Advertisement
২৯ নভেম্বর ২০২৪
সম্পাদকীয় ২

গণতন্ত্রের আশা

হংকং শহরে গণতন্ত্রের দাবিতে ফের বাৎসরিক মিছিল হইয়া গেল। প্রতিবাদীদের বক্তব্য, লক্ষাধিক লোক তাহাতে শামিল হইয়াছিলেন। চিন-শাসিত হংকংয়ের কর্তৃপক্ষের অবশ্য দাবি, লোক আসিয়াছিল মাত্র বিশ হাজার।

শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০১৬ ০০:০০
Share: Save:

হংকং শহরে গণতন্ত্রের দাবিতে ফের বাৎসরিক মিছিল হইয়া গেল। প্রতিবাদীদের বক্তব্য, লক্ষাধিক লোক তাহাতে শামিল হইয়াছিলেন। চিন-শাসিত হংকংয়ের কর্তৃপক্ষের অবশ্য দাবি, লোক আসিয়াছিল মাত্র বিশ হাজার। তবে উপস্থিতির বহর নহে, হংকংয়ে গণতন্ত্রের সংকট বুঝাইয়া দিয়াছে একটি অনুপস্থিতি। পয়লা জুলাইয়ের মিছিলে আসেন নাই ল্যাম উইং কি। ল্যাম রাজনৈতিক নেতা নহেন, পুস্তক বিক্রেতা। চিনের নেতাদের সম্পর্কে বিদ্রূপাত্মক একটি বই বিক্রির জেরে তিনি হংকং হইতে ‘নিখোঁজ’ হইয়া যান। অভিযোগ, চিনের মূল ভূখণ্ডের এক শহরে একটি ছোট ঘরে বন্দি করিয়া তাঁহাকে বারংবার জেরা করা হয়। ওই বইটির বিক্রেতা আরও চার ব্যক্তিও একই ভাবে ‘নিরুদ্দেশ’। তাঁহাদের এক জন এখনও ফিরেন নাই, বাকিরা ফিরিয়া নীরব রহিয়াছেন। কেবল ল্যাম জুন মাসে ঘরে ফিরিবার পরে চিনের সমালোচনায় সরব হইয়াছিলেন। বই বিক্রেতাদের প্রতি চিনা আক্রোশের কথা জানাজানির পরে হংকং প্রতিবাদে সরব হয়। চিন বাক্‌স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করিতেছে, চিন-অনুগত প্রশাসন হংকংবাসীর সুরক্ষায় ব্যর্থ, এমন নানা অভিযোগ প্রকাশিত হয় আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমেও। ল্যাম বাক্‌স্বাধীনতার মুখপাত্র হইয়া উঠেন। এ বৎসর তিনি মিছিলে নেতৃত্ব দিবেন, এই প্রত্যাশা তাই প্রবল হইয়াছিল।

কিন্তু ল্যাম-এর আইনি পরামর্শদাতা জানাইয়াছেন, তাঁহাকে নজরবন্দি করা হইয়াছে, তিনি নিজের সুরক্ষার জন্য আত্মগোপন করিতে বাধ্য হইয়াছেন। তাই যেন লক্ষাধিক মানুষ ও তাঁহাদের পোস্টার-স্লোগান ছাপাইয়া ল্যাম-এর শূন্যস্থানটি অধিক বাঙ্ময় হইয়া উঠিয়াছে। ১৯৯৭ সালের পয়লা জুলাই হংকং হস্তান্তর হইয়াছিল ব্রিটেনের শাসন হইতে চিনের কর্তৃত্বে। ওই দিনটি সে দেশে ছুটি। কিন্তু ২০০৩ সালে একটি নাগরিক মিছিলের পর এটি হইয়া দাঁড়াইয়াছে প্রতিবাদের দিন। কত মানুষ ইহাতে শামিল হইল, তাহা গণরোষের একটি সূচক বলিয়া মনে করা হয়। এই বৎসর একটি প্রকাশকের দ্বারা প্রস্তুত সমালোচনা-মূলক বইটি বিক্রির জন্য পাঁচ বই-বিক্রেতার উপর নির্যাতনের ঘটনাটি মিছিলের কেন্দ্রে আসিয়া পড়িয়াছে।

মানবাধিকার রক্ষা কিংবা সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা বিষয়ে চিনের অবস্থান অবিদিত নহে। গুগল বা ফেসবুক আজও সে দেশে ঢুকিতে পায় নাই। মুদ্রণ ও অনলাইন, সর্বত্র কড়া নজরদারিই সে দেশে নিয়ম। হংকং আলোর একটি ফোঁটার মতো বারবার সেই অন্ধকারের ব্যাপকতা ও ভয়াবহতাকে স্পষ্ট করিতেছে। ২০১৪ সালে হংকংয়ের রাস্তায় ‘অকুপাই’ আন্দোলন সাড়া জাগাইয়াও সফল হইতে পারে নাই। কিন্তু তাহাতে গণতান্ত্রিক নাগরিক অধিকারের দাবি যে খর্ব হয় নাই, এ বৎসর ফের তাহার প্রমাণ মিলিল। রাষ্ট্রের নিষ্পেষণ ও নির্যাতনের মুখে বাক্‌স্বাধীনতার জন্য এই সংগ্রাম নূতন নহে। তাহা কেবল চিনের মতো অগণতান্ত্রিক দেশেই নিবদ্ধ, এমনও নহে। একটি পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০১৬ সালে এখনও অবধি বাইশ জন সাংবাদিক প্রাণ হারাইয়াছেন সরাসরি তাঁহাদের সাংবাদিকতার সূত্রে, তাহার মধ্যে সর্বাধিক মেক্সিকোতে। অতঃপর ইয়েমেন, আফগানিস্তান ও ব্রাজিল-সহ বেশ কয়েকটি দেশ। জেলবন্দি হইয়াছেন ১৬৬জন সাংবাদিক। তৎসহ মিথ্যা মামলা, পুলিশ-আদালতে হয়রানি, সবই রহিয়াছে। বাকস্বাধীনতার সম্মুখে প্রবল ক্ষমতাশালী রাষ্ট্রনেতারাও যে ভীত-সন্ত্রস্ত হইয়া ওঠে, এই ভরসাই গণতন্ত্রের সম্বল।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy