Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Lecturer

লেকচারার, অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর, অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ও প্রফেসর পদমর্যাদার মধ্যে পার্থক্য

অনেকেই হয়তো ভাবেন, কলেজে শিক্ষকতা করলেই তাঁরা 'প্রফেসর' বা 'অধ্যাপক' বলে অভিহিত হন। লেকচারার, অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর, অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর ও প্রফেসর পদমর্যাদাগুলির যে তফাৎ রয়েছে, তা অনেকেরই অজানা।

অধ্যাপক

অধ্যাপক সংগৃহীত ছবি

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ ২২:২০
Share: Save:

কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীদের পড়ানোর বাসনা অনেকেরই থাকে। স্কুলের শিক্ষকতার থেকে কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার ধরন আলাদা, সেই ধারণাও হয়তো অনেকেরই আছে। তবে শুধু চরিত্রগত তফাৎ নয়, স্কুল ও কলেজের শিক্ষকদের পদমর্যাদাগুলিও ভিন্ন রকমের হয়। অনেকেই হয়তো ভাবেন, কলেজে শিক্ষকতা করলেই তাঁরা 'প্রফেসর' বা 'অধ্যাপক' বলে অভিহিত হন। কিন্তু আদতে যে তা নয়, তা হয়তো অনেকেই জানেন না। লেকচারার, অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর, অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর ও প্রফেসর পদমর্যাদাগুলির যে তফাতগুলি রয়েছে, সেগুলি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করতেই এই প্রতিবেদনের অবতারণা।

কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর ক্ষেত্রে প্রথম ধাপ হল সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে ইউজিসি নেট, গেট ,সিএসআইআর নেট পরীক্ষা এবং রাজ্য স্তরে সেট পরীক্ষা। এই পরীক্ষাগুলিতে নির্দিষ্ট কিছু যোগ্যতার মাপকাঠি পূরণ করতে পারলেই ছাত্রছাত্রীরা পরীক্ষায় বসতে পারেন। এর পর নির্ধারিত ন্যূনতম নম্বর নিয়ে পাশ করলে এবং কাট অফ নম্বরের চেয়ে বেশি নম্বর পেলে তাঁদের শিক্ষকতার পেশায় প্রবেশের প্রথম শর্ত পূরণ হয়ে যায়। এর পর তাঁরা সরকারি কলেজে পড়াতে চাইলে কলেজ সার্ভিস কমিশন দ্বারা আয়োজিত ইন্টারভিউ প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হয় এবং তার পর ইন্টারভিউ উত্তীর্ণ হলে তাঁদের নিয়োগ করা হয়। বেসরকারি কলেজে নিয়োগের ক্ষেত্রে নেট/ সেট পরীক্ষা পাশ সব ক্ষেত্রে আবশ্যক না হলেও, ইন্টারভিউ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সেই সমস্ত কলেজে শিক্ষক নিয়োগ হয়।

এ বার আসা যাক, ক্রমানুযায়ী বিভিন্ন পদমর্যাদার ভিত্তিতে কলেজ শিক্ষকদের ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনায়:

১. গেস্ট লেকচারার- বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে যাঁরা নেট/ সেট পরীক্ষায় লেকচারশিপ পাশ করে বা পড়াশুনো শেষ করে সদ্য গ্রাজুয়েশন ছাত্রছাত্রীদের পড়ানো শুরু করেছেন, তাঁরা লেকচারার পদে নিযুক্ত হন। এই চাকরিগুলি পূর্ণ বা আংশিক সময়ের হয়। তাঁদের সাধারণত ছাত্রছাত্রীদের গবেষণার ব্যাপারে বিশেষ ভূমিকা থাকে না। ক্লাসে পড়ানো, সেমিনার, ওয়ার্কশপ আয়োজন-- এগুলোই মূলত তাঁদের দায়িত্ব।

২. অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর- যে কোনও বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রিতে ৫৫ শতাংশ নম্বর নিয়ে পাশ করে এবং নেট ও সেট পরীক্ষায় পাশ করলে তবেই অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর পদে নিয়োগ করা হয় বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে। এ ছাড়াও শিক্ষকতা বা গবেষণা ক্ষেত্রে তাঁদের অভিজ্ঞতা থাকারও প্রয়োজনীয়তা আছে। এর সঙ্গে কোনও কমিটি বা কোনও জার্নালে তাঁদের গবেষণাপত্ প্রকাশিতও হতে হবে। এঁদের শুধু ছাত্রছাত্রীদের পড়াতেই হয় না, এর সঙ্গে গবেষণা, প্রফেসরদের নানা কাজে সাহায্য করা এবং ইউনিভার্সিটি কমিটির সঙ্গেও কাজ করতে হয়।

৩.অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর- অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর হিসেবে বেশ কিছুদিন, আরও নির্দিষ্ট করে বললে ১৪ বছর, কাজ করার পর অ্যাসোসিয়েট প্রফেসরের পদমর্যাদাটি অর্জন করা যায়। এই পদে নিযুক্ত হতে হলে শিক্ষকদের ভাল রেজাল্ট থাকা আবশ্যিক। এ ক্ষেত্রে মাস্টার্সে ন্যূনতম ৫৫ শতাংশ নম্বর থাকা ছাড়াও পিএইচডি ডিগ্রি থাকতে হবে। এ ছাড়া কোনও কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে এত বছর পড়ানোর অভিজ্ঞতা থাকা, যে কোনও বিষয়ে অনেক প্রকাশিত গবেষণাপত্র থাকা, পলিসি পেপার থাকা বা প্রকাশিত কোনও বই থাকা এবং ন্যূনতম এপিআই নম্বর থাকা ভীষণ ভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এ ক্ষেত্রেও পড়ানো, গবেষণা, সেমিনার করা ছাড়াও টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্টদের সঙ্গে কাজ করা ও বহুবিধ গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক কাজ তাঁদের করতে হয়।

৪. প্রফেসর- এই পদটি কলেজে শিক্ষকতার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ পদ। এই পদটি সাধারণ ভাবে ঊর্ধ্বতন শিক্ষকদের জন্য বরাদ্দ থাকে, যাঁদের অনেক অনেক বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা রয়েছে। তাঁরা শুধুমাত্র বয়ঃজ্যেষ্ঠ হলে হবে না, তাঁদের শিক্ষকতার, গবেষণার ও বিশ্ববিদ্যালয়ে বহু বছরের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা থাকার বিশেষ প্রয়োজন আছে।

বেতন কাঠামো

গেস্ট লেকচারার—ভারতের সরকারি কলেজগুলিতে গেস্ট লেকচারারদের মাসিক বেতন মোটামুটি ভাবে ৫০০০ টাকা থেকে ৭০০০ টাকা। যদিও সম্প্রতি ইউজিসি এই বেতন কাঠামোর অনেকটাই রদবদল ঘটিয়ে মাসিক বেতনের পরিমাণ ২৬০০০ থেকে ৩২০০০ টাকা পর্যন্ত করার কথা ঘোষণা করেছে।

অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর—অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর পদে মোটামুটি ভাবে বার্ষিক বেতন ৪,১১,৫৪০ টাকা।

অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর— অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর পদে মোটামুটিভাবে বার্ষিক বেতন ৯,০০,০০০ টাকা।

প্রফেসর— প্রফেসর পদে মোটামুটিভাবে বার্ষিক বেতন ১১,২০০,০০ টাকা।

এ ছাড়াও, অনেক ক্ষেত্র ইমেরিটাস প্রফেসর বা অ্যাডজাঙ্কট প্রফেসর পদেও নিয়োগ হয়। তবে, এই ছোট ছোট পার্থক্যগুলি জানলেই সকলে বুঝতে পারবেন, কলেজে পড়ালেই সবাই প্রফেসর হন না!

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy