দেশবাসীর চক্ষু উন্মীলন করিবার কাজটি যত্নসহকারে করিয়া থাকেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। উত্তরপ্রদেশ প্রশাসন হইতে প্রাপ্ত নবলব্ধ জ্ঞানটি চমকপ্রদ— সরকারি কার্যে ত্রুটি দেখাইবার অর্থ সরকারের সম্মানহানি করিবার ষড়যন্ত্র, সরকারি কার্যে বাধা এবং দেশবাসীর সহিত প্রতারণা। যে অবোধ সাংবাদিক মির্জাপুরের প্রত্যন্ত গ্রামের একটি বিদ্যালয়ের মিড-ডে মিলের থালায় কেবল নুন-রুটি দেখাইয়াছিল, সেই পবনকুমার জয়সওয়ালের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ আনিয়াছেন স্থানীয় বিডিও। পুলিশও তৎক্ষণাৎ ‘এফআইআর’ গ্রহণ করিয়াছে। ওই সাংবাদিক অতীব সন্দেহজনক, প্রমাণ করিতে জেলাশাসক বলিয়াছেন, পবনকুমার সংবাদপত্রে কাজ করেন, অথচ স্থিরচিত্র না তুলিয়া ভিডিয়ো তুলিয়াছেন, এবং সমাজমাধ্যমে তাহা প্রচার করিয়াছেন। অপর পক্ষে, রাজকুমার পল নামে যে গ্রামবাসী ওই সাংবাদিককে খবর দিয়াছিলেন, তিনি চাহিলেই বাজার হইতে সব্জি আনিয়া দিতে পারিতেন বিদ্যালয়কে। তাহা না করিয়া সাংবাদিক ডাকিয়া আনিয়াছেন। ইহা কি ষড়যন্ত্র নহে? এমন অকাট্য যুক্তির সম্মুখে দাঁড়াইয়া অভিভূত হইতে হয়। ওই গ্রামবাসী এবং ওই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে যে রাষ্ট্রদ্রোহিতার ধারা প্রয়োগ হয় নাই, যোগী সরকারের সেই মহানুভবতায় চিত্ত দ্রব হইয়া আসে। বস্তুত ইহার পূর্বে সাংবাদিকদের প্রতি পুলিশ-প্রশাসনকে এতটা সদয় হইতে দেখা যায় নাই। জুন মাসে এক সাংবাদিক উত্তরপ্রদেশের রেলপুলিশের বিরুদ্ধে খবর করিবার ‘অপরাধে’ প্রহৃত হইয়াছিলেন, অকথ্য লাঞ্ছনা জুটিয়াছিল রেল পুলিশের লক-আপে।
জুন মাসেই যোগী আদিত্যনাথ মোরাদাবাদে এক জেলা হাসপাতাল পরিদর্শন করিতে আসিলে জেলাশাসকের নির্দেশে পুলিশ সমবেত সাংবাদিকদের ইমার্জেন্সি ওয়ার্ডে ঢুকাইয়া তালাবন্ধ করিয়া দেয়, যাহাতে তাঁহারা প্রশ্ন করিয়া মুখ্যমন্ত্রীকে ‘বিরক্ত’ করিতে না পারেন। ফেব্রুয়ারিতে যোগী মহাশয়ের প্রতি ব্যঙ্গোক্তি ‘টুইট’ করিয়া গ্রেফতার হইয়াছিলেন এক সাংবাদিক। তবে ইহা হইতে যদি কেহ এই শিক্ষাটি গ্রহণ করেন যে সাংবাদিক ষড়যন্ত্রপ্রবণ অতএব সর্বদা পরিত্যাজ্য, ভুল হইবে। গত বৎসর সেপ্টেম্বরে আলিগড়ে সাংবাদিকদের আগাম আমন্ত্রণ করিয়া, তাঁহাদের ভিডিয়ো ক্যামেরার সামনেই অবৈধ ‘এনকাউন্টার’ করিয়া দুই অভিযুক্তকে গুলিতে মারিয়াছিল পুলিশ। যোগী আদিত্যনাথ সরকারে আসিবার পর অন্তত ছেষট্টি জন অভিযুক্ত পুলিশের গুলিতে খুন হইয়াছে। কিন্তু অপরাধী ওই স্থলে আসিবে জানিয়াও তাহাদের গ্রেফতার না করিয়া হত্যা করা, ইহা কি পুলিশের ষড়যন্ত্র নহে? ওই সাংবাদিকরা কি সেই ষড়যন্ত্রের অংশীদার হইলেন না? এমন প্রশ্ন করিলে বুঝিতে হইবে, জ্ঞানশলাকার খোঁচা ঠিক জায়গায় লাগে নাই। সাংবাদিক পুলিশ-প্রশাসনের পক্ষে থাকিলে সে সৎ, দেশপ্রেমী। পুলিশ-প্রশাসনকে বিপাকে ফেলিলে সে মিথ্যাবাদী, ষড়যন্ত্রী।
মূর্খ সাংবাদিক চির কাল বিপরীত বুঝিয়াছেন। ‘সংবাদের স্বাধীনতা’ বলিতে বুঝিয়াছেন সমালোচনার স্বাধীনতা। আজ শুনিতেছেন, তাহা স্তাবকতার স্বাধীনতা। ক্যামেরা নুন-রুটি দেখিতে পারে, কানে আসিতে পারে ডাল-সব্জির জন্য বঞ্চিত শিশুর নালিশ, কিন্তু সংবাদে দেখাইতে হইবে পূর্ণ থালি, যোগীর নয়া ভারতে ইহাই সাংবাদিকতার শর্ত। ‘সত্যের জয়’ রাষ্ট্রের বাণী বটে, কিন্তু সত্যের স্বত্ব কাহার? যোগী তাহা পুলিশ-বিডিও দিয়া বুঝাইলেন। সাংবাদিকেরা বড়ই বাচাল, মূল্যবান শিক্ষাটি গ্রহণ না করিয়া সহকর্মীকে বাঁচাইতে শোরগোল বাধাইয়াছেন। পবনকুমারের বিরুদ্ধে অভিযোগের পুনর্বিবেচনা হইবে। কিন্তু সাংবাদিকের কী হইবে? সত্য তাঁহাদের রক্ষা করিবে না জানিয়াও যাঁহারা সত্যকে রক্ষা করিতে চান, তাঁহাদের বাঁচাইবে কে?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy