যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। সংগৃহীত ছবি।
রাষ্ট্রপুঞ্জের সংজ্ঞা অনুযায়ী, জন্মগত ভাবে বিশ্বের সকল মানুষ স্বাধীন, সমমর্যাদা এবং সমানাধিকারের অধিকারী। এই সমানাধিকার বা মানবাধিকার আসলে কী? সাধারণ ভাবে বলতে গেলে লিঙ্গ, জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশষে জন্মগত এবং সহজাত ভাবে মানুষের যে সমস্ত অধিকার রয়েছে তা-ই মানবাধিকার। যা বর্তমান বিশ্বের বহুল চর্চিত একটি বিষয়। সেই বিষয়েই এ বার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে চলতি শিক্ষাবর্ষে একটি কোর্স করানো হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বা ইন্টারন্যাশনাল রিলেশন্স বিভাগ এই পাঠক্রম আয়োজনের দায়িত্বে রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডিউটিজ় এডুকেশন শীর্ষক এই কোর্সটি একটি পোস্ট গ্রাজুয়েট (পিজি) ডিপ্লোমা কোর্স। সান্ধ্যকালীন এই কোর্সটির মেয়াদ এক বছর। পাঠক্রমটি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বা ইউজিসি স্বীকৃত। পাঠ্যসূচিতে থাকবে মানবাধিকার সংক্রান্ত মৌলিক ধারণা, মানবাধিকার সম্পর্কিত বিভিন্ন তত্ত্ব, রাষ্ট্রপুঞ্জের হিউম্যান রাইটস ডিক্লারেশন, মানবসুরক্ষা এবং নাগরিক সমাজ, আদিবাসীদের অধিকার, নারী অধিকার-এর মতো নানা বিষয়।
এই বিষয়ে কোর্স করানোর কারণ কী? বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর তথা সংশ্লিষ্ট কোর্সটির কোঅর্ডিনেটর শুভজিৎ নস্কর জানিয়েছেন, এ বছর প্রথম নয়। বহু বছর ধরেই বিশ্ববিদ্যালয়ে এই কোর্সটি পড়ানো হচ্ছে। তবে কোভিড অতিমারির সময় থেকে এই কোর্সের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই সময়ে নির্ধারিত আসনসংখ্যার চেয়ে আবেদনকারীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় শেষে আসনসংখ্যা বাড়ানোর সিদ্ধান্তও গ্রহণ করা হয়। তিনি বলেছেন, “এ বছর কোর্সের আসনসংখ্যা ৫০। তবে এ বারও বিপুল সাড়া মিলছে। যদি এ বারও শূন্য আসনের থেকে আবেদনকারীর সংখ্যা বেশি হলে আমরা বিশেষ অনুমতি নিয়ে আসনসংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টা করব।” উল্লেখ্য, কোর্সে ভর্তির আবেদনের শেষ দিন ৩০ সেপ্টেম্বর। ভর্তির মেধাতালিকা প্রকাশ করা হবে ৭ অক্টোবর।
বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে কোর্স ফি ধার্য করা হয়েছে ৮০০০ টাকা। সঙ্গে জিএসটি। শুভজিৎ জানিয়েছেন, সাধারণত, যে কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘সেলফ ফিন্যান্সড কোর্স’গুলির ফি প্রতি বছর বাড়ানো হয়। কিন্তু যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন জেলা, প্রত্যন্ত অঞ্চলের গরীব পড়ুয়ারা যাতে স্বল্পমূল্যে এই কোর্সটি করতে পারেন, তার জন্য শেষ চার বছরে কোর্স ফি-তেও কোনও পরিবর্তন করা হয়নি।
সংশ্লিষ্ট কোর্সটির জন্য যে কোনও বিষয়ে স্নাতক উত্তীর্ণেরাই আবেদন করতে পারবেন। শেষ কিছু বছরে কোর্সটিতে ভর্তির আবেদন জানিয়েছেন হাইকোর্টের অ্যাডভোকেট, আইনজীবী, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বা এনজিও-তে কর্মরতরা, বিভিন্ন সরকারি আধিকারিক, পুলিশ অফিসার, স্কুল শিক্ষক, প্রধানশিক্ষক থেকে শুরু করে কলেজ পড়ুয়ারাও।
শুভজিৎ বলেছেন, “যে হেতু এখন বিশ্ব জুড়ে মানবাধিকার ক্ষুণ্ণ হওয়া এবং পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে জোরালো আন্দোলন দেখা যাচ্ছে, তাই মানুষের মনে মানবাধিকার নিয়ে আগ্রহ জন্মাচ্ছে। কিন্তু স্কুল-কলেজে এই বিষয়গুলি এতো ভাল করে পড়ানো হয় না। তাই আমরা এই কোর্সে সমস্ত বিষয় ব্যাপকতার সঙ্গে পড়ানোর চেষ্টা করছি।”
বিশ্ববিদ্যালয়ে এর জন্য ছয় থেকে সাত মাস কোর্সের ক্লাস করানো হয়। সপ্তাহে তিন দিন— সোম, বুধ এবং শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৫টা থেকে সন্ধে সাড়ে ৭টা পর্যন্ত ক্লাসের আয়োজন করা হয়। পড়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিজ্ঞ অধ্যাপকেরা। পাশাপাশি ‘ফিল্ড ভিজ়িট’-ও করানো হয়। পড়ুয়াদের নিয়ে যাওয়া হয় রাজ্যের বিভিন্ন অনুন্নত এলাকায়। শেষে পড়ুয়াদের একটি ‘ডিসার্টেশন’ জমা, পরীক্ষা এবং ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমে মূল্যায়ন করে শংসাপত্রও বিতরণ করা হয়।
কোর্স শেষে ‘প্লেসমেন্ট’-এর কোনও উদ্যোগ নেই বিশ্ববিদ্যালয়ের। তবে যে হেতু কোর্সটি ইউজিসি স্বীকৃত এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে করানো হয়, বিভিন্ন নামী স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা-সহ অন্যান্য ক্ষেত্রে পড়ুয়াদের চাকরির সুযোগ মেলে বলে জানিয়েছেন শুভজিৎ। তাঁর আশা, কোর্স শেষে মানবাধিকার সম্পর্কে আরও সচেতন হয়ে পড়ুয়ারা সমাজে ফিরে যাবে এবং সমাজের সামগ্রিক উন্নতিতে তার প্রতিফলন দেখা যাবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy