প্রতীকী চিত্র।
একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের হাতে সুষ্ঠু ভাবে ট্যাব বা মোবাইল ফোন তুলে দিতে ২৬ দফা গাইডলাইন প্রকাশ করল স্কুল শিক্ষা দফতর। এ বছর শুধুমাত্র দ্বাদশের পড়ুয়ারাই নয়, মোবাইল বা ট্যাবের টাকা পেতে চলেছে একাদশ শ্রেণির পড়ুয়ারাও।
‘তরুণের স্বপ্ন’ নামে এই প্রকল্পে চলতি শিক্ষাবর্ষে সরকারের খরচ প্রায় দু’হাজার কোটি টাকা। বিগত বছরে দেখা গিয়েছে নানা ত্রুটি-বিচ্যুতির কারণে বহু পড়ুয়ার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা ঢোকেনি। এ বার সেই সমস্যা যাতে না হয়, তার জন্য জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক এবং স্কুলগুলিকে সর্তক করেছে শিক্ষা দফতর।
এই ব্যবস্থা নিয়ে অবশ্য প্রশ্ন তুলছে স্কুলগুলি। তাদের বক্তব্য, বর্তমানে প্রত্যেকের কাছেই প্রায় মোবাইল ফোন থাকে। সরকারের এই প্রকল্পের সঙ্গে সরাসরি স্কুলগুলির যোগাযোগ না থাকলেও পড়ুয়াদের কাছ থেকে মোবাইল কেনার রশিদ নিতে গিয়ে ব্যাপক সমস্যায় পড়তে হয় স্কুলগুলিকে।
বাঙুর মাল্টিপারপাস স্কুলের প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় বড়ুয়া বলেন, “স্কুলে শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীর অপ্রতুলতা রয়েছে এমনিতেই। তার মধ্যে এই ধরনের প্রকল্পের রশিদ আদায় করতে আলাদা করে কর্মীর প্রয়োজন হয়, যার জেরে স্কুলের স্বাভাবিক পঠনপাঠনও বিঘ্নিত হয়। সরকারের এই বিষয়গুলি গুরুত্ব দিয়ে দেখা প্রয়োজন।”
বহু স্কুলের ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে মোবাইল বা ট্যাব কেনার রশিদ স্কুলে জমা দিচ্ছে না পড়ুয়ারা। সেই রশিদ আদায় করতে তাদের বাড়ি পর্যন্ত যেতে হয়েছে কর্মীদের। আবার বেশ কিছু স্কুলের বক্তব্য, পড়ুয়ারা ভিন্ন জায়গায় থাকলেও একই দোকান থেকে একাধিক মোবাইল কেনার রশিদ জমা পড়ছে ।
পার্ক ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক সুপ্রিয় পাঁজা বলেন, “অতিমারির আবহে অনলাইন মাধ্যমে পড়াশোনা চালানোর জন্য এই ধরনের প্রকল্পের যথেষ্ট প্রয়োজন ছিল। তারপর ধীরে ধীরে আবার সব স্বাভাবিক ছন্দে ফিরে এসেছে। কিন্তু এখনও অনলাইন ক্লাসের ক্ষেত্রে স্মার্ট ফোন মাঝেমাঝে প্রয়োজন হয়।”
বিভিন্ন স্কুলের অভিযোগ, প্রায় ৯০ শতাংশ পড়ুয়া অ্যাকাউন্টে টাকা পাওয়ার পর তা যথাযথ ভাবে যে খাতে দেওয়া হয়েছে, সেই খাতে ব্যবহার করছে না। অনেক সময়ে অসাধু উপায়ে নকল রশিদ দেওয়া হচ্ছে স্কুলে। যার ফলে প্রকল্পের অর্থের অপচয় হচ্ছে বলে মনে করছে বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠনগুলিও।
প্রধান শিক্ষক সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক চন্দন মাইতি বলেন, “অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, এই প্রকল্পের টাকা পাওয়ার আগেই ছাত্রছাত্রীদের কাছে মোবাইল ফোন রয়েছে। তাই এই বাবদ পাওয়া টাকা অন্যত্র ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রকল্পের অর্থের যথাযথ প্রয়োগ হচ্ছে না। এই টাকা যদি স্কুলের ল্যাবরেটরি বা অন্যান্য খাতে ব্যবহার করা হয়, তা হলে ছাত্র ছাত্রীরা লাভবান হবে।” আবার বেশ কিছু সংগঠনের বক্তব্য, কেবলমাত্র স্মার্ট ফোনের খরচ দিলেই তো হল না। ইন্টারনেট ব্যবহারের যে খরচ, তা কোথা থেকে আসবে?
এ প্রসঙ্গে বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল বলেন, “তাহলে এখন স্মার্ট ফোন দিয়ে অর্থের অপচয় করার প্রয়োজন কি! বরং এই বিপুল পরিমাণ টাকা দিয়ে স্কুলগুলোর পরিকাঠামো উন্নয়ন করার ব্যবস্থা করলে ভাল হয়। স্কুলবাড়ি, হোস্টেল সংস্কার, শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী নিয়োগ প্রভৃতি অতি প্রয়োজনীয় কাজে এই টাকা ব্যবহার করা যেত।”
সরকারি এই প্রকল্পে এক প্রকার অর্থের অপচয়ই হচ্ছে বলে শিক্ষক মহলের একাংশের মত। অভিভাবকরাও অনেকেই এমন অপব্যবহারের বিরুদ্ধে, এমনই মনে করছে শিক্ষক সংগঠনগুলি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy