‘হলিস্টিক রিপোর্ট কার্ড।’ নিজস্ব চিত্র।
শিক্ষা দফতর এবং মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বোঝাপড়ার অভাবে বাতিল হয়ে গেল হলিস্টিক রিপোর্ট কার্ড। প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্র ছাত্রীদের সার্বিক অগ্রগতি খতিয়ে দেখতে এই প্রকল্প ঘোষণা করেছিল স্কুল শিক্ষা দফতর। ২৫ জুলাই বৃহস্পতিবার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জানানো হল এই প্রকল্প ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে চালু করা হবে। হঠাৎ করে এই বিষয়টি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে স্কুলগুলি। সমস্যায় স্কুল পড়ুয়াদের মূল্যায়ণও।
এ প্রসঙ্গে, বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল জানিয়েছেন, “শিক্ষা দফতর এবং মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বোঝাপড়ার অভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে সবচেয়ে বেশি অসুবিধার মধ্যে পড়তে হচ্ছে। ‘হলিস্টিক রিপোর্ট’কে সামনে রেখে ইতিমধ্যেই কিছু স্কুল দ্বিতীয় বার্ষিক পরীক্ষা শুরু করেছে বা অগস্ট মাসের শুরুতেই পরীক্ষা শুরু করবে। প্রশ্নপত্রও ছাপা হয়ে গিয়েছে। এখন সিদ্ধান্ত পরিবর্তন কেন? শুরুতেই আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হল না কেন? এ ধরণের খামখেয়ালিপনা বন্ধ হওয়া দরকার”
পড়ুয়াদের ব্যক্তিত্ব এবং লাইফ স্কিল বিকাশে সার্বিক রিপোর্ট কার্ড তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রাজ্য। ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং ( এনসিইআরটি) এবং জাতীয় শিক্ষা নীতিকে মান্যতা দিয়ে এই রিপোর্ট কার্ড তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, যার নামকরণ করা হয় ‘হলিস্টিক রিপোর্ট কার্ড’। কয়েক মাস আগে নির্দেশিকা দেওয়ার পর, সেই মতো সামেটিভ পরীক্ষার সঙ্গে এই রিপোর্ট কার্ডে যে নম্বর বিভাজন হয়েছিল তার ভিত্তিতে মূল্যায়ণ প্রক্রিয়া শুরু করে স্কুলগুলি। ইতিমধ্যেই প্রথম সামেটিভের মূল্যায়ণ করে তার হলিস্টিক রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়ে গিয়েছে। অগাস্ট মাসে দ্বিতীয় সামেটিভ পরীক্ষা রয়েছে। শিক্ষা দফতরের নির্দেশিকা মেনে তার প্রশ্নপত্র ছাপাও সম্পূর্ণ। তাই হঠাৎ এই বিজ্ঞপ্তিতে বিপাকে স্কুলগুলি।
যাদবপুর বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক পার্থপ্রতীম বৈদ্য বলেন, “আমরা শিক্ষা দফতরের নিয়ম মেনে কাজ করি। একটি প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর তা মাঝ পথে থমকে যাওয়ার ফলে স্কুলগুলি যেমন অসুবিধার সম্মুখীন হল, তেমনি পড়ুয়াদেরও সমস্যা তৈরি হবে। ”
নয়া পদ্ধতিতে শ্রেণি ভিত্তিক নয়, প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্র ছাত্রীদের সার্বিক অগ্রগতির রূপরেখা তৈরি করার কথা বলা হয়েছিল। এমনকি পুস্তিকা আকারে সেই রিপোর্ট কার্ড পৌঁছেও গিয়েছিল স্কুলগুলিতে।
নারায়ণ দাস বাঙ্গুর ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় বড়ুয়া বলেন, “যে সব স্কুলে শিক্ষার্থী সংখ্যা বেশি এবং নিয়ম মেনে ১ অগস্ট থেকে পরীক্ষা শুরু করবে, তাদের প্রস্তুতি নিশ্চয়ই শেষ পর্বে। ছাপাখানা অনেক টাকার বিল নেবে। আমাদের সেই পরিকাঠামো নেই যে, হঠাৎ প্রশ্ন বাতিল হলে আবার নতুন সেট দিয়ে দেব। আমরা যারা নিয়মিত অভিভাবক এবং ছাত্র ছাত্রীদের সঙ্গে যুক্ত থাকি, এই ধরনের বিভ্রান্তির কারণে তাদের বারবার জটিলতার সম্মুখীন হতে হয়। দায়িত্ব কার কে বলবে?”
নয়া পদ্ধতিতে প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণির ছাত্র ছাত্রীদের তিনটি পর্যায়ে মূল্যায়ণ হওয়ার কথা ছিল। তার নম্বর বিভাজনও ছিল আলাদা। সেখানে যেমন জ্ঞান অর্জন সম্পর্কে সবিস্তার তথ্য থাকবে, একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পড়ুয়া সামাজিক ও ব্যক্তিগত ভাবে কী ভাবে নিজেকে তুলে ধরছে তাও উল্লেখ করা হবে। এ ছাড়া থাকছে পড়ুয়ার নাম, ঠিকানা, আধার নম্বর, রক্তের গ্রুপ ইত্যাদি তথ্য।
শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক কিংকর অধিকারী বলেন, “এই শিক্ষা বর্ষের মাঝখানে এসে ‘হলিস্টিক রিপোর্ট কার্ড’ চালুর নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। সেখানে সার্বিক মূল্যায়নের নম্বর বিভাজনও আলাদা। শিক্ষাবর্ষের মাঝে এই নতুন পদ্ধতি চালু করা সম্পূর্ণ অবাস্তব।”
প্রথম থেকেই তিনটি পর্যায়ক্রমিক মূল্যায়ণে প্রতিটি ভাগের উল্লেখিত পূর্ণমান নিয়ে চিন্তিত ছিলেন শিক্ষকরা। কারণ বর্তমান মূল্যায়ণের নম্বরের সঙ্গে এর অনেকটাই তফাৎ রয়েছে। কলেজিয়াম অফ অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমাস্টার্স অ্যান্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমিস্ট্রেসেস-এর সম্পাদক সৌদীপ্ত দাস বলেন, “সিদ্ধান্তহীনতা ও সমন্বয়ের অভাব প্রকট হচ্ছে। তার মূল কারণ রেজিস্টার্ড শিক্ষক সংগঠনগুলির সঙ্গে আলোচনা না করা। এতে সার্বিক ভাবে জনমানসে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy