহঠাকুরতা, সুরঞ্জনা দাশগুপ্ত-সহ বিভিন্ন খ্যাতনামীরা। কোর্স শেষে পরীক্ষার আয়োজন করা হবে। বিতরণ করা হবে শংসাপত্রও। কোর্স ফি ধার্য করা হয়েছে ৪০০০ টাকা।
কলেজের অধ্যাপিকা বলেন, “কোর্স শেষে কোনও ক্যাম্পাসিংয়ের আয়োজন করা হবে না, তবে তাঁদের কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি পাবে বলেই আমাদের আশা।”
তবে এই কোর্স ছাড়াও বর্তমানে যে হেতু কনটেন্ট রাইটিং-এ চাকরির ব্যাপক চাহিদা। ইংরেজিতে কনটেন্ট রাইটিং নিয়েও আরও একটি কোর্স করানো হবে কলেজের তরফে। এ ক্ষেত্রেও কলেজের জন্য সহযোগিতায় সংশ্লিষ্ট বেসরকারি সংস্থা।
এ প্রসঙ্গে কলেজের অধ্যক্ষ শিউলি সরকার বলেন, “দু’টি কোর্স চালু হলে শুধু আমাদের কলেজ নয়, অন্য কলেজের পড়ুয়াদের জন্যও কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি পাবে। তাই এটি আমাদের কলেজের একটি ‘আউটরিচ প্রোগ্রাম’-বলেও গণ্য হবে। যুগোপযোগী এই কোর্সগুলি ছাত্রীদের নানা ভাবে সাহায্য করবে বলেই আমার বিশ্বাস।”